ড্রুজ এক অদ্ভুত ধর্মবিশ্বাসী জাতির নাম। বিশ্বের বহু প্রান্তে ওদের বাসস্হান।
- Syria:600,000
- Lebanon:250,000
- Israel:143,000
- Venezuela :60,000
- Jordan:20,000
- U.S.A:50,000
- Canada:25,000
- Australia:20,000
- Germany:10,000
তবে এখানে মূল আলোচনার বিষয় হল দক্ষিণ সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েলর ড্রুসদের নিয়ে। বহুবছর সিরিয়া, লেবাননের উচ্চপদে ড্রুসরা আছে। ওদের অনেকে মারাত্মক যোদ্ধা। সিরিয়ার ড্রুসরা অধিকাংশ বাশার আল আসাদকে সমর্থন করে আর ইসরায়েলী ড্রুসরা অনেকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর অংশ হয়ে লড়াইরত। কেন ড্রুস আলোচনার বিষয়? বিভিন্ন কারণে ড্রুসদের সাথে অন্যদের সংঘাত চলে।ভবিষ্যতে লেবানন, সিরিয়া, ইরানের সাথে ইসরায়েলের সংঘাত হলে ড্রুসদের ভূমিকা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লেবানন, সিরিয়া হতে ইসরায়েল বা ইসরায়েল লেবানন, সিরিয়ায় প্রবেশ করতে গেলে ড্রুজ পর্বত দিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে কেউ হয়তো নিজ পরাজয় ঠেকাতে স্বাধীন ড্রুজ রাষ্ট্রের ঘোষণা দিবে ও এজন্য ড্রুজদের সহায়তা করবে। যার জন্য ড্রুজরাই ওদের পক্ষে লড়বে আর সংখ্যালঘু হওয়ায় বিশ্ব মিডিয়ায় ওদের উপর আঘাত বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।ড্রুজদের উৎপত্তি হয়েছিল ইসমাইলি শিয়াদের থেকে যাদের নাম হামজা ইবনে আলি বিন আহমদ ও আল হাকিম বি-আমর আল্লাহ। ড্রুসদের আকিদা মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টানসহ আরো অনেক ধর্মের মিশ্রণ। যদিও তাদের উৎপত্তি ইসলাম ধর্মকে বিকৃত করে। কেউ এই ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে পারে না জন্মসূত্রে ছাড়া। তাদের মহিলারা দ্বিতীয়বার বিবাহ করতে পারে না। ড্রুজদের কিতাবের নাম হল হিকমা যা শুধু তাদের আলেমরাই দেখতে পারে। তাদের ধর্ম ও এর বিষয়বস্তু তারা অন্য কারো কাছে প্রকাশ করে না। তারা তাদের সমাজকে দুইভাগে ভাগ করেছে, ধার্মিক ও অধার্মিক। ধার্মিকরাই শুধু ধর্মের গোপন বিষয়গুলো দেখতে পারবে। বাকিরা সাধারণ নিয়ম যা অন্যান্য ধর্মের সাথে মিলে তাই মানবে। ড্রুজরা ৪০ বছর পর্যন্ত যা খুশি তাই করতে পারে, পরে চাইলে ধর্মীয় জীবনে অনুপ্রবেশ করতে পারে। ড্রুজরা কেউ অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারবে না। তারা জান্নাত জাহান্নামে বিশ্বাস করে না বরং তারা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করে পুনর্জন্মে তাদের আত্মা একজনের শরীর হতে অন্য জনের শরীরে প্রবেশ করে এবং সর্বশেষ পুনর্জন্মের পর তাদের আত্মা কসমিক মাইন্ডে একত্রিত হয়। তাদের অনেকে বিশ্বাস করে ঈসা (আ) এর পর আল হাকিম পুনর্জন্ম হিসেবে আল্লাহর রূপ নিয়ে এসেছে, সেই শেষ রূপ। তারা