সারাবিশ্বে মুসলিমদের বিপদ-আপদ আর একের পর এক দুযোর্গ চলছে। যা দেখে কারো হৃদয় কাপে আর কারো আবার অন্তরের অনুভূতিটুকু হারিয়ে গেছে। কিন্তু আফসোস শেষে বেশিরভাগই শিক্ষা না নিয়ে আবার পাপে লিপ্ত হয়। এসব প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয় হতে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আল্লাহ বলেন:
যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।
যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত এবং আল্লাহ দয়ালু, মেহেরবান না হতেন, তবে কত কিছুই হয়ে যেত। (সুরা নুর-১৯,২০)
হাদীসে রয়েছে,
যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না)। জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্ত) হবে। যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রূপে আবির্ভূত হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো— রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৪৪৭)।
এছাড়া হাদীসে আছে –
কুতায়বা (রহঃ) ….. ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মাতের মধ্যে ভূমি ধ্বস ও চেহারা বিকৃতি ঘটবে। আর এটা হবে তাকদীর অস্বীকারকারীদের মধ্যে। হাসান, সহিহাহ ৪/৩৯৪, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৫৩ [
তুরস্কের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্হ জায়গার মধ্যে একটা হল hatay, যা সিরিয়ার লাটাকিয়ার (যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত) নিকট। লাটাকিয়া ও hatay-এ সবচেয়ে বেশি আলাভী (নুসাইরিয়া) শিয়াদের বসবাস। তারা সিরিয়ার ক্ষমতায় আছে। নুসাইরিয়ারা সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন আবার বনু কাল্ব গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সুতারং তারা আবারও ভূমিধ্বসের সম্মুখীন হবে যখন মাহাদীর উদ্দেশ্যে সেনা পাঠাবে। গত কয়েক বছরে তারা হাজারো নারী, শিশু হত্যা, ধর্ষনের সাথে জড়িত।।
শুয়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … উবায়দুল্লাহ ইবনু কিবতিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হারিস ইবনু আবূ রাবীআ এবং আবদুল্লাহ ইবনু সুফিয়ান (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা (রাঃ) এর নিকট গেলেন। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম। তারা তাকে ঐ বাহিনী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, যাদের ভূমিতে ধসিয়ে দেয়া হবে। তখন ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর খিলাফতকাল ছিল।
উত্তরে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক আশ্রয় গ্রহণকারী বায়তুল্লাহ শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তখন তার বিরুদ্ধে একটি সেনাদল প্রেরণ করা হবে। তারা যখন বায়দায় (ময়দানে) অবস্থান নিবে তখন তাদের ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে এ কি করে প্রযোজ্য হতে পারে যে অসন্তুষ্ট চিত্তে এ অভিযানে শরীক হয়েছে? তিনি বললেন, তাদের সাথে তাকে সহ ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। তবে কিয়ামতের দিন তার উত্থান হবে তার নিয়্যাতের ভিত্তিতে। বর্ননাকারী আবূ জা’ফর (রহঃ) বলেন, এ হল মদীনার বায়দা (যা যুল হুলায়ফার সন্নিকটে অবস্থিত)।
অপর হাদীসে এসেছে
আমর নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবন সাফওয়ান (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি, একটি সৈন্যদল এ (আল্লাহর) ঘরের বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্যে আগমন করবে। অতঃপর তারা যখন এ ভূমির এক বায়দায় (ময়দানে) পদার্পণ করবে তখন তাদের মাঝের অংশটি ভূমিতে ধসিয়ে দেয়া হবে। এ সময় অগ্রভাগের সৈন্যরা পেছনের সৈন্যদেরকে চিৎকার করে ডাকতে থাকবে। অতঃপর সকলকেই ভূমিতে ধসিয়ে দেয়া হবে। পালিয়ে যাওয়া একটি লোক ব্যতীত তাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না। সে-ই তাদের সম্পর্কে অন্যদেরকে সংবাদ দিবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি (আবদুল্লাহ) নামে হাফসা (রাঃ) এর উপর মিথ্যা আরোপ করনি এবং হাফসা (রাঃ) এর ব্যাপারেও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যা আরোপ করেননি। (সহীহ মুসলিম – কেয়ামতের ফেতনা অধ্যায়)
অপর হাদীসে এসেছে
মুহাম্মদ ইব্ন মুছান্না (রহঃ) …. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একজন খলীফার মৃতুর সময় মতানৈক্য দেখা দিলে এবং সে সময় মদীনা থেকে এক ব্যক্তি পালিয়ে মক্কায় আসলে, সেখানকার অধিবাসিগণ তার পাশে সমবেত হবে এবং তাকে ইমামতি করার জন্য সামনে পাঠাবে। কিন্তু সে ব্যক্তি তা অপছন্দ করবে। এরপর লোকেরা তার হাতে ’হাজরে-আসওয়াদ’ ও ’মাকামে-ইব্রাহীমের’ মাঝে বায়াআত গ্রহণ করবে। সে সময় শামদেশ থেকে তার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরিত হবে, যারা মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত ’বায়দা’ নামক স্থানে মাটিতে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।
লোকেরা যখন এ অবস্থা দেখবে, তখন শাম ও ইরাকের ওলী-আবদালগণ তার নিকট উপস্থিত হয়ে, ’হাজরে-আসওয়াদ’ ও মাকামে-ইব্রাহীমের’ মাঝে বায়আত গ্রহণ করবে। এরপর কুরায়শ বংশে এমন এক ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করবে যার মা হবে ’কালব’ গোত্রের। যারা তাদের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠাবে এবং এ যুদ্ধে তারা বিজয়ী হবে। এরা ’কালব’ গোত্রের সেই সৈন্য, যারা মাহ্দীর সৈন্যদের হাতে পরাজিত হবে।
এসময় যারা কালব গোত্রের গনীমতের মালের অংশগ্রহণ করার জন্য উপস্থিত হবেনা, তাদের জন্য আফসোস। এরপর মাহ্দী (আঃ) গনীমতের মাল লোকদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত পুনরুজ্জীবিত করবেন। সে সময় পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি সাত বছর জীবিত থাকার পর ইনতিকাল করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযার সালাত আদায় করবে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai’f) বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ) পুনঃনিরীক্ষণঃ সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) মাহদী (আঃ) সম্পর্কে
এছাড়া মুসলিম, আল ফিতান বহু হাদীস আছে বনু কাল্ব সম্পর্কে সকল হাদীস একসাথে করে আলেমদের অভিমত আশ্রিত ব্যক্তি ঈমাম মাহাদী (হাফি:)
নুসাইরিয়াদের আকীদার মধ্যে কয়টা হল-
১.তারা আলীকে (রা:) আল্লাহর রূপ মানে
২. কুরআনকে বিকৃত মানে
৩. আয়েশা (রা:) ও হাফেজা (রা:)-কে রসুলকে (সা:) বিষ দিয়ে হত্যা করেছে দাবি করে অভিশাপ দেয়।
৪. মুতা বিবাহকে জায়েজ ভাবা, যা জেনাকে হালাল করার শামিল। আর অশ্লীলতায় আযাব আসে।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “মদীনায় ঈর থেকে সওর পর্যন্ত হারাম। যে ব্যক্তি তার মধ্যে কোন অপকর্ম করবে বা দুর্ঘটনা ঘটাবে বা নবরচিত কর্ম (বিদআত) করবে অথবা এমন অপকর্মকারী বা বিদআতীকে স্থান বা প্রশ্রয় দেবে বা সাহায্য করবে তার উপর আল্লাহ, ফিরিশ্যামন্ডলী এবং সমগ্র মানবমন্ডলীর অভিশাপ। আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার নিকট হতে ফরয ও নফল কোন কিছুই গ্রহণ করবেন না।” (বুখারী, মুসলিম ১৩৬৬নং)।
তিনি আরো বলেন, “আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে নিজ পিতামাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন দুষ্কৃতকারী বা বিদআতীকে আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে ভূমির (জমি-জায়গার) সীমা-চিহ্ন পরিবর্তন করে।” (মুসলিম ১৯৭৮)।
আর আয়েশা (রা), হাফেজা (রা) মুমিনদের মা (উম্মুল মোমেনীন)। তাদের অভিশাপ দেওয়া আর উম্মাহ চুপ থাকবে তাহলো আযাব ডেকে নেওয়ার সামিল।
বিপদ-আপদ মুমিনের জন্য পরীক্ষা, জালেমের জন্য আযাব।
তবে যখন আযাব আসে, ভালো মন্দ সবাই ঘায়েল হয়, কেয়ামতের দিবসে নিয়ত অনুযায়ী ফলাফল হবে। অনেকে আবার অন্যায় দেখে নিরব থাকার কারনেও আযাব আসে। যেমন – আপনি যদি আপনার পাশের বাড়িতে কাউকে আগুন দিতে দেখেন ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও আগুন না নেভান বা দূরে না চলে যান, এই আগুনে ক্ষতিগ্রস্হ আপনিও হবেন।