জান্নাতের নেতা ও নেত্রী (আদর্শ পরিবার – আহলে বায়াত)

রসুল (সা:) দুনিয়া ও জান্নাতে সকল মুমিনদের নেতা। খাদিজা (রা:) সকল যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের অন্যতম আর তাদের প্রিয় কন্যা ফাতেমা (রা:) জান্নাতের নেত্রী। আহলে বায়াত হল আদর্শ পরিবার, তাদের ফজিলতের বহু হাদীস বর্নিত আছে।

উম্মাহর ভ্রান্তিকালে কিছুটা জানার চেষ্টা করছি

হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমার মা আমাকে প্রশ্ন করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তুমি কখন যাবে? আমি বললাম, আমি এতদিন হতে তাঁর নিকট উপস্থিত পরিত্যাগ করেছি। এতে তিনি আমার উপর নারাজ হন। আমি তাকে বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে আমাকে মাগরিবের নামায আদায় করতে ছেড়ে দিন। তাহলে আমি তাঁর কাছে আমার ও আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করব। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমি হাযির হয়ে তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। তারপর তিনি নফল নামায আদায় করতে থাকলেন, অবশেষে তিনি এশার নামায আদায় করলেন। তারপর তিনি বাড়ির দিকে যাত্রা করলেন এবং আমি তাঁর পিছু পিছু গেলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি কে, হুযাইফাহ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমার কি দরকার, আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে এবং তোমার মাকে ক্ষমা করুন। তিনি বললেনঃ একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ্ তাআলার কাছে অনুমতি চেয়েছেনঃ ফাতিমাহ্ জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা। মুসতাদরাক আল হাকিমের বর্ণনায়: “আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ বর্ণনা করেন যে আল্লাহর রসূল বলেছেন: “হাসান এবং হুসাইন জান্নাতি পুরুষদের সর্দার হবে এবং তাদের বাবা এর চেয়েও ওপরে থাকবে” [জামি তিরমিজী: ৩৭৮১, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। মুসতাদরাক আল হাকিম: ৪৭৭৯, সিলসিলা সহীহাহ ৭৯৬, ইমাম হাকিম, যাহাবী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)

“আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাকে ইরাকের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইহরামের অবস্থায় মশা-মাছি মারা যাবে কি? তিনি বললেন, ইরাকবাসী মশা-মাছি মারা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে অথচ তারা আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাতিকে হত্যা করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আমার নিকট দুনিয়ার দুটি ফুল।

তিরমিজীর বর্ণনায়: উসামাহ ইবনু যাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক রাতে আমার কোন দরকারে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন অবস্থার বাইরে এলেন যে, একটা কিছু তাঁর পিঠে জড়ানো ছিল যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার দরকার সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কি? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উন্মুক্ত করলে দেখা গেলো তাঁর দুই কোলে হাসান ও হুসাইন (রাঃ)। তিনি বললেন, এরা দু’জন আমার পুত্র এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ! আমি এদের দু’জনকে মুহাব্বাত করি। সুতরাং তুমি তাদেরকে মুহাব্বাত কর এবং যে ব্যক্তি এদেরকে মুহাব্বাত করবে, তুমি তাদেরকেও মুহাব্বাত কর। তিরমিজীর অপর এক বর্ণনায়: ইয়া’লা ইবনু মুররাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুসাইন আমার হতে এবং আমি হুসাইন হতে। যে লোক হুসাইনকে মহাব্বত করে, আল্লাহ্ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হুসাইন। [সহিহ বুখারী: ৩৭৫৩, জামি’ তিরমিজী: ৩৭৬৯ ৩৭৭৫, আলবানী হাদিসের সনদকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন]

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সে মহান সত্তার কসম! যিনি বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মু’মিন ব্যক্তিই আমাকে ভালোবাসবে, আর মুনাফিক ব্যক্তি আমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে।’ [সহিহ মুসলিম: ২৪০]

গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)
হাদিস নম্বরঃ ৬১৮০

শুধু আলী (রা) এর মর্যাদার বর্ননা দিলে বহু হাদীস দেওয়া যায়

হাসান (রা) এর মর্যাদা

আবূ বাকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি, ঐ সময় হাসান (রাঃ) তাঁর পার্শ্বে ছিলেন। তিনি একবার উপস্থিত লোকদের দিকে আবার হাসান (রাঃ)-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমার এ সন্তান হচ্ছে নেতা। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর মাধ্যমে বিবদমান দু’দল মুসলমানের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দিবেন। (২৭০৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭১)

হাসান (বসরী) (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর কসম, হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) পর্বত প্রমাণ সেনাদল নিয়ে মু’আবিয়াহ (রাঃ)-এর মুখোমুখী হলেন। আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) বললেন, আমি এমন সেনাদল দেখতে পাচ্ছি যারা প্রতিপক্ষকে হত্যা না করে ফিরে যাবে না। মু’আবিয়াহ (রাঃ) তখন বললেন, আল্লাহর কসম! আর মু’আবিয়াহ ও ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) উভয়ের মধ্যে মুআবিয়াহ (রাঃ) ছিলেন উত্তম ব্যক্তি- ‘হে ‘আমর! এরা ওদের এবং ওরা এদের হত্যা করলে, আমি কাকে দিয়ে লোকের সমস্যার সমাধান করব? তাদের নারীদের কে তত্ত্বাবধান করবে? তাদের দুর্বল ও শিশুদের কে রক্ষণাবেক্ষণ করবে? অতঃপর তিনি কুরায়শের বানূ আবদে শাম্‌স্ শাখার দু’ব্যক্তি ‘আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ ও আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে হাসান (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা উভয়ে এ ব্যক্তিটির নিকট যাও এবং তাঁর নিকট (সন্ধির) প্রস্তাব পেশ করো, তাঁর সঙ্গে আলোচনা কর ও তাঁর বক্তব্য জানতে চেষ্টা কর। তাঁরা তাঁর নিকট রয়ে গেলেন এবং তাঁর সঙ্গে কথা বললেন, আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তাঁর বক্তব্য জানলেন। হাসান ইবনু “আলী (রাঃ) তাদের বললেন, “আমরা আবদুল মুত্তালিবের সন্তান, এই সম্পদ (বায়তুল মালের) আমরা পেয়েছি আর এরা রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছে।” তারা উভয়ে বললেন, [মু’আবিয়াহ (রাঃ)] আপনার নিকট এরূপ বক্তব্য পেশ করেছেন। আর আপনার বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন ও সন্ধি কামনা করেছেন। তিনি বললেন, ‘এ দায়িত্ব কে নিবে?” তারা (তার জবাবে) বললেন, “আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি। অতঃপর তিনি তাঁর সঙ্গে সন্ধি করলেন। হাসান (বসরী) (রহঃ) বলেন, আমি আবূ বাকরাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি : ‘রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি মিম্বরের উপর দেখেছি, হাসান বিন আলী (রাঃ) তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার লোকদের দিকে আরেকবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আমার এ সন্তান একজন নেতা। সম্ভবত তার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলা মুসলমানদের দু’টি বড় দলের মধ্যে মীমাংসা করাবেন।’ [সহিহ বুখারী: ২৭০৪ ও ৭১০৪]

হাসান বিন আলী (আ) যে সকল শর্তের ভিত্তিতে মুআবিয়াহ্ বিন আবী সুফিয়ানের কাছে বায়আত করেছিলেন, সেগুলো হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ইতিহাসগ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে। যেমনঃ

  • মু’আবিয়াহ আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর রসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহ ও খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শানুযায়ী শাসন করবেন।
  • মুআবিয়াহ তার কোনও উত্তরসূরি নির্ধারণ না করে উম্মাহর শুরার হাতে ছেড়ে যাবেন।
  • “আলী ইবনু আবী তালিবের সৈন্যদের ভেতর আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে কোনও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।
  • খুমুসের বণ্টন খুলাফায়ে রাশেদিনের আমলের মত বনু মুত্তালিবের নিকট প্রেরণ অব্যাহত থাকবে, যা আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরিবারের ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।
  • হযরত আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপবাদ (গালি) ও অপ- প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।

[ইবনু “আবদিল বার-এর আল-ইন্ডিয়াব, ইবনু হাজার আসকালানীর আল-ইসাবাহ ইবনু কাসিরের আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ইবনু হাজারের ফাতহুল বারী, বুখারীর হাদিস ৭১০৯ এর ব্যাখ্যা]

আলী (রা) ও ফাতেমা (রা) যেমন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন অপরদিকে মুসলিম ও ইসলামের কল্যানে আত্মত্যাগ দিয়েছেন হাসান ও হুসাইন (রা:)। নিজের বৈধ খেলাফতকে ছেড়ে দিয়েছিলেন হাসান (রা:)। অথচ আজ সহীহ আকীদার দাবিদার কিছু আলেম বক্তব্য দেন – এদেশে আহলে বায়াতের (আলী রা, হাসান রা, হোসেন রা) নামে মানু্ষের নামকরন করা হ’য়েছে শিয়াদের কারনে। অথচ উম্মাহর বেশিরভাগ মুসলিম কারবালা, শিয়া-সুন্নী বুঝে না। এইটুকু বুঝে, মানে, বিশ্বাস করে আহলে বায়াতকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সন্তুষ্টি তাঁর পরিবারবর্গের (প্রতি সদাচরণের) মাধ্যমে অর্জন কর। জামি’ তিরমিযি ও মুসতাদরাক আল হাকিমের বর্ণনায়: ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে মহব্বত কর। কেননা তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিয়ামাতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহ্ তা’আলার মহব্বতে তোমরা আমাকেও মহব্বত এবং আমার মহব্বতে আমার আহলে বাইতকেও মহব্বত কর। [সহীহ বুখারী: ৩৭৫১, জামে’ আত-তিরমিজি: ৩৭৮৯, , মুসতাদরাক আল হাকিম: ৪৭১৬, ইমাম হাকিম ও যাহাবী বলেন: এর সনদ সহীহ]

আচ্ছা শিয়া, কাদেয়ানীরা মুহাম্মদ ও খ্রিস্টানরা অনেকে ইউসুফ নাম রাখে এজন্য কোন মুসলিম এসব নাম রাখলে কি তাদের অনুসরণ করা হবে নাউজুবিল্লাহ!? বরং তারা এক্ষেত্রে ইসলামী নামকরন করে যদিও ঈমান নেই।

আসুন হাসান (রা) ও হুসাইন (রা) এর নামকরন জেনে নিই

আলী (রাঃ) বলেন, যখন হাসানের জন্ম হলো, তখন তার নাম রাখলাম হামযা। যখন হুসাইন ভূমিষ্ঠ হলো তখন তার নাম রাখলাম জাফর। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন এবং বললেনঃ এই দু’জনের নাম বদলে দেয়ার জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই এ বিষয়ে ভালো জানেন। অতঃপর তিনি তাদের নাম রাখলেন হাসান ও হুসাইন। (মুসনাদে আহমেদ)

যাদের আকীকা, নামকরন, আদর ও স্নেহে বেড়ে উঠা স্বয়ং রসুলের (সা:) সংস্পর্শে তাদের নামের চেয়ে উত্তম নাম ও উত্তম চরিত্র কি বা হতে পারে!? আর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের (রহ:) সন্তানের নাম ছিল- ফাতেমা, হুসাইন, আবদুল্লাহ, হাসান, আলী, ইবরাহীম, আবদুল আজিজ। তথাকথিত আলেমরা তাকে অনুসরণ করার বেশি দাবি করেন।

তাহলে কি তিনি শিয়া ছিলেন? নাউজুবিল্লাহ!

তথাকথিত হক্বপন্থীরা সুস্পষ্ট জানুক- আমাদের চোখের শেষ ফোটা অশ্রু দিয়ে হলেও রসুল (সা:) ও আহলে বায়াতের সাথে জান্নাত কামনা করবো। আমাদের শরীরে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত তাদের আদর্শ অনুযায়ী চলবো, ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *