রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন- “অচিরেই তোমাদের উপর আকাশ (শূন্য) থেকে অকল্যাণ ও অনিষ্ট ঢেলে দেয়া হবে যা ফায়াফি পর্যন্ত পৌঁছাবে। বর্ণনাকারী বলেন: জিজ্ঞাসা করা হলো: হে আবূ আব্দুল্লাহ! ফায়াফি বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন? তিনি বলেন: মরুভূমি।” (ইবনু আবী শাইবাহ: ১৫/১১০ হাদীস ৩৮৫৫৪)
আরবীতে সামা’ বলতে মানুষের মাথার উপর যা কিছু রয়েছে তা সবটুকুকেই বুঝানো হয়। লিসানুল আরব অভিধানে বলা হয়েছে, যা আপনার উপর ও আপনাকে ছায়া দেয় তাই সামা’। অনেক আলেমের মতে- বর্তমান যুগের ডিশ, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যে অকল্যাণ ও ফেতনা ছড়ানো হচ্ছে তা এই হাদীসের সাথে মিলে যায়।
অত্যাচারী লোকসমূহ
“শেষ যুগে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে। যাদের হাতে থাকবে গাভীর লেজের ন্যায় ছোট ছোট লাঠি। তারা সকাল বেলা অতিবাহিত করবে আল্লাহ তা’আলার অসন্তুষ্টি নিয়ে এবং বিকেল বেলাও অতিবাহিত করবে তাঁরই অসন্তুষ্টি নিয়ে”। (আহমাদ: ৫/২৫০ হাদীস ২১৫৭৩)
আবূ হুরাইরাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা) ইরশাদ করেন:
“দু’ জাতীয় মানুষ জাহান্নামী। যাদেরকে আমি এখনো দেখিনি। তাদের মধ্যকার এক শ্রেণী হলো এমন লোক যাদের হাতে থাকবে গাভীর লেজের ন্যায় ছোট ছোট লাঠি। যা দিয়ে তারা মানুষকে অযথা প্রহার করবে”। (মুসলিম, হাদীসঃ ২১২৮)
আবূ হুরাইরাহ (রা) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা) ইরশাদ করেন:
“সময় আরো পেরিয়ে গেলে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে দেখতে পাবে যারা সকাল বেলা অতিবাহিত করবে আল্লাহ তা’আলার অসন্তুষ্টি নিয়ে এবং বিকেল বেলা অতিবাহিত করবে তাঁরই লা’নত নিয়ে। তাদের হাতে থাকবে গাভীর লেজের ন্যায় ছোট ছোট লাঠি”। (মুসলিম, হাদীস ২৮৫৭/৫১০৫)
বেশিরভাগ আলেমের মতে তা বর্তমান সময়ের প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনীর সাথে মিলে যায় যারা সামান্য কারণে বা আতংক সৃষ্টি, ক্রোধবশত মানুষের উপর লাঠিপেটাসহ বিভিন্ন অত্যাচার করে। ওদের দেখবেন কুরআন বিরোধী আইন, আইন প্রণেতাদের রক্ষা ও নির্দেশ অনুযায়ী কুরআনের প্রেমিকদের উপর অত্যাচার করতে দ্বিধাবোধ করে না।
পূর্ববর্তীদের অনুসরণ
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা) ইরশাদ করেন:
“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসারী হবে। হাত হাত বিঘত বিঘত তথা হুবহু এবং অবিকলভাবে। এমনকি তারা যদি কোন গুইসাপের গর্তে ঢুকে পড়ে তা হলে তোমরাও তাতে ঢুকে পড়বে। আমরা (সাহাবীগণ) বললাম: হে আল্লাহ’র রাসূল! তারা কি ইহুদী ও খ্রিষ্টান? তিনি বললেন: তারা নয় তো আর কারা?”
(বুখারী, হাদীস ৩৪৫৬, ৭৩২০ মুসলিম, হাদীস ২৬৬৯ ত্বায়ালিসী, হাদীস ২১৭৮)
কাজী ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: রাসূল (সা) বিঘত, হাত, গুইসাপের গর্তে প্রবেশ ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের পরিপূর্ণ অনুসরণের চিত্রই মূলতঃ তুলে ধরলেন।
(ফাতহুল-বারী: ২০/৩৮৭ হাদীস ৭৩১৯)
সামান্য দুনিয়ার লোভে – মুসলিমরা আজ তাদের অনুসরণ করছে ও আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভয় না করে ওদের সন্তুষ্টির প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে।
অথচ আল্লাহ বলেন-
“আর ইয়াহূদী ও নাসারারা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করেন।”
সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২০
তার মানে ওদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে নিজ দ্বীনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আল্লাহর অসন্তুষ্টি হয় এমন কাজ করতে হবে।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন – গুইসাপের গর্ত সংকীর্ণ, ভিতরে নোংরা ও একমুখী। তেমনি ইহুদি, খ্রিস্টান ও ভিন্ন জাতির অনুসরণ করে এই উম্মত এমন পথে চলবে যা অত্যন্ত সংকীর্ন (জাহান্নামের পথ), নোংরা ও অশ্লীলতায় ভরা। গুইসাপের গর্ত একমুখী হওয়ায় অর্থ হল এই পথের পরিণতি গন্তব্য একদিকেই যা জাহান্নামের। সম্পূর্ণ পথ বদলিয়ে ইসলামে ফিরে না আসলে জাহান্নামই হবে পরবর্তী ঠিকানা।
আল্লাহ বলেন –
“আর কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায়, সে দিকেই তাকে আমরা ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাস!”
সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫
তবে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নিকৃষ্ট অনুসরণ বলতে জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদের বিশেষ গবেষণা, আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশাসন পরিচালনার কৌশল ও সুশৃঙ্খলা ইত্যাদিকে বুঝানো হয় না। যা আমাদের দ্বীনের পরিপন্থী নয় বরং দ্বীনের পথকে সুগম করে।