আমাদের কেমন শাসন চাওয়া উচিত?

আমাদের দেশের অধিকাংশ আলেমরাই ইসলাম/খিলাফাত প্রতিষ্ঠার বক্তব্য দেন। বহু দল খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখায়- অথচ ওয়াজ করে উসমান সাম্রাজ্য, মোঘল সাম্রাজ্যের বীরত্ব নিয়ে। প্রকৃত খিলাফাহর ইতিহাস খুব কমই আলোচনা হয়।

খলিফাহ হলো সারাবিশ্বে মুসলিমদের নেতা যা কোরাইশ বংশ হতে মজলিসে শুরা দ্বারা নির্বাচিত হয়। খলিফার শাসনাধীন রাষ্ট্রই খিলাফাহ আর খলিফার নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রদেশে গর্ভনর নির্বাচিত হয়।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “জনগণ এর বিষয়ে (প্রশাসনিক ব্যাপারে) কুরায়শদের অনুসারী। মুসলিমরা তাদের মুসলিমদের এবং কাফেররা তাঁদের কাফেরদের (অনুসারী)। (মুসলিম)

মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) … হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যে সকল হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন তন্মধ্যে একটি হল যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকজন এই ব্যাপারে কোরায়শের অনুসারী মুসলিমরা মুসলিমদের অনুসারী এবং কাফেররা কাফেরদের অনুসারী। (মুসলিম)

ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকজন ভাল-মন্দ (উভয় ব্যাপারেই) কুরায়শের অনুসারী।

আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ কর্তৃত্ব (খেলাফত) সর্বদা কুরায়শের মধ্যেই থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত (দুনিয়ার) দুটি লোকও বেঁচে থাকবে। (মুসলিম)

কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও রিফা’আ ইবনু হায়সাম ওয়াসেতী (রহঃ) … সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। তখন আমরা তাঁকে বলতে শুনলাম, শাসন ক্ষমতার ব্যাপারটা চলতে থাকবে যতক্ষন না উম্মাতের মধ্যে বারজন খলীফা অতিবাহিত হবেন। তারপর তিনি কিছু বললেন, যা আমার কাছে অস্পষ্ট ছিল। তখন আমি আমার-পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বললেন? তিনি বললেন যে, তিনি বলেছেন, তাদের সকলেই হবে কুরায়শ বংশোদ্ভূত। (মুসলিম)

সবগুলো হাদীস মুসলিম শরীফে রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রশাসন অধ্যায়ে পাবেন।

উসমানীয় সাম্রাজ্য, মোঘল সাম্রাজ্যে মুসলিমদের কিছু অগ্রগতি যেমন হয়েছিল তেমনি বিদআতও চালু হয়েছিল। ক্ষমতার জন্য বাপ – ছেলে, ভাই – ভাইকে হত্যা করেছিল। মোঘল শাসক আকবর নতুন ধর্ম চালু করেছিল। আর বহু রাজাদের অধিকাংশ মন্ত্রী, সেনা, আমলা ছিল হিন্দু। উসমানী সাম্রাজ্যে বহু খ্রিষ্টাণ সেনাও ছিল।

রসুল (সা:) ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত কাউকে মুসলিমদের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতেন না। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- উহুদ যুদ্ধ অধ্যায়)। সাহাবীরা একই নিয়ম মেনে চলতেন। অথচ ইসলামী রাষ্ট্র কুরআন দ্বারা শাসিত হওয়ায় শুধুমাত্র মুসলিমরা বিচারব্যবস্থার, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেত।

ওদের আমলে আলেম, মুসলিম ও বিধর্মীদের উপর জুলুম হয়েছিল। যা ইসলামী শাসনের বিপরীত। অনেক বিধর্মী যখন এসব কর্মকান্ডের সমালোচনা করে – আমরা প্রকৃত খেলাফাহ না জানিয়ে বরং সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষে কথা বলি। ফলে বিধর্মীরা ইসলামী শাসনকে ভুল বুঝে। অথচ ইহুদী ধর্মগুরুর বক্তব্য শুনছিলাম, বলছিলেন – উমর (রা:) এর মত খলিফাহ যদি হয় তারা জিজিয়া দিয়ে এই রাষ্ট্রে বসবাস করবে। কারণ তখন প্রকৃত নিরাপত্তা, ধর্ম পালনের অধিকার মিলবে যা বর্তমান কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা দিতে সম্ভব নয়।

শাহজাহানের তাজমহল নামক মাজারের জন্য কত মানুষকে দুর্ভোগ, দারিদ্র্যতা বরণ করতে হয়েছিল। শুধু কি মির জাফর একা দায়ী! সিরাজ উদ্দৌলার বাহিনীর হিন্দু মন্ত্রী, সেনারা কি তার বিরুদ্ধে যায়নি?

ফ্রান্সের সেনারা নিজ স্বার্থে সিরাজ উদ্দৌলাকে সাহায্য করতে এসেছিল আবার স্বদেশীয় লোকেরা অর্থের বিনিময়ে ইংরেজদের পক্ষ নিয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। কারণ অর্থের বিনিময়ে সেনা পাওয়া যায় কিন্তু মুজাহিদ নয়। আর অর্থের জন্য তারা যেকোন দলের পক্ষে লড়াই করতে পারে। তার অন্যতম কারণ রাজারা বিলাসী (মদ, জলসায় মত্ত) ছিল আর জনগণ ছিল অভাবী। একই দৃশ্য বর্তমানে চলছে! সাদ্দাম, গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে স্বদেশীরা পশ্চিমাদের পক্ষ নিয়ে লড়াই করে।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যখনই তারা আল্লাহ ও তার রসুলের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, তখনই তাদের বিজাতীয় শত্রুকে (আল্লাহ) তাদের উপর বিজয় করে দিবেন, ফলে তারা মালিকানাধীন অনেককিছু দখল করে দিবে। যতক্ষণ শাসক আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন করবে না, আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় কার্যকরী করবে না, ততক্ষন আল্লাহ অভ্যন্তরীন সংঘাত লাগিয়ে রাখবেন।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ম খন্ড)

তাই মানুষকে খিলাফাহ রাশেদীনের পথে আহ্বান করা উত্তম। ভবিষ্যতে খিলাফাহই আসবে।

হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। হযরত নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে নবুওয়ত ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্‌ চাহেন। এরপর আল্লাহ্‌ তা তুলে নিবেন। এরপর নবুওয়তের পদ্ধতিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা ততক্ষণ বর্তমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্‌ চাইবেন। এরপর তিনি তা তুলে নিবেন। তখন যুলুম অত্যাচার ও উৎপীড়নের রাজত্ব কায়েম হবে। তা’ ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্‌ চাইবেন। এরপর আল্লাহ্‌ তা’ তুলে নিবেন। তখন তা’ অহংকার ও জবরদস্তিমূলক সাম্রাজ্যে পরিণত হবে এবং তা’ ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্‌ চাইবেন। এরপর আল্লাহ্‌ তা’ তুলে নিবেন। তখন নবুওয়তের পদ্ধতিতে পুনরায় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে।” (আহ্‌মদ, বায়হাকী)

সাফীনাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নবুওয়্যাতের ভিত্তিতে পরিচালিত খিলাফত ত্রিশ বছর অব্যাহত থাকবে। অতঃপর আল্লাহর যাকে ইচ্ছা রাজত্ব বা তাঁর রাজত্ব দান করবেন। সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমাকে সাফীনাহ (রাঃ) বলেছেন, হিসেব করো, আবূ বকর (রাঃ) দুই বছর, ‘উমার (রাঃ) দশ বছর, ‘উসমান (রাঃ) বারো বছর ও আলী (রাঃ) এতো বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমি সাফীনাহ (রাঃ) -কে বললাম, এরা ধারণা করে যে, ‘আলী (রাঃ) খলীফাহ ছিলেন না। তিনি বলেন, বনী যারকা অর্থাৎ মাওয়ানের বংশধরগণ মিথ্যা বলেছে।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৬৪৬
হাদিসের মান: হাসান সহিহ

আব্দুল্লাহ ইবনে হাওয়ালা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, ‘যখন তুমি দেখবে খেলাফত কোনো পবিত্র ভূমিতে (জেরুজালেম) অবতরণ করেছে বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন তুমি মনে করবে যে, কেয়ামত খুব সন্নিকটে এসে গেছে।’ (আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদ)

একটু চিন্তা করুন- ইয়াজিদের শাসনামালকে যদি খিলাফাহ বলেন – যখন আলীকে (রা:) মসজিদ হতে অভিশাপ দেওয়া হতো, আহলে বায়াতকে হত্যা করা হয়েছিল। এই ইসলাম মুমিনও চাইবে না, বিধর্মীরা কিভাবে চাইবে। আব্বাসীদের প্রাথমিক যুগে রসুলের (সা:) বংশধর নফসে জাকিয়াকে (মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ) হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছিল।

ঈমাম আবু হানিফা, মালিক, হাম্বলের উপর জুলুম হয়েছিল!? এসব ঈমামগণ যদি সঠিক পথে থাকে তাহলে শাসকগন জুলুম করেছিল??! আর শাসক যদি আদর্শ খলিফাহ হয় তাহলে ঈমামগণ খারেজী ছিল?

আপনারা এক জগাখিচুড়ী ইতিহাস তুলে ধরছেন উম্মাহর নিকট যাতে উম্মাহ দিশেহারা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *