বর্তমানে অনেকের কাছে জুয়াটা যেন কোন পাপই নয় অথচ জুয়া আল্লাহর নিকট অতি অপছন্দীয় ও ঘৃণিত। আইপিএল, বিপিএলসহ পাড়ার খেলাটা পর্যন্ত জুয়ার ফেতনায় ভরা। এমনকি খাওয়ার বিনিময়েও জুয়া ধরা হয়। যে পদ্ধতি জাহেলি যুগে প্রসিদ্ধ ছিল।
জাহেলি যুগে দশ জনে সমান অংক দিয়ে একটা উট ক্রয় করতো, সেই উটের গোশত ভাগ-বাটোয়ারার জন্য জুয়ার তীর ব্যবহার করা হতো। ১০টি তীরের ৭টিতে কম-বেশি করে বিভিন্ন অংশ লেখা থাকতো এবং তিনটিতে কোনো অংশই লেখা থাকত না (এক প্রকার লটারী)। ফলে তিনজন কোনো অংশ পেত না এবং অন্য সাত জন তাদের প্রচলিত নিয়মে কম-বেশি অংশ পেত। এভাবে তারা দশ জনের টাকায় কেনা উট সাত জনে ভাগ করে নিত। বাকি তিনজন শূন্য হাতে ফিরে যেত। (মুহাররামাতুন ইস্তাহানা বিহান্নাস, পৃষ্ঠা: ৫২)।
বর্তমানে খাওয়া ও পুরস্কারের বিনিময়ে জুয়া হচ্ছে জাহেলী যুগের আধুনিক সংস্করণ। যেখানে সব দল বা সবার হতে টাকা নেওয়া হয় কিন্তু শুধু বিজয়ী দল উপহার বা খাওয়ার মালিক হয়। যদি কেউ এভাবে খেলার সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা খেলবে এবং খেলার পর খাওয়ার আয়োজন করবে যাতে সবাই অংশগ্রহণ করবে ও সমান অধিকার থাকবে। বিজয়ী ও পরাজিত দল উভয়ে একসাথে উপভোগ করবে তবে তা জুয়া হবে না।
প্রায় জুয়া খেলা জিতে মানুষ অহংকারী হয়ে উঠে যেন তার বুদ্ধিমত্তার কারণে সে জয়লাভ করেছে। অপরদিকে খেলায় জুয়া ধরে বিজয়ের ফলে কাফের তারকার প্রশংসায় দিন কাটায়। অপরদিকে আইপিএল/বিপিএলে কাফেরদের বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করে।
আল্লাহপাক বলেন- “হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ধারন শর ঘৃন্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়, এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ আদায়ে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না।” (সুরা মায়িদা, ৯০-৯১)।
এই আয়াত হতে বুঝা যায় শয়তান চায় জুয়া ছড়িয়ে পড়ুক যাতে মানুষ পরস্পর বিদ্বেষে জড়িয়ে যায় আর মুমিনদের আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত রাখা যায়। রসুলুল্লাহ’(সাঃ) বলেন- “আর কেউ যদি অন্যকে প্রস্তাব দেয়, এসো আমরা জুয়া খেলি সে যেন দান সদকা করে।” (বুখারি – ৪৮৬০,মুসলিম-১৬৪৭)। সব ধরনের জুয়াবাজি ইসলামে অবৈধ।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘বলা হতো, উটের জুয়াড়িরা কোথায়? তখন দশজন প্রতিযোগী একত্রিত হতো এবং জুয়ার উটটির ক্রয়মূল্য হিসেবে দশটি উটশাবক নিৰ্দ্ধারণ করতো। তারা জুয়ার পাত্রে তীর স্থাপন করে সেটিকে চক্কর দেয়াতো, তাতে একজন বাদ পড়ে নয়জন অবশিষ্ট থাকতো। এভাবে প্রতি চক্করে একজন করে বাদ পড়ে শেষে মাত্র একজন অবশিষ্ট থাকতো এবং সে বিজয়ী হিসেবে তার শাবকসহ অন্যদের নয়টি শাবকও লাভ করতো। এতে নয়জনের প্রত্যেকে একটি করে শাবক লোকসান দিতো। এটাও এক প্রকার জুয়া। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নম্বর: ১২৭১)। বর্তমানে অনেক জায়গায় লটারী নামক এই ধরনের জুয়াই চলছে। যেখানে সবার টাকায় কেবল একজন পুরস্কৃত বা মালিক হয়।
বর্তমানে বেশিরভাগ জুয়ায় ধোকাবাজি বা ভাগ্যকে বাজি ধরা হয়। অথচ ভাগ্যের (তাকদ্বীর নির্ধারণ) মালিক ও জ্ঞান আল্লাহর। মানুষকে সে অধিকার দেওয়া হয় নি এর উপর জুয়া ধরার। অনেকে জুয়া জিতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে, নাউজুবিল্লাহ। কেউ যদি আল্লাহর নিকট হারাম প্রার্থনা করে সে কেমন মুসলিম”!!? এইতো আল্লাহর হুকুম-আহকামের সাথে উপহাস করার শামিল।