ইসরায়েলসহ প্রতিটি জালেমের ধ্বংস চাই!

এদেশে থেকে ইসরায়েলসহ মুসলিমদের শত্রুদের বিরোধিতা করা সহজ ও করলে জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়। কিন্তু দেশীয় তাগুত, জালেম, চাদাবাজের বিরোধিতা কঠিন ও জুলুমের শিকার হতে হয়, সাহসের প্রয়োজন হয়। সমাজের জুলুমের বিরোধীতায় খুব কম লোককে পাশে পাওয়া যায়।

বহুদূরে মুসলিম বোনের নির্যাতন, ধর্ষনের প্রতিরোধ করার ইচ্ছে থাকলেও সাধ্য আমাদের নেই। কিন্তু যখন আমাদের অতি পাশে প্রতিবেশী বোনটা ধর্ষিত হয়, এমনকি কোলের শিশু ধর্ষিত হচ্ছে, আমাদের সেই প্রতিবাদী ও জেহাদী চেতনা কোথায় হারিয়ে যায়!? আমরা সংখ্যায় অজস্র, ভূখন্ড ও ভাষা নিজেদের তবুও ধর্ষিতদের প্রাপ্য বিচার দিতে পেরেছি কি!?

সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বহুদেশে নিষ্পাপ শিশুদের ক্ষুধা, কষ্ট দেখে অনেক কিছু করতে মন চায়- অথচ সারাদেশে ফুটপাত জুড়ে ক্ষুধার্ত অসহায়, আশ্রয়হারা শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ছড়িয়ে আছে আমরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারি। আসলে আমরা কি কার্যকর কিছু করেছি! প্রতিবেশীর হক কতটা আদায় করছি?

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিবরীল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে এত বেশি তাকিদ করেছেন যে, আমার কাছে মনে হয়েছে প্রতিবেশীকে মিরাছের অংশিদার বানিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী ৬০১৪; সহীহ মুসলিম ২৫২৪)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৮৫)

বহুদূরের পবিত্রভূমির ওয়াজ করে অনেকে জেহাদের ফজিলত জানাচ্ছে, আবার আড়ালে অনেকে নিজেকে জনপ্রিয় করছে। অথচ দ্বীন ইসলাম ও মুমিনের মূল্য যেকোন ভূমির চেয়ে বেশি, তাহলে অতি নিকটবর্তী মায়ানমারের জন্য আমাদের জেহাদের ওয়াজ ও প্রস্তুতি কই ছিল বা কই গেল!? আর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুমিন রসুলের (সা:) চরিত্র নিয়ে যারা উপহাস, অবমাননা করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আসলে কার্যকর কিছু কি করতে পেরেছি!?

এখানে সংখ্যায়, জনবলে দুর্বল ও বহুদূর ভূখণ্ডের অজুহাত রোজ কেয়ামতে কাজে আসবে কি!? প্রকৃত সমস্যা কি বুঝতে হবে!

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শিগগির মানুষ তোমাদের আক্রমণ করার জন্য একে অপরকে আহ্বান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সঙ্গে খাবার খাওয়ার জন্য একে অপরকে আহ্বান করে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তখন কি আমরা সংখ্যায় কম থাকবো।’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত। কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে, যাকে সহজেই সমুদ্রের স্রোত বয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহান ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আল-ওয়াহান কি?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল-ওয়াহান হলো- দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৭৫৩৯)

আমাদের ইসলাম ও মুসলিমের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা আছে সত্যি কিন্তু দুনিয়ার ভালোবাসা ও মায়ার কাছে বার বার তা হার মেনে যায়। একদিকে আমাদের আলোচনা, প্রচারনা চলে বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত ভূমি, অসহায় রক্তাক্ত মুসলিম শিশুর। অন্যদিকে দুনিয়ার মায়ায় ক্রিকেট, ফুটবলের বিজয় উল্লাস আমাদের দুঃখ ও দায়িত্ব ভুলিয়ে দেয়।

যতটুকু আবেগ, চোখের জল তরুনদের নাটক, সিনেমা দেখে আসে ততটা ইসলাম ও মুসলিমের জন্য কি আসে!? আর মুমিনদের জন্য শয়তানের একটা বড় ফেতনা হল- আবেগতাড়িত করে বড় নেকীর কাজ হতে দূরে রেখে ছোট নেকীর কাজে ব্যস্ত রাখে। কারণ সে চেষ্টা করেও মুমিনকে জেনাসহ পাপে ব্যস্ত রাখতে পারবে না বরং ভুল করলে মুমিন তওবা করে আরও বেশি নেক আমল করবে। তাই অন্যদেশের মুসলিমদের দুর্দশা দেখে আবেগী হয়ে কিছু নেক কাজ ঠিকই করছে কিন্তু আমাদের বিশাল দায়িত্ব নিজদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, জালেম ও রসুলের (সা:) অপবাদদাতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভুলিয়ে দিচ্ছে!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *