অলির পরিচয় (বাড়াবাড়ি ও বাস্তবতা)

আমাদের দেশে কাউকে কুরআন-সুন্নাহর পথে আহ্বান করলে সেই আহ্বান তাদের পীর, আলেম, শায়েখের বিরুদ্ধে গেলেই আহ্বানকারীকে ইহুদিদের দালাল, ভন্ড, অলি-বুজুর্গদের মর্যাদাক্ষুন্নকারী হিসেবে আ্যাখায়িত করে।

আসুন জেনে নিই অলি আসলে কারা?

আল্লাহ বলেন,

যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।(সুরা বাকারাহ -২৫৭)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

তোমাদের বন্ধুতো কেবল আল্লাহ, তার রাসূলও মুমিনগণ- যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং তারা বিনীত। আর যে আল্লাহ, তার রাসূল ও মুমিনগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তবে নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী। (সুরা মায়েদাহ ৫৫-৫৬)

অলি কাকে বলে?

‘অলি’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ অভিভাবক, মুরব্বি, বন্ধু। আরবি ভাষায় ‘আউলিয়া’ শব্দটি ‘অলি’র বহুবচন। শব্দগতভাবে কখনো কখনো অলি শব্দের অর্থ করা হয় শাসক, অভিভাবক বা কর্তা।

অলির পরিচয় দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,

‘(তারাই আল্লাহর অলি) যারা ঈমান আনে এবং তাকওয়া (পরহেজগারি) অবলম্বন করে।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬৩)।

এ আয়াতে ঈমানদার ও মুত্তাকিদের আল্লাহর অলি বলা হয়েছে। হাদিসে অলির পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে—আসমা’ বিনতূ ইয়াযীদ (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ আমি কি তোমাদের মধ্যকার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের কথা জানিয়ে দিবো না? তারা বলেন, হাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে তারাই শ্রেষ্ঠ যাদের দেখলে মহান আল্লাহর স্মরণ হয়। [৩৪৫১]

ফুটনোটঃ
৩৪৫১. হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। মিশকাত ৫০২৩।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪১১৯

অপর হাদিসে এসেছে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ পাক বলেছেন যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি।

যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগি না কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি। (বুখারী: ৬৫০২)

আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,

‘নিশ্চয় রাসূল সা:-এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিনের আকাঙ্ক্ষা করে এবং বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে’ (সূরা আহজাব-২১)। 

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

হে নবী! লোকদের বলে দাও, ‘যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। তাদেরকে বলো, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো’ (সূরা আলে ইমরান-৩১)।

অর্থাৎ যে কোন মুমিন কুরআন সুন্নাহ অনুসারে চললে সেই আল্লাহর অলী। আর আল্লাহর সর্বোত্তম অলী হচ্ছেন রসুল (সাঃ) সহ রসুল-নবী ও সাহাবীগন।

আর আল্লাহর অলি হতে হলে ফরজ আমলের পাশাপাশি রসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুযায়ী নফল আমল করতে হবে। অথচ আমাদের দেশে যাদের অলি হিসেবে পরিচিত করা হয় বা মানা হয় তাদের অধিকাংশেই একটি গুরুত্বপূর্ন ফরজ ইবাদত জেহাদ তো করেই না বরং জেহাদের বিরোধিতা করে বা এড়িয়ে যায়। অথচ রসুল (সাঃ) ও সাহাবীরা জীবনের বহুসময় জেহাদে কাটিয়েছেন। আবু হুরইরহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জিহাদ না করে বা জিহাদের আকাঙ্খা পোষণ না করে মারা যায় তাহলে সে মুনাফিক অবস্থায় মারা গেল।”

[মুসলিম, অধ্যায়ঃ ৩৩, কিতাবুল ইমারহ, অনুচ্ছেদঃ ৪৭, আল্লাহ্’র পথে জিহাদ না করে এমন কি জিহাদের ইচ্ছা পোষণ না করে মারা যায় তার পরিণাম অশুভ, হাদিস # ১৫৮/১৯১০, আবু দাউদ, স্বহীহ্,অধ্যায়ঃ ১০, কিতাবুল জিহাদ, অনুচ্ছেদঃ ১৮, যুদ্ধ পরিহার করা অপছন্দনীয়, হাদিস # ২৫০২]

এই হাদিসটি থেকে বুঝা গেল, যে ব্যক্তি জিহাদ না করে অথবা জিহাদের আকাঙ্খা পোষণ না করে মারা যায় সে মুনাফিক। তাই মুনাফিক হওয়া থেকে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য অবশ্যই ফারজ। অর্থাৎ বুঝা গেল জিহাদের নিয়ত করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ।

আর রসুল, সাহাবীদের পর যাকে সর্বশ্রেষ্ঠ তাবেয়ী মানা হয় তিনি উয়াইস ক্বারনী যিনি সিফফিনের যুদ্ধে আলী (রাঃ) এর পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হন। অথচ তাকে নিয়ে কত বাড়াবাড়ি ও আজগুবি কাহিনী কিন্তু তার শাহাদতের কাহিনি গোপন রাখা হয়।

পড়ে নিনঃ উয়াইস ক্বারনীর নামে পীর মুরিদী ব্যাবসা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *