টাইটানিক বক্তা

টাইটানিক ডুবে যাওয়া বহু আলোচিত ঘটনা। বই, চলচ্চিত্র ও ওয়াজে অনেক বক্তাদের আলোচনায় প্রায় স্হান পায়। কিন্তু টাইটানিকের প্রকৃত সত্য না জেনেই এসব বক্তারা নিজেকে জনপ্রিয়, জ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিডিয়া ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ওয়াজ করে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে কোন ঘটনা ঘটলে বিচার বিশ্লেষণ না করে মিডিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে জোর করে ইসলামীকরন করার চেষ্টা করে।

সময়টা ১৯০৭ সালের মাঝামাঝি কোন একটা সময়। প্রতিযোগী জাহাজ কোম্পানিকে টেক্কা দিতে তিনটি বিশালাকৃতির জাহাজ তৈরি করার পরিকল্পনা করলেন জেপি মরগান এর হোয়াইট স্টার লাইন কম্পানি। তিনটি জাহাজের নাম প্রায় একইরকম – টাইটানিক, অলিম্পিক এবং ব্রিটানিক।

এই জাহাজগুলি আদতে খুব একটা দ্রুত ছিল না। কিন্তু আকারে এই জাহাজগুলি এতটাই বড় ছিল যে সকলের চোখে একেবারে ধাঁধা লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই যুগে এত বড় জাহাজ যে সম্ভব, সেটাও লোকে কল্পনা করতে পারত না। তারমধ্যে, তখনকার দিনের জাহাজগুলির থেকে বিলাসীতাতেও এই দিনে জাহাজ ছিল এক কাঠি উপরে।

জাহাজ তৈরি হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি। ১৯১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, জলযাত্রায় নামল সিরিজের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ অলিম্পিক। কিন্তু, সেখানেই হয়ে গেলে একটা ছোট্ট গন্ডগোল। পঞ্চম যাত্রায় ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ হকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে জাহাজটির প্রায় যায় যায় অবস্থা।

কোন ভাবে, বিশাল বড় বড় দুখানা ছিদ্র নিয়ে সাউদাম্পটন বন্দরে ফিরল এই অলিম্পিক জাহাজ। কিন্তু, এই দুটো ছিদ্র নিয়ে তো আর জাহাজ নামানো যায় না। তাই টাকার খরচ তোলা আবশ্যক হয়ে পড়ল জেপি মরগান এর কাছে। কিন্তু বীমা কোম্পানি টাকা দিতে নারাজ, কারণ তারা মনে করলেন, সমস্ত দোষটাই সেই কোম্পানির, তাই বীমার অর্থ তারা দেবে না। এইবারে চাপে পড়লেন জেপি মরগান। কারণ এরপূর্বে তার আরেক জাহাজ বিট্রানিকা দুর্ঘটনায়ও তিনি বীমার টাকা পাননি।

টাইটানিক তৈরীর কাজ প্রায় শেষ, প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। অনেকে বুকিং করে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে শুরু হলো একটি নতুন ফন্দি ফিকির করার কাজ।

পরিকল্পনা হয়ে গেল, পৃথিবীর অন্যতম বড় জাহাজ ষড়যন্ত্রের। ঠিক হলো, টাইটানিক নয় বরং সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক এর উদ্দেশ্যে রওনা দেবে আহত অলিম্পিক। ১৯১২ সালের ৭ মার্চ, হোয়াইট স্টারলাইন দাবি করলো, বেলফাস্ট বন্দর থেকে সারাই হয়ে যাওয়ার পরে সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছে অলিম্পিক। কিন্তু সন্দেহটা শুরু হলো এখান থেকেই।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আকার এবং আয়তনের প্রায় প্রায় সমান হওয়ার কারণে কেউ ধরতেই পারেনি, বেলফাস্ট বন্দর থেকে অলিম্পিক বেরোয়নি বরং বেরিয়েছিল নাকি টাইটানিক।

টাইটানিক এবং অলিম্পিকের এই হেরা ফেরি ইতিহাসের পাতায় কোথাও একটা চাপা পড়ে গেলেও সমসাময়িক ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং সাহিত্যিকদের চোখ এড়ায়নি এই জাহাজবদল। খবরের কাগজে বেশ কিছু জায়গায় লেখালেখি হলেও খুব একটা প্রভাব পড়েনি।

তারপরেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯১২ সালের এপ্রিল, সাউথ্যাম্পটন বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করল টাইটানিক, থুড়ি অলিম্পিক। কিন্তু সেই সময় থেকে জাহাজের বহু কর্মী নাকি জানতে পেরে গিয়েছিলেন, এই জাহাজটি টাইটানিক নয় বরং অলিম্পিক।

একে একে ইস্তফা দিতে শুরু করলেন জাহাজের বহু কর্মী। অনেকে বলেন, তারা নাকি এই জাহাজ ডুবির ব্যাপারটি জানতে পেরে গিয়েছিলেন আগে থেকেই।

টাইটানিক জাহাজের প্রথম সফরে সফরসঙ্গী হওয়ার কথা ছিল জেপি মরগান এর। কিন্তু কোন একটা অজ্ঞাত কারণে শেষ মুহূর্তে তিনি পিছিয়ে আসলেন। বেশকিছু ভিভিআইপি নিজেদের বুকিং ক্যানসেল করে ফেললেন। ভিতরের খবর আস্তে আস্তে রটে যাচ্ছিল। কিন্তু তাহলে কি করে হবে, সাংবাদিক থেকে শুরু করে সবাই তো একেবারে ছিঁড়ে খাবে!

