হিকমাহ আসলে কি?

হিকমাহ শব্দের অর্থ প্রজ্ঞা। বস্তুত: যাবতীয় বিষয় বস্তুকে সঠিক জ্ঞান দ্বারা জানাকে হিকমাত বলে।

কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-

“হে আমাদের প্রতিপালক, তাদের মধ্য হতে তাদের নিকট এক রাসূল প্রেরণ করুন, যে তোমার আয়াতসমূহ তাদের নিকট আবৃত্তি করবে, তাদের কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দিবে এবং তাদের পবিত্র করবে। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”

সূরা বাকারাহ: আয়াত ১২৯

অপর আয়াতে রয়েছে-

“যেমন আমি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, যে আমার আয়াত সমূহ তোমাদের নিকট আবৃত্তি করে, তোমাদের পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং তোমরা যা জানতে না তা শিক্ষা দেয়।”

সূরা বাকারাহ: আয়াত ১৫৯

আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

“আল্লাহ পাক আপনার প্রতি আসমানী গ্রন্থ আল কিতাব (কুরআন) ও ঐশী প্রজ্ঞা আল হিকমাত নাযিল করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আপনার প্রতি আল্লাহ পাকের অসীম করুণা রয়েছে।”

সূরা আন নিসা: আয়াত ১১৩

তার মানে কুরআন সুন্নাহ মেনে চলা হল হিকমত। রসুলের (সা) সুন্নাহ হল হিকমাহ আর রসুল (সাঃ) হিকমতসম্পন্ন ব্যক্তি।

হিকমাহ হল সঠিকভাবে ইসলাম বা রসুলের সুন্নাহ মেনে চলা। হিকমাহ একেক ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। দাওয়াতের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট সত্য বলা যেমন হিকমাহ তেমনি জেহাদের ক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে মিথ্যা বলাও হিকমাহ। অনেকে হিকমাহর ভুল ব্যাখা করে সত্যকে পাশ কাটিয়ে যায় বা আড়াল রেখে, সুস্পষ্ট তুলে ধরে না।

আসুন দেখি! এ ব্যাপারে কুরআন কী বলে?

“আর অবশ্যই আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, তাই উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?”

সূরা আল-ক্বামার, আয়াত: ১৭, ২২, ৩২, ৪০

“(হে নবী) আসলে আমি তোমার ভাষায় একে (কুরআনকে) সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।”

সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৫৮

“(হে নবী) আসলে আমি তোমার ভাষায় একে (কুরআনকে) সহজ করে দিয়েছি, যেন তুমি এর দ্বারা মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার আর এর দ্বারা বিবাদকারী ঝগড়াটে লোকদেরকে সতর্ক করতে পার।”

সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৯৭

কুরআনকে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন:

“সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ!”

আয-যুখরুফ, আয়াত: ২; সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ২

“এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর।”

সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১৯, ২৬৬

“এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা সঠিক পথ প্রাপ্ত হও।”

সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১০৩

“এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।”

সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত: ৮৯

“এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছেন এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।”

সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৮, ৫৯

“আর আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছেন এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।”

সূরা আন-নূর, আয়াত: ১৮

“আর মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।”

সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২১

“অবশ্যই আমি আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি সেই লোকদের জন্য যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।”

সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১১৮

“নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে একটি আলোকবর্তিকা ও একটি স্পষ্ট কিতাব এসেছে।”

সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত: ১৫

“এটি হচ্ছে মানুষের জন্য সুস্পষ্ট বর্ণনা এবং মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত ও উপদেশ।”

সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৩৮

“আর এগুলো আল্লাহর সীমারেখা, জ্ঞানী লোকদের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।”

সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩০

“আল্লাহ তোমাদের জন্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।”

সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭৬

“অতএব তোমাদের নিকট স্পষ্ট দলীল প্রমাণাদি পৌঁছার পরেও যদি তোমাদের পদস্খলন ঘটে তাহলে জেনে রেখ, আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”

সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০৯

“নিশ্চয়ই আমি যা অবতীর্ণ করেছি, দলিল-প্রমাণাদি এবং হিদায়াত, মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পরেও যারা তা গোপন করে, তাদেরকেই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে।”

সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৯

কুরআনকে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যেন আমরা তা বুঝতে পারি:

“নিশ্চয় আমি এই কুরআনকে আরবী ভাষায় বানিয়েছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।”

সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৩

তার মানে কুরআন সুস্পষ্টভাবে ইসলামকে ব্যাখা করে যাতে মানুষ বিভ্রান্ত না হয় অথচ হিকমাহকে ভুল ব্যাখা করে সত্যকে গোপণ রাখার কারণে জাতি আজ বিভ্রান্ত। মৃত্যুর পর শিক্ষিত, নিরক্ষর, অর্ধশিক্ষিত, গরীব, ধনী সবাইকে একই প্রশ্ন করা হবে- রব কে? দ্বীন কি? নবী কে? কারণ আকীদা এত সুস্পষ্ট যেকোন ব্যক্তিই তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হলেও ইসলামের সঠিক দাওয়াত পেলেই সে বুঝবে কোনটা কুফর, শিরক আর কোনটা তাওহীদ। আর মাসয়ালা, ফিকাহ সবাই বুঝবে না তার জন্য গবেষণা প্রয়োজন।

আল্লাহ মহাজ্ঞানী কেউ যদি দ্বীন, আকীদা, রব না চিনত তাহলে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করতেন না!?

আল্লাহ বলেন-

“আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।”

সুরা বাকারাহ: ২৮৬

বিশ্ব আজ ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন তাই আলেমদের উচিত একতেলাফী মাসয়ালা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আগে সুস্পষ্টভাবে আকীদা, সুন্নাহ তুলে ধরা মুসলিমদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য।

মুসলিমদের পরস্পর যত দ্বন্দ্বই থাক মুক্তির জন্য এই বিশ্বাসই যথেষ্ট এক আল্লাহর ইবাদত করবে। আল্লাহকে সবকিছুর উর্ধ্বে ভালবাসবে এবং আল্লাহর জন্য তার রসূলকে ও মুমিনরা পরস্পর নিজেদের ভালবাসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *