তিন বছর আগে এক ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা। সে তখন জাহেলিয়াতের পথ ছেড়ে ইসলামে প্রবেশ করেছে। তার মনটা খুব বিষন্ন ছিল। জিজ্ঞেস করতেই বলল- বিপদ, রিযিকের পেরেশানি, একের পর এক সমস্যা চলছে, তার সাথের বন্ধু, স্বজন ভালো পর্যায়ে পৌছে গেছে আর তার শুধুই বাধা।বললাম- তুমি ভালোবাসা ও সাফল্যের পরীক্ষায় প্রবেশ করেছো আর ভালো রেজাল্ট পেতে হবে। সে হাসল (দুষ্টামি ভেবে)। বললাম, আল্লাহতাআলা বলেন- “এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা-মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার সান্নিধ্যে ফিরে যাব।” (সুরা বাকারা- ১৫৫-৫৬)। আল্লাহ জানিয়েছেন তিনি আমাদের মন্দ ও ভালো উভয় অবস্থায় পরীক্ষা নিবেন (সুরা আম্বিয়া-৩৫)। কাউকে সম্পদ, সন্তান, সুখ দিয়ে পরীক্ষা করবেন আর কাউকে দুঃখ, ক্ষুধা দারিদ্র্যতা, সন্তান না দিয়ে বা কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করবেন। আল্লাহর কাছে যে সবচেয়ে প্রিয় ও উচ্চমর্যাদার (ঈমান শক্তিশালী ব্যক্তির) তার পরীক্ষা ততবেশি হয় এবং পরীক্ষা পাসের পর তাকে উচ্চমানের জান্নাত দেওয়া হয়। আর যার ঈমান দুর্বল তার পরীক্ষা কম, জান্নাতও অপেক্ষাকৃত কম মর্যাদার হয়। যে ছেলে মেট্রিক পাস করেনি তাকে মেডিকেলের প্রশ্ন কিভাবে করা যায়? তাই আল্লাহ হয়তো আমাদেরকে নবী/ সাহাবী/ তাবেয়ী/ মুজাহিদ/ মুমিনদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত সহজ পরীক্ষা নিচ্ছেন আবার আমাদের তুলনায় আমাদের পরিচিতদের অনেকের আরও সহজ পরীক্ষা নিচ্ছেন। রসুল (সাঃ) বলেন- নবীগণ সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত হন, অতঃপর তাদের নিকটবর্তীরা, এরপর এদের নিকটবর্তীরা। মানুষকে তার ঈমান অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। যদি তার ঈমান শক্তিশালী হয়, তাহলে পরীক্ষাও কঠিন হয়। যদি তার ঈমান দুর্বল হয়, তাহলে তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে হালকা হয়। বিপদ বান্দার পিছু ছাড়ে না। পরিশেষে তার অবস্থা এমন হয় যে, সে পাপমুক্ত হয়ে জমিনে চলাফেরা করে। (তিরমিজি -১৪৩)। অনেক কথা হল, তাকে আহমদ মুসা জিবরিলের বিপদ যখন নেয়ামত বইটা পড়তে বললাম। আর জানালাম আসলে আমাদের শেখানো হয় বিলগেটস, জুকারবার্গ, মেসি, রোনালদো বা সাকিবরা সফল তাই ওদের চাকচাক্যিময় জীবন আমাদের আর্কষণ করে। অথচ প্রকৃত সফল ব্যক্তিরা আজও নিদারুণ ঈমানের পরীক্ষা দিচ্ছে ও উত্তীর্ণ হচ্ছে। তাকে প্রিয় শায়েখদের আত্মত্যাগ, আফিয়া সিদ্দিকী, মুসা সিরান্টোনিও, তারিক মেহেন্নাদের কষ্টকর জীবনকাহিনী জানালাম, যাদের দাওয়াতে হাজারো নয় লাখো মানুষ সঠিক ইসলামে ফিরেছে, নওমুসলিমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। সে কথাগুলো শুনল মনোযোগ দিয়ে, এরপর মাঝে মাঝে মেসেজে কথা হত। মাত্র কিছুদিন আগে কল করে জানালো ভাই, আপনার ঐদিনের কথাগুলো আমার জীবনে অনেক প্রশান্তি নিয়ে এসেছে। এখন আর বিপদ, কষ্ট, রিজিকের ভয় করি না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখি ও জান্নাত কামনা করি। একথা শুনে আমি হাসলাম, সে যে মুহূর্তে কল দিয়েছিল তখন মনটা বিষন্ন ছিলো। টানা একের পর এক বিপদ, পেরেশানি, সমস্যা চলছিল যদিও মোটেও আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হই নি। তবুও মানুষ তো মনটা খারাপ হবেই। হাসলাম এভাবে উপদেশ দিতে তো ভালোই শিখেছি এবার নিজের জীবনে তা ভালোমত বাস্তবায়ন করতে হবে আর নিজেকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