সাতজন নবীকে বিশ্বাস করেঃ আদম (আ), নূহ (আ), ইব্রাহিম (আ), মুসা (আ), ঈসা (আ), মুহাম্মদ (স), ভুয়া নবী মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আদ দারাজী। তারা কোরআন, বাইবেল, তোরাহ সবই পড়ে কিন্তু গুরুত্ব দেয় তাদের কিতাব হিকমাকে। তাদের মতে পূর্বের সকল ধর্মই সত্যি কিন্তু তা এখন আর প্রযোজ্য নয়। তারা আরো বিভিন্ন দার্শনিক যেমন অ্যারিস্টটল, প্ল্যাটো ইত্যাদি ব্যক্তিদের মতবাদকে নিজেদের ধর্মের অংশ হিসেবে মেনে নেয়। অনেক ড্রুজ নিজেদেরকে মুসলিম মনে করে আবার অনেকে নিজেদের আলাদা ধর্ম মনে করে। তারা তাকিয়ায় বিশ্বাস করে, যার অর্থ হল, নিজের বিশ্বাস লুকিয়ে অন্য ধর্মের বলে তাদের সাথে মিশে যাওয়া, প্রার্থনা করা বা কোন কার্যসিদ্ধি করা। যদিও তারা অনেকে মুসলিম দাবি করে, তারা বহুবিবাহ (একসাথে একের অধিক স্ত্রী) অস্বীকার করে। তাদের অন্য ধর্মের লোকদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ যদিও বর্তমানে তা কমে আসছে । তাদের মহিলাদের পর্দার বিধান রয়েছে। তাদের ধর্মের চিহ্ন পাঁচ রঙের একটি তারকাঃ সবুজ (বুদ্ধিমত্তা), লাল (আত্মা), হলুদ (শব্দ), নীল (নিদর্শন), সাদা (সর্বেশ্বরবাদ)। তারা বিশ্বাস করে প্রত্যেক সময়কালে পাঁচজন লোক আসে যাদের প্রত্যেকের ঐগুলোর একটি করে গুণ বিদ্যমান থাকে। একই সাথে আরো পাঁচটা আসে যারা মানুষকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। ড্রুজ ধর্মের স্তম্ভ ৭ টিঃ
১. (সত্যবাদীতা) ড্রুজদের সাথে সত্যবাদীতা। নিজেকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে মিথ্যা বলতে পারে।
২. (সতর্কতা) পরষ্পর নিজেদেরকে সাহায্য, সহযোগীতা ও নিরাপত্তা দেওয়া।
৩.অবিশ্বাসীদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখা যদিও এখন তা মানা হয় না বরং ওরা বহুদেশে বাস করে। ইসরায়েলী ড্রুসরা দেশ নিয়ে গর্ব করে।
৪.সকল ধর্মের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করা।
৫. আল হাকিমকে (ফাতিমি খিলাফতের ১৬ তম ইমাম) একক দৃশ্যমান স্রস্টা হিসেবে বিশ্বাস করা।
৬. সৃষ্টিকর্তা কি করে তার ব্যাপারে মাথা না ঘামানো।
৭. আল হাকিম ফিরে আসা পর্যন্ত নিজের সাথে যা হয় তার উপর সন্তুষ্ট থাকা (আল হাকিম একদিন রাতে হাটতে বের হয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়)। তাদের মতে চীনেও অনেক গোপন ড্রুজ আছে। তারা আরো বিশ্বাস করে যখন তাদের উপর নির্যাতন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছাবে তখন আল হাকিম ফিরে আসবে হামজা ও আল মুকতানাকে নিয়ে যারা উধাও হয়ে গিয়েছিল। তারা এসে নেতৃত্ব দিবে এবং বিশ্ব বিজয় করবে। চীন থেকে গোপন ড্রুজ তাদের সাথে যোগদান করবে তখন তারা জেরুজালেম ও মক্কা বিজয় করবে। পুরো বিশ্ব তাদের ধর্ম গ্রহণ করবে।
[…] এক অদ্ভুদ ধর্মবিশ্বাস (ড্রুজ) পর্ব ১ […]