ইসলামের নামে নারী বিদ্বেষ যেন না ছড়ায়! ইসলামে নারীর অধিকার।

নারীর পর্দা ফরজ এটা জানলেও পুরুষের যে পর্দা আছে এটা অনেকে জানে বা মানে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। (সুরা নুর)

‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র।’ (সুরা নুর)

পুরুষের ছতর আছে, ছতর ভঙ্গের কারণে গোনাহ হয়, এই বিষয়গুলো অনেকের অজানা। অনেকে ইসলামের প্রচারণা করেন, নারীর পর্দার দাওয়াহ দেন, কুরআনের আয়াত দেন। আবার তাদের ফেইসবুক, সোশ্যাল মিডিয়ায় কাফির ফুটবল তারকার ছতর ভঙ্গ করা ছবি। কোন ফুটবলার ভালো এই নিয়ে তর্ক করে!? তারকার মতো পোষাক পরিধান করে হাটুর উপরে যা নারী কেন পুরুষের জন্য দেখাটাও বিরক্তকর।

ছোটবেলায় খেয়াল করতাম- গ্রামের আত্মীয়স্বজন, নারী-পুরুষ একসঙ্গে উঠানে কথা বলতেন। চাচাতো-মামাতো ভাইবোন, স্বজনদের মধ্যে পর্দার প্রয়োজন আছে, এদেশে অনেকে মেনে চলে না। লুঙ্গি পরে খালি গায়ে গল্প করে দেবর-ভাবী, চাচাতো-মামাতো ভাইবোনরা। পুরুষের চোখের পর্দা ও ছতেরর তোয়াক্কা নেই।

সহশিক্ষা হারাম কিন্তু এদেশের বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ যেখানে রয়েছে শুধু মেয়ে শিক্ষার্থী কোন ছাত্র নেই, সেখানেও ফিতনা কম নয়। কারণ অধিকাংশ শিক্ষকই পুরুষ, অনেকে গেস্ট শিক্ষক যাদের বয়স ২৫ এর কম। তাদের মধ্যে বাকপটু, চতুর শিক্ষকের প্রেমে মেয়েরা পড়ে বা প্রতারিত হয় ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়।

একজন মসজিদের বড় ঈমাম তার সাবালিকা মেয়ের শিক্ষার জন্য হিন্দু গৃহশিক্ষক রেখেছিলেন কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন- মুসলিম কেউ থাকলে প্রেমে জড়াতে পারে, নাউজুবিল্লাহ। অথচ এলাকায় বহু উচ্চ শিক্ষিত নারী শিক্ষক ছিল।

সরেজমিন তদন্তে জানা গেছে বহু শিক্ষার্থী শিক্ষকের ফাদে পড়ে পরীক্ষার ফলাফল, ব্যবহারিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য। এর অন্যতম কারণ অভিভাবকরা। তারা মেয়েকে সার্টিফিকেট জীবনের জন্য মূল্যমান শিখাতে সক্ষম হয়েছে ঠিকই কিন্তু নারী সম্মান, ইজ্জতের মূল্য সর্বাধিক তা শিখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

অধিকাংশ মেয়েদের প্রথম ধোকা, প্রেম যা বলুন তা হয় শিক্ষক, গৃহশিক্ষক, প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয় দ্বারা। সহশিক্ষা হারাম কিন্তু এলাকায় এলাকায় এখন মহিলা মাদ্রাসা গড়ে উঠছে। যাদের অধিকাংশ শিক্ষকই পুরুষ, ঠিকমত পর্দা চলে না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী দ্বীনের আলাপের সাথে সাথে খোশগল্পে জড়িয়ে যায়, অনৈতিক সম্পর্কেও জড়াচ্ছে।