ব্যাক আপ প্ল্যান তৈরি করলেন জেপি মরগান। কয়লা ধর্মঘটের কারণে তাদের পণ্যবাহী জাহাজ লন্ডন বন্দরে আটকে ছিল। তিন হাজার কম্বল এবং শীতবস্ত্র নিয়ে হঠাৎ করেই আটলান্টিক মহাসাগর এর উদ্দেশ্যে রওনা দিল ওই জাহাজ। খুব অদ্ভুতভাবে ১৪ এপ্রিল আটলান্টিক মহাসাগরের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হলো ওই কয়লাবাহী জাহাজের ইঞ্জিন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কেন? তাহলে কি জেপি মরগান আগে থেকেই জানতেন অলিম্পিক ডুবছে? আরো কিছু প্রশ্ন রয়েছে।

শোনা যায় টাইটানিকের সেকেন্ড অফিসার নাকি দেখতে পেয়েছিলেন সামনে হিমশৈল রয়েছে। যারা জাহাজের ক্যাপ্টেন রয়েছেন তারা এটা জানেন না, হিমশৈলের ১০ ভাগের ৯ ভাগ জলের নিচে থাকে, এটাতো মানা সম্ভব নয়! ক্যাপ্টেন করছিলেন টা কি? দুর্ঘটনার ৩৫ মিনিট পরে উদ্ধারের জন্য রেডিও বার্তা পাঠিয়ে ছিল টাইটানিক।

এছাড়াও, লাইফবোট নামাতেও দেরি করা হয়েছিল বলে জানা যায়। উদ্ধারকারী যে ক্যালিফর্নিয়ান জাহাজটি টাইটানিক এর উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল, সেটা খুব একটা বেশি মানুষকে বাঁচাতে পারেনি।

একটা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হল ব্রিটেন। জেপি মরগান টাইটানিক ডোবার মাত্র দু’বছরের মাথায় নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করলেন, এবং সমস্ত দোষ নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেললেন! সঠিক তদন্ত হলো না এই ঘটনার। শোনা যায় অলিম্পিক নামধারী টাইটানিক ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের বুকে দুর্ধর্ষ সার্ভিস দিয়েছিল। লেখা হলো প্রচুর আর্টিকেল, টাইটানিকের এই দুর্নীতির লেখা নিয়ে রীতিমতো ছয়লাপ হয়ে গেল ব্রিটেন।

তৈরি হল সিনেমা। কিন্তু শেষমেশ, হলো না কিছুই।

এই ঘটনা ধাপাচাপা পড়ে ছিল কিন্তু যখন মৃত্যুশর্য্যায় অলিম্পিকের মেরামতকারীরা সব সত্যি বলে দিল। ব্যক্তিগত অনেক তদন্ত হলো, অনেক সত্যি বের হয়ে আসলো।নিচে কয়টা লিংক দেওয়া হবে।

এই ঘটনার মূল কারন ছিল- বীমার টাকা (যা পেয়েছিল) ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ডলার মুদ্রা ছাপানো নীতি যা নিয়ে তখন আলোচনা চলছিল। টাইটানিকের মালিক জেপি মরগ্যান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মালিক একটা প্রস্তাব পাস করার চেষ্টা করছিল- যে সরকারের টাকা প্রয়োজন হলে রিজার্ভ ব্যাংক হতে টাকা ধার নিবে আর রিজার্ভ ব্যাংক মুদ্রা ছাপিয়ে দিবে। আর সরকার সুদে আসলে তা শোধ করবে। রিজার্ভ ব্যাংক ব্যক্তি মালিকানায় সরকারি নয় এজন্য তৎকালীন কয়জন বিখ্যাত চিন্তাবোধ তার বিরোধীতা করেন ও বাধা হয়ে দাড়ান।

জেপি মর্গানসহ সবাই টাইটানিকে সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষমুহুর্তে জ্বরের অজুহাতে তিনি যাননি আর বাকীরা জাহাজে ডুবে মরেছিল।

এরপর আর কোন বাধা আসলো না, বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুনরূপ চালু হলো যা অদ্ভুত ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যাংকের মালিকগণ সমৃদ্ধ হতে লাগল।

ধরুন সরকারের ১০ লাখ ডলার প্রয়োজন তারা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে চাইলো তারা তা ছাপিয়ে দিল। বিনিময়ে তারা সময় দিল ১০ বছর তাদেরকে সুদসহ ১১ লাখ ডলার দিতে হবে।

ফলে যদিও ১০ লাখ নতুন নোট ছাপানো হলো তবুও সরকারকে বিশ্ববাজার হতে ১ লাখ অতিরিক্ত ডলার তুলে এনে দিতে হবে। ফলে সরকারকে করসহ, বহু জিনিসের দাম বাড়াতে হবে। আর সবসময়ই মুদ্রার সংকট থাকবে।

দুঃখজনক হলো আজও আমাদের বক্তারা কোন ঘটনা ঘটলে নিজের মনমতো ব্যাখা করে। কাফের মিডিয়ার ঘটনা সত্যি হিসেবে প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। অথচ কুরআনের নির্দেশ – ফাসেক মুসলিম হতে সংবাদ পেলেও আগে তা যাচাই করার।(সুরা হুজরাত)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *