মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন,
"নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।" (সুরা হুজরাত, আয়াত-১০)
ইসলামে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। সংঘবদ্ধতা সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন,
"তোমরা সেইসব লোকদের মতো হবে না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।" (সুরা আলে ইমরান-১০৫)
অথচ বর্তমানে মুসলিম দাবিদাররা বিভিন্ন খেলা, খেলোয়াড়দের নামে একদিকে কাফেরদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করছে অপরদিকে নিজের মুসলিম ভাইয়ের সাথে দ্বন্দ্ব, উপহাসে লিপ্ত।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
"হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কোনো দল যেন অপর কোনো দলকে উপহাস না করে। কেননা যাদের উপহাস করা হল তারা উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অপর নারীদের উপহাস না করে। কেননা যাদের উপহাস করা হল তারা উপহাসকারীর অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরকে দোষারোপ করো না এবং মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহের কাজ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই জালেম।" (সুরা হুজুরাত, আয়াত:১১)
অপরদিকে কাফেরদের প্রতি ভালোবাসা প্রর্দশন করে তাদের জার্সি, পতাকা ব্যবহার করে কবীরা গোনাহে লিপ্ত তা অধিকাংশ মানুষই জানে না।
আসুন, পতাকাগুলো কিসের প্রতীক বহন করে জেনে নিই।
১. ব্রাজিল
ব্রাজিলের পতাকা সবুজ রং ব্রাজিলের প্রথম সম্রাট পেদ্রো এক-এর পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করে। সোনার হীরাটি পেড্রো এক-এর স্ত্রী মারিয়া লিওপোল্ডিনার পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করে। নীল বৃত্তের সাদা তারাগুলি দেশের সবগুলো রাজ্যের প্রতীক।
ব্রাজিলের পতাকায় “অর্ডেম ই প্রগ্রেসো” (অর্ডার এবং প্রগ্রেস) নীতিবাক্যটি ফরাসী দার্শনিক অগাস্ট কমটে এর নীতিবাক্য দ্বারা অনুপ্রাণিত, “ভালবাসা দিয়ে শুরু, এবং ভিত্তি হিসাবে আদেশ; শেষ হিসাবে অগ্রগতি।” এটি সন্নিবেশিত করা হয়েছিল এই কারণে যে সামরিক অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন লোক যারা রাজতন্ত্রকে অপসারণ করেছিল এবং ব্রাজিলকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছিল তারা কমটে-এর ধারণার অনুসারী ছিল।
এই পতাকায় তাদের আদর্শ পুরুষ আগাস্ট কমটে এর আদর্শ বহন করছে ও তার দ্বীন (জীবনবিধান, সংবিধান) প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ও স্বীকৃতি বুঝায়।
২. আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার পতাকা পর্যবেক্ষণ করলে আমাদের দৃষ্টি অবিলম্বে এর কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয়, যেখানে আমরা এটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যটি খুঁজে পাই: একটি নিরপেক্ষ অভিব্যক্তি বিশিষ্ট মানব মুখ যার কেন্দ্র থেকে নির্গত সোজা এবং তরঙ্গায়িত রশ্মি, যা একটি সূর্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
সূর্যটি আর্জেন্টিনার মে বিপ্লবের পরে মে অফ মে সান নামে পরিচিত (যা শেষ পর্যন্ত স্পেন থেকে জাতীর স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যায়) একটি জাতীয় প্রতীক। ১৮১৩ সালের আর্জেন্টিনার মুদ্রায় একই সূর্যের একটি চিত্র রয়েছে, যেমন উরুগুয়ের পতাকা (শুধুমাত্র রশ্মির সংখ্যায় ভিন্ন), এবং পেরুর পতাকার প্রাথমিক সংস্করণ। ইনকান আভিজাত্যের পেরুর বংশধর জুয়ান দে ডিওস টুপাক আমরু, দ্য সান অফ মে ডিজাইন করেছিলেন, যা ইনকান সূর্য দেবতা ইন্তিকে শ্রদ্ধা জানায়।
ইনকারা সূর্য এবং তার জীবনদানকারী শক্তির পূজা করত। তারা বিশ্বাস করত যে তাদের শাসক সূর্যের সরাসরি বংশধর এবং তারা তাদের সাম্রাজ্য জুড়ে সূর্য মন্দির নির্মাণ করেছিল। আর্জেন্টিনার ১৮১৩ সালের মূল জাতীয় সঙ্গীতটিও নাটকীয় ও গীতিমূলকভাবে ইনকাদের নির্দেশ করে যে তাদের মৃতরা “কাঁপিয়েছে, এবং প্রাচীন জাঁকজমকভাবে তাদের হাড়ের মধ্যে উদ্দীপনা পুনরুজ্জীবিত হয় জন্মভূমির ছেলেদের জন্য।”
এটা সরাসরি ইনকা সূর্য দেবতার প্রতি ভালোবাসা ও তার দ্বীনের প্রতি সমর্থন বুঝায়।
৩. পর্তুগাল
পর্তুগালের পতাকার লাল রঙ দেশটির গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার জন্য লড়াই করা লোকদের হারিয়ে যাওয়া সমস্ত রক্তের প্রতীক এবং সবুজ রং হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য আশার প্রতীক।
