মুসলিমরা সবাই জানে কোন ব্যক্তি বিশ্বাসের সহিত লা-ইলাহ-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) পড়া মুসলিম হওয়ার শর্ত। কিন্তু আমাদের বেশিরভাগেরই আজ পর্যন্ত কালেমার সঠিক অর্থ জানা নেই। কালেমার রুকন বা শর্ত দুটি।
১. তাগুতকে বর্জন অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সমস্ত কিছুর ইবাদতকে অস্বীকার করা।
২. একমাত্র আল্লাহকে ইবাদাতের যোগ্য হিসেবে মানা ও স্বীকৃতি জানানো।
আমরা ইবাদাতের যোগ্য হিসেবে আল্লাহকে মানলেও আজ পর্যন্ত অনেকেই জানি না তাগুত কি এবং একে বর্জন করতে পারি নি। অথচ তাগুতকে বর্জন ছাড়া ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহপাক বলেন-
“দ্বীনের মধ্যে কোন জবরদস্তী নেই। নিশ্চয় সঠিক পথ ভুল পথ হতে পৃথক হয়ে গেছে। সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাহলে সে এমন মজবুত হাতল ধরল যা কখনো ভাঙ্গবে না এবং আল্লাহতায়ালা হচ্ছে সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সুরা বাকারাহ- ২৫৬)।
সুরা নাহলে বর্নিত-
“নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি, তারা যেন শুধু আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে বর্জন করে।” (আয়াত-৩৬)।
ইসলামিক ভাষায় তাগুত বলতে বুঝায় আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত বা অনুগত্য করা হয় এবং যে এটা পছন্দ করে সেও তাগুত। আল্লাহর ক্ষমতার পরিবর্তে কাউকে ক্ষমতাশীল মনে করা, আল্লাহকে ভালোবাসার মত বা তার চেয়ে বেশি ভালোবেসে কারো আনুগত্য করাও তাগুত। অথচ এখন কত গান, কবিতায়, নাটকে বলা হয়- তুমি ছাড়া আমি অসহায়, আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমার জন্য, তোমাকে না পেলে জীবন বৃথা, জন্ম আমার তোমার জন্য। অথচ প্রতিটি সৃষ্টি আল্লাহর সাহায্য ছাড়া অসহায় আর ইসলামের শিক্ষা হল বান্দার ভালোবাসা হল আল্লাহর জন্য- সুরা তাওবা -২৩, ২৪, সুরা মুমতাহিনা আয়াত- ৪। আর মানুষ ও জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাতেরর জন্য। (সুরা যারিয়াত- ৫৬)।
আল্লাহ কেয়ামত দিবসে বলবেন আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্হাপনকারীরা কোথায়? আজ যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না আমি তাদের ছায়া দিব। (মুসলিম -৪৬৫৫)। আল্লাহ ছাড়া কাউকে বিধানদাতা মানা বা আল্লাহর আইন ব্যতীত অন্য কারো আইন মানাও তাগুতের অনুসরণ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
সৃষ্টি করা আর আদেশ দানের মালিক তার (সুরা আরাফ-৫৪)।
অপর আয়াতে রয়েছে –
“বিধান দেওয়ার অধিকার শুধু আল্লাহর।” (সুরা ইউসুফ- ৪০)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
যারা আল্লাহর আইন দ্বারা বিচার করে না তারাই কাফের, জালেম। (সুরা মায়েদাহ- ৪৪, ৪৫)।
সুরা নিসার ৬০ নং আয়াতে বর্নিত-
“এবং তারা ফয়সালার জন্য তাগুতের কাছে যেতে চায়, যদিও তারা তাগুতকে প্রত্যাখান করার জন্য আদিষ্ট হয়েছে। কিন্তু শয়তান তাদের সুদূর বিপথে নিয়ে যেতে চায়।”
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“তারা তাদের পন্ডিত ও ধর্মগুরুদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছিল।” (সুরা তওবা, আয়াত ৩১)।
যদিও খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মগুরুদের সিজদাহ দিত না কিন্তু আল্লাহর আইনের পরিবর্তে তাদের আইন মেনে নিয়েছিল। এভাবেই আল্লাহর বদলে ধর্মগুরুকে বিধানদাতা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। আজও যারা আল্লাহর আইনের বদলে কোন মানবরচিত আইনকে খুশি মনে মেনে নেয় এবং এসব আইন প্রণেতাকে সমর্থন, প্রশংসা, সাহায্য করে তারা এর মাধ্যমে তাগুতের আনুগত্য করছে।
আল্লাহর ছাড়া কোন জ্যোতিষী বা কোন যন্ত্র অদৃৃশ্য, ভবিষ্যৎ এর সম্পর্কে জানে মনে করাও তাগুতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ এটা কেবল আল্লাহর ক্ষমতা।
আল্লাহপাক বলেন-
“গায়েবের চাবিকাঠি শুধু আল্লাহর কাছে। তিনি ছাড়া কেউই জানে না।” (সুরা আনআম-৫৯)।
এছাড়াও কুলক্ষন, আল্লাহ ছাড়া কারো নামে কসম খাওয়া শিরক বা তাগুতের অনুসরণ। রাসুল্লাহ (সা:) বলেন- অশুভ লক্ষনের ধারনা যাকে কোন প্রয়োজন হতে ফিরিয়ে রাখল সে শিরক করল। তারা বললেন হে আল্লাহর রাসুল এর কাফফারা কি? রসুলুল্লাহ (সা:) বলেন, তাদের কেউ বলবে – হে আল্লাহ তোমার কল্যান ছাড়া কোন কল্যান নেই, তোমার অশুভ ছাড়া কোন অশুভ নেই। (মুসনাদে আহমদ)। বিশ্বের যাবতীয় কল্যান-অকল্যানের ক্ষমতা শুধু আল্লাহর হাতে। তাই তার কাছে প্রার্থণা করতে হয়।
আল্লাহ বলেন,
“তোমাদের মধ্যে এমনলোকও রয়েছে যে বলে: হে আমাদের প্রতিপালক! এ দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের কল্যান দান কর এবং জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা কর।” (সুরা বাকারাহ- ২০১)।
অথচ আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে অমুক পাখি ডাকলে, পিছ হতে ডাকলে, অমুক সময় অমুক খাওয়া খেলে অমুক অমঙ্গল হয় যার দ্বারা অন্য ধর্মের বিশ্বাসকে অনুসরণ করা হয় যা শিরক। আবার অনেকে আল্লাহকে বাদ দিয়ে জমিনের কসম, আকাশ, গাছ, মাথা ছুয়ে কসম খায় যা শিরক। রসুল (সাঃ) বলেন, “যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য নামে শপথ করে সে শির্কই করে (তিরমিযি)। যদিও আমরা অনেকেই কালেমাকে ভালোবাসি কিন্তু এর অর্থ আজও সম্পূর্ণরূপে বুঝি নি এবং তাগুতকে বর্জন করতে পারিনি। তাগুতকে বর্জন ব্যতীত কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না।
আল্লাহতায়ালা বলেন-
“অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা স্বত্বেও মুশরিক।” (সুরা ইউসুফ -১০৬)।