৯০ ভাগ এই সকল মাদ্রাসায় আকীদার মূল আলোচনা নেই – তাওহীদ, আল্লাহর সিফাত, তাগুত, আল ওয়ালা ওয়াল বারা, আসাবিয়াত, আহলে বায়াত সম্পর্কে কোন আলোচনা নেই। তাই মোটিভেশন বক্তারাও মাদ্রাসা খোলার সুযোগ পায় এদেশে। কারণ মাদ্রাসা খুলতে সরকারের অনুমোদন লাগে। পরিপূর্ণ তাওহীদের কথা, তাগুত, সরকারবিরোধী শিক্ষা শিখানো হবে এমন মাদ্রাসা খোলার অনুমোদন তো দূরের কথা, কেউ গোপনে এইরুপ দ্বীনী কার্যক্রম চালালেও বন্ধ করে দেয়।

বেশ কয়েক বছর আগে পথশিশুদের নিয়ে এইরূপ শিক্ষা চালু করতে চেষ্টা করি- বহু বাধায় বন্ধ করতে হয়। কারণ সরকার গরিব অসহায় শিশুর শিক্ষার নামে বিদেশ হতে বহু অর্থ আনে বা এনজিওগুলোকে এই সকল কাজের অনুমোদন দেয় ও সরকার এনজিওগুলো হতে বহু সুবিধা নেয়। আর এনজিওগুলো তাদের শির্ক, কুফরী, সমকামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে।

একজন এমপি ও মন্ত্রী এই কারনে বাধা দেন – তাকে এটার প্রধান পরিচালক করতে হবে আর শিক্ষাব্যবস্থা তারা পর্যবেক্ষণ করবে। তার জনপ্রিয়তা, নির্বাচনে প্রচারের কাজে লাগবে।

ইংরেজি, টেকনোলজির শিক্ষা সমস্যা নেই ওদের। দ্বীনী শিক্ষা তারা যতটুকু অনুমোদন দিবে ততটুকু শিখাতে পারবে। মুনাফিকগুলো স্কুল-কলেজেও ইসলাম শিক্ষা রেখেছে ধোকা দিতে যেন বুঝাতে চায় তারা ধর্মবিদ্বেষী বা বিরোধী নয়, ঠিকই ধর্মচর্চা করতে দিচ্ছে। অথচ তাওহীদের শিক্ষা জানানো হতে জাতিকে দূরে রাখছে। কারণ তাওহীদ জানলে মানুষ তাদের ঘৃনা করবে।

বহু বক্তা, আলেম নারীর স্মার্ট ফোন, অনলাইনে থাকার বিপক্ষে। অথচ তাদের স্ত্রী, ভক্তগন অনলাইনে বেশি একটিভ। অন্ধ ভক্তগুলো মোটিভেশন বক্তব্য শুনে ভাবছে দ্বীন শিখে ফেলছে – ফিরকা, আহলে বায়াত, আল ওয়ালা ওয়াল বারা, খলিফাহ কোরাইশি হতে হবে এসব ব্যাপারে সঠিক ধারনা নেই ওদের।

এটা ঠিক, নারীর তাকওয়া না থাকলে অনলাইন হতে দূরে থাকা উচিত – কিন্তু দ্বীন শেখার জন্য অনলাইন অতি প্রয়োজন যখন অধিকাংশ বক্তব্য ও মাদ্রাসাগুলো তাগুত নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু শুধুই কি নারীর জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার বিপদজনক – পুরুষের জন্য নয় কি?

নারী ও মেয়েরা অনলাইনে প্রেম পরাকিয়ায় জড়ায়। এই প্রেম পরাকিয়া কাদের সাথে জড়ায়? অনলাইনে একটিভ পুরুষ ও যুবকের সাথে! এখানে নারী-পুরুষ উভয়েই দোষী। ইসলাম প্রতিবেশী ভাই, স্বজনের অধিকারের ব্যাপারে কতটা কঠোর। মুমিন পুরুষ আরেক মুসলিম ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে কিভাবে সম্পর্কে জড়াতে পারে!?

কোন ধর্ষনের ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীকে দোষারোপ করা হয়। শরীয়া আইন নেই, জালেমেরা কোলের শিশু, নাবালিকা ধর্ষন করে তবুও অনেকে শুধু নারীর পর্দার অজুহাত আনবে!? এদেশে ধর্ষিতাকে কেউ সহানুভূতি, আশ্রয় দিতে চায় না বিয়ে তো দূরের থাকা। একজন ধর্ষিতা নারীকে তার নারী বান্ধবী, স্বজনরা পরিচয় দিতে চায় না, মিশতে চায় না – অথচ এই বান্ধবী, স্বজনরা নিজেরা প্রেম/পরাকিয়ায় জড়িত থাকে অধিকাংশ। অথচ ৪-৫ প্রেম করা সুন্দরী মেয়ে, তারকাকে বিয়ে করতে বহু পুরুষ রাজি।

আবার একজন সৎ, দ্বীনদার গরিব মুমিনের স্ত্রী হতে চায় না অনেকে কিন্তু জনপ্রিয়, ধনী, তারকার/আলেমের ২য় স্ত্রী হতেও আপত্তি নেই। কারণ তাদের জনপ্রিয়তা, লাইফ স্টাইল নারীকে আকর্ষণ করে।

রসুল (সা:) শ্রেষ্ঠ দাঈ মুসাইব বিন উমায়েরের (রা:) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে যেরূপ বিলাসী জীবনযাপন করেছেন আজকের অধিকাংশ দাঈগন ইসলামের ওয়াজ করে সেরূপ বিলীসিতা করে চলছে। কারণ কিছু ওয়াজ করলে জনপ্রিয় হওয়া, অর্থ আয় সহজ আর কিছু ওয়াজ করলে আপনার ব্যবসা বন্ধ করে দিবে, চাকরিচ্যুত করবে, জেল ও জুলুম চালাবে। যা সাহাবীদের সাথে ঘটেছিল।

আল্লাহ আমাদের মুসাইব বিন উমায়ের (রা) এর মত সুমিষ্ট, হিকমাহপূর্ণ দাঈ, কঠোর মুজাহিদ ও উত্তম শহীদ হওয়ার তৌফিক দিক।

অভিভাবকরা মেয়েদের ব্যাপারে কিছুটা সচেতন থাকলেও কিশোর, তরুনদের অনলাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকে উদাসীন। ফলে ওরা সারাদিন বিভিন্ন গেমস খেলে, কিশোর গ্যাং, মাদকের নেশা, ছিনতাই, ধর্ষনে জড়িয়ে যাচ্ছে।

অনেক বক্তার বক্তব্যের কারণে নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস বিলুপ্তির পথে। কোন ঘটনা ঘটলে – ছেলেরা কমেন্ট করে এজন্যই জাহান্নামের নারীর সংখ্যা বেশি হবে আবার নারীরা পুরুষকে পথভ্রষ্ট বলে মন্তব্য করে ঘটনা যাচাই না করে। মনে রাখবেন নারীবাদী হওয়া উচিত নয়, নারীবিদ্বেষীও নয়। কিন্তু বর্তমান নারীদের অধঃপতনে আমরা পুরুষরা কি কম দায়ী?

আল্লাহ বলেন,“আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না। তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন বা চার। আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর।” (সূরা নিসাঃ আয়াত ৩)

“আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না। তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন বা চার। আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর।” (সূরা নিসাঃ আয়াত ৩)

এই আয়াত হতে অনেকে বহু বিবাহের বৈধতা মানলেও বহু পরহেজগার দাবিদারদের জানি যারা নারীর দেনমোহর, সম্পদের প্রকৃত অধিকার দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তার মানে আপনারা কুরআনের কিছু অংশ মানবেন আর কিছু মানবেন না – এটা ইসলাম নয় বরং আপনারা নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলেছেন।

একটা সমাজ, উম্মাহ সঠিকভাবে পরিচালিত করতে হলে নারী, পুরুষ উভয়কে দ্বীনী শিক্ষা, তাকওয়া অর্জন, ইসলামী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারীদের আজকের অধঃপতনের কারণ শুধু নারীদের একা নয় বরং পুরুষদের ইসলাম না মানা অন্যতম কারণ। ছোটবেলায় মা-খালাদের দেখতাম তাদের হাতগুলো অর্থশূন্য থাকতো। দেনমোহরের টাকা তো পেতই না আর বাবা বাড়ীর সম্পদের হক্বও পেতেন না।