পর্তুগালের পতাকার মাঝখানে একটি হলুদ আর্মিলারি গোলক (হলুদ ফিতার প্যাচানো নকশা) এবং একটি ঢাল রয়েছে এবং ঢালটি (লাল রঙের) রয়েছে আর্মিলারি গোলকের ওপর। আর্মিলারি স্ফিয়ার (এছাড়াও একটি গোলাকার অ্যাস্ট্রোল্যাব, আর্মিলা বা আর্মিল নামে পরিচিত) একটি জ্যোতির্বিদ্যার যন্ত্র যা আবিষ্কারের যুগ বা অনুসন্ধানের যুগে মহাসাগরগুলিতে নেভিগেট করতে ব্যবহৃত হত।
আর এই যন্ত্র পরিচিত লাভ করে প্রিন্স হেনরি দ্বারা। যিনি ছিলেন নাইট টেম্পেলদের গ্র্যান্ড মাস্টার ছিল। মুসলিমদের বিরুদ্ধে টেম্পেলরা বহু যুদ্ধ করেছে।
যারা ছিল মূলত শয়তান পূজারী। তাদের অনেককে সালাউদ্দিন আইয়ুবী শেষ করেন।। অনেকের মতে- ওদের বংশধররা পরবর্তীতে ফ্রী মেসেনারি ও ইলুমিনিতি চালু করে।
পতাকার মধ্যে অংকিত ঢালটির মধ্যে রয়েছে ৭টি হলুদ দূর্গ এবং এর মাঝখানে আছে নীল রঙের আরো পাঁচটি ঢাল যাদের প্রত্যেকের মধ্যে পাঁচটি সাদা ডট রয়েছে। বড় লাল ঢালটি পর্তুগিজদের পূর্বের বিজয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্বাস করা হয়, হলুদ রঙের এ ৭টি দুর্গ পর্তুগিজরা মুরদের কাছ থেকে ফিরিয়ে এনেছিল।
ছোট ৫টি নীল ঢাল পর্তুগালের প্রথম রাজা আফনসো এক দ্বারা নিহত ৫টি মুরিশ রাজাদের বুঝিয়ে থাকে। এই রাজারা মুরিশ আমলে সেভিল, বাদাজোজ, এলভাস, ইভোরা এবং বেজা টারিফাস এলাকাগুলো শাসন করেছিলেন। প্রতিটি নীল ঢালের মধ্যে ৫টি সাদা বিন্দু যীশুখ্রিস্টের ৫টি ক্ষতের প্রতিনিধিত্ব করে।
৪. জার্মানি
জার্মানির পতাকাটি সমান আকারে উপর-নিচে তিনটি ভাগে গঠিত। উপরের ভাগটি কালো, কেন্দ্রীয় ভাগটি লাল এবং সর্বনিম্ন ভাগটি হলুদ। এই রংগুলো জার্মানির জাতীয় রঙের প্রতিনিধিত্ব করে। জার্মানির জাতীয় রঙের উৎপত্তি সম্পর্কে অসংখ্য তত্ত্ব রয়েছে। একটি তত্ত্ব প্রস্তাব করে যে রঙগুলি জেনা স্টুডেন্টস লীগ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিল। আরেকটি দাবি ধারণ করে যে রংগুলি লুটজো ফ্রি কর্পসের সময়কালের, যার ইউনিফর্মগুলিতে লাল মুখ এবং সোনার বোতামগুলির সাথে কালো বৈশিষ্ট্যযুক্ত, যা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত ছাত্র এবং নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় তৈরি হয়েছিল।
আরেকটি তত্ত্ব মনে করে যে জার্মান পতাকার রং রোমান সাম্রাজ্যের কোট অফ আর্মসের রঙের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যেটিতে ছিল সোনালী ব্যাকগ্রাউন্ডে নখরযুক্ত লাল ঠোঁটের একটি কালো ঈগল। এবং এটাই সবচেয়ে যুক্তিসংগত।
রোমান সাম্রাজ্য ছিল ক্যাথলিক, ওরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধ করে।
এভাবে যদি পতাকার ইতিহাস জানা যায়- তাহলে দেখবেন পতাকাগুলো তাদের বিশ্বাস (আকীদা) ও সংবিধান, আইন (শরীয়া), আদর্শ ও আদর্শ ব্যক্তির প্রতি স্বীকৃতি, ভালোবাসা ও ওদের উদ্দেশ্যে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর তাদের সেই বিশ্বাস, স্বপ্ন, জীবনবিধান (দ্বীন) কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা যেসব রক্তাক্ত ও কষ্টসিক্ত বিসর্জন দিয়েছে সেইসব ইতিহাসের প্রতীক বহন করে।
অপরদিকে ইসলামের পতাকা (কালেমা খচিত) এক আল্লাহর প্রতি অনুগত্য ও তার দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা, প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ও এই দ্বীনের আদর্শ পুরুষ রসুলের (সাঃ) আদর্শের প্রতি স্বীকৃতি, ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মুমিনরা এই পতাকা দেখলে- বদর, উহুদ, খন্দক, মুতা, মক্কা বিজয়ের ইতিহাস স্মরণ হয় যখন তাদের আদর্শ ছিল রসুল (সাঃ), সংবিধান ও পতাকা ছিল একটাই। এখন সিন্ধান্ত আপনাদের – জাহেলিয়াতের পতাকা ভালোবাসবেন না ইসলামের!!
আল্লাহ বলেন-
‘‘হে ঈমানদারগণ! ইয়াহূদী ও খৃস্টানদেরকে নিজেদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর যদি তোমাদের মধ্য থেকে কেউ তাদেরকে বন্ধু হিসাবে পরিগণিত করে তাহলে সেও তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। অবশ্যই আল্লাহ যালেমদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না।’’ (সূরা মায়েদা: ৫১)
আরও বর্নিত আছে –
‘‘যারা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাদেরকে তুমি আল্লাহ ও তার রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবে না। হোক না এই বিরুদ্ধাচরণকারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জাতি-গোত্র’’। (সূরা মুজাদালাহ-২২)
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা কুফরকে ঈমানের উপর প্রাধান্য দেয়। তোমাদের মধ্য হতে যারা তাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, তারাই হবে যালেম।’’ (সূরা তাওবা: ২৩)