ছোটবেলায় দেখতাম কোন আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসলে এক প্যাকেট বিস্কুটের জন্য মা-খালাদের টাকা ধার বা বাকী করতে হতো। অপরদিকে বাবা-খালুরা জমি কিনতেন কিন্তু দেনমোহর দিতেন না। যদি দেনমোহরের (নারীর অধিকার) এই অর্থ তাদের অধিকার উপযুক্তভাবে ব্যয় করতে পারতো তাহলে আর নিজেকে এতো ছোট মনে হতো না তাদের।

অনেকের বোন, ফুফকে বিনা চিৎকিসায় মরতে দেখেছি – অথচ ভাই, স্বজনরা জমি বেচে বিল্ডিং করছে বা ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। কিন্তু বোন, ফুফুদের তার প্রাপ্য দেয় না। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কারো এক বিঘত সম্পদ যদি কেউ আত্মসাৎ করে তাহলে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তার গলায় সাত স্তবক জমিন ঝুলিয়ে দেবেন। ধসাতে থাকবেন তাকে।

আর অনেকে নারীদের সামান্য মনোমালিন্য হলে তালাকের হুমকি দিতো কিন্তু মোহরানা পূর্নাঙ্গ দিত না। যেন স্বামী নয় সন্ত্রাসীর মত শাসন করতে চাইতো। অবশ্যই ভালো পুরুষও ছিল, আছে, থাকবে। তেমনি অনেক ভালো মা, বোন আজও আছে, থাকবে।

নারীদের এরকম নির্মম জীবনধারন দেখে অনেকে সিদ্ধান্ত নিলেন- বোনদের উচ্চ শিক্ষিত করবেন, চাকরি করাবেন। আজ বোনরা ইউরোপ, আমেরিকাসহ বহুদেশে উচ্চপদে রয়েছে- তাদের জিজ্ঞেস করেন তোমরা কি সুখ, শান্তি পেয়েছো!?

তাদের অভিযোগ হবে – কর্মক্ষেত্রে আজও নির্যাতিত হয়। তখন তাদের দেনমোহরসহ, সম্পত্তি বন্টনের অধিকারগুলো তুলে ধরেন – বলবেন ইসলাম একমাত্র সমাধান যা নারীদের জীবনে সম্মান, শান্তি আনতে পারে। এমনকি বহুজনকে বুঝিয়ে বিবাহের ৩০ বছর পরও দেনমোহর আদায় করা হয়েছে।

নারীদের পর্দার সহিত গৃহে রাখতে চান? তাহলে শুধু শাসন নয় তাদের অধিকারগুলো ফিরিয়ে দেন। ইসলাম শুধু কঠোরতা দ্বারা প্রতিষ্ঠা পায়নি বরং ইসলাম হল ইনসাফ ও ভারসাম্যের পরিমিত মিশ্রণ।

একজন নারী ১০ বছর চাকরি করে যে টাকা জমাতে পারে – অথচ অতি সহজে দেনমোহর ও সম্পদের অধিকার দিলে তার চেয়ে বেশি সম্পদের মালিকানা পেতে পারে।

আল্লাহ বলেন,

“বাবা-মা এবং আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে পুরুষের অংশ রয়েছে এবং বাব-মা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদে নারীরও অংশ রয়েছে, তা অল্পই হোক বা বেশি হোক, এক নির্ধারিত অংশ।” (সূরা নিসাঃ আয়াত ৭)

আবার মোহরানার নামে বর্তমানে ব্যবসা, বাড়াবাড়ি বন্ধ করতে হবে।

কেউ ভুলের উর্ধ্বে নয় লেখার ভালোগুলো গ্রহণ করুন, ভুলগুলো ধরিয়ে দিন। মুমিন ভাই, বোন উভয়ই উম্মাহর সম্পদ- উভয়ের পর্দা ফরজ আর সবচেয়ে উত্তম পর্দা হলো তাকওয়ার।