হাসান (রা:) এর নামে অপবাদ ও শাহাদাত

আসলে যখন মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের হয় বড় প্রয়োজন, তখন একদল পথভ্রষ্ট আলেমরা বিভিন্ন ফেতনা ছড়িয়ে উম্মতকে বিভক্ত করতে তৎপর। হাসান (রা:) এর ফজিলত ও তাকে ভালোবাসা মুমিনের জন্য ফরজ এই নিয়ে বহুহাদীস রয়েছে।

তিনি জান্নাতী (শহীদ) যুবকদের নেতা অথচ তার শাহাদাত নিয়ে মিথ্যাচার চলছে। একসময় বিষাদসিন্ধু পড়ে তার শাহাদাতের ঘটনা নিয়ে। মিথ্যা ইতিহাস শিখেছে জাতি। এছাড়া কিছু আলেম, তাদের বইতে (এমনকি এখন ওয়েবসাইটেও পাবেন) তার হত্যার ঘটনার জন্য তার স্ত্রী জায়েদাকে দায়ী করে। অথচ ঐতিহাসিকগণ দাবি করেন জায়েদা নামে তার কোন স্ত্রীই ছিলো না। তার জন্য তারা জাল হাদীস, মিথ্যা ইতিহাস ব্যবহার করে অথচ নিজেদের সহীহ হাদীসের অনুসারী দাবি করে।

আহলে বায়াতকে অপবাদ দেওয়া হবে আর মুসলিম হয়ে চুপ করে বসে থাকলে রোজ কেয়ামতে আল্লাহ ও রসুল (সা:) এর সামনে কি নিয়ে দাড়াবো!?

আসুন ওরা যা প্রচার করে দেখি-

“হাসান (রাঃ) অধিক বিয়ে করতেন। সেই সাথে আবার তালাক প্রদান করতেন। বিষয়টি তার পিতা হযরত আলী মুরতাজা (রাঃ) এর বক্তব্য দ্বারা পরিস্কার। হাদীসে এসেছেঃ

قَالَ عَلِيٌّ: «يَا أَهْلَ الْعِرَاقِ، أَوْ يَا أَهْلَ الْكُوفَةِ، لَا تُزَوِّجُوا حَسَنًا، فَإِنَّهُ رَجُلٌ مِطْلَاقٌ

হযরত আলী রাঃ বলেন, হে ইরাকবাসী! হে কুফাবাসী! তোমরা হাসানের কাছে কন্যা বিয়ে দিও না, কেননা অনেক তালাক দেয়। [মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯১৯৫]

قَالَ عَلِيٌّ: «مَازَالَ الْحَسَنُ يَتَزَوَّجُ وَيُطَلِّقُ، حَتَّى حَسِبْتُ أَنْ يَكُونَ عَدَاوَةً فِي الْقَبَائِلِ

হযরত আলী (রাঃ) বলেন, হাসান (রাঃ) বিয়ে করে, আবার তালাক দেয়। এভাবে চলছে। আমার শংকা হচ্ছে গোত্রে গোত্রে এ নিয়ে শত্রুতা না তৈরী হয়। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯১৯৬]

মহিলারা স্বাভাবিকভাবে প্রচন্ড আক্রোশপ্রবণ হয়। আর স্বামীর বিষয়ে থাকে অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক। এ বিষয়ে ছাড় দিতে মোটেও রাজি হয় না। মাথায় বুদ্ধিও অনেক মহিলার কম থাকে। ইল্লামাশাআল্লাহ।

এ হিসেবে স্ত্রীদের মাঝে কোন প্রকার আক্রোশ জমে থাকতে পারে। আক্রোশবশতঃ কোন স্ত্রীলোক একাজ করে বসতে পারে বলে মনে হয়। বাকি নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।”

তাদের লেখা অবিকল এরকম, নাউজুবিল্লাহ। মিথ্যাবাদীকে আল্লাহ হেদায়েত দিক।

প্রথমত, হাদীসগুলো জাল আর আলী (রা:) নিজ ছেলে হাসানকে (রা:) না বুঝিয়ে শুধু অন্যদের মানা করবেন তা হতেই পারে না। আর বহু হাদীস ও ঘটনা দ্বারা প্রমানিত হয় হাসান (রা:) ছিলেন মুত্তাকী এবং রসুল (সা:) ও আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়দের অন্যতম ও অনুগত।

দ্বিতীয়ত, বৈধ (হালাল) কাজের মাঝে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হল তালাক। অথচ এই কাজটাই হাসান (রা:) করবেন তা হতেই পারে না। আসলে হত্যার ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে তারা এই কাহিনী তৈরি করে।

আসুন সহীহ হাদীস হতে তার শাহাদাতের প্রকৃত ঘটনা জেনে নিই

উমাইর বিন ইসহাক বর্ণনা করেনঃ আমি এবং অপর এক ব্যক্তি হাসান বিন আলীর কাছে যাই, যখন তিনি খুব একটা সুস্থ বোধ করছিলেন না। হাসান বিন আলী বারংবার তাকে বলছিলেনঃ “আমাকে যা জিজ্ঞাসা করার, তা করে নাও ওই সময় আসার পূর্বেই, যখন আর আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারবে না”। তিনি বললেনঃ আমি আপনাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করতে চাই না, মহান আল্লাহ্ আপনাকে সুস্থতা দান করুন। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং পায়খানার দিকে আগালেন। এরপর ফিরে এসে বললেনঃ “এই কেবলমাত্র আমার পেটের একটি অংশ কেটে বের হয়ে আসল, যা আমি এই কাঠের সাহায্যে উল্টিয়ে পালটিয়ে দেখছিলাম। আমাকে বারংবার কয়েক দফা বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। এই বারে প্রচণ্ড তীব্র বিষ দেয়া হয়েছে”।
উমাইর বিন ইসহাক বলেন, আমরা আবার পরের দিন সকালে হাসান বিন আলীকে দেখতে গেলাম। তিনি বাজারে ছিলেন এবং ইতোমধ্যে হুসাইন বিন আলী এসে তাঁর মাথার পাশে বসে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “হে আমার ভাই! কে আপনাকে বিষ প্রয়োগ করেছে?” হাসান বিন আলী বললেনঃ “তুমি কি তাকে হত্যা করতে চাও?” তিনি বললেনঃ “হ্যাঁ”। হাসান বিন আলী বললেনঃ “যদি আমি সত্যিকার অর্থেই খুনিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই, তাহলে মহান আল্লাহ তার কঠোর বদলা নিবেন।
আর, যদি সেই ব্যক্তি নির্দোষ হয়, তবে আমি চাই না যে কোনও নির্দোষ ব্যক্তি খুন হোক”।
[আল মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাঃ ৩৭৩৫৯, সনদটিকে সহীহ বলেছেন]

হাসান (রা:) সুস্পষ্ট হত্যাকারীর নাম বলেননি। তাহলে ওরা গায়েব জানলো কিভাবে? নাকি তারা আন্দাজ ও অনুমান নির্ভর মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। যেখানে হাসান (রা:) মৃত্যুশর্য্যায় সন্দেহবশত কারো ক্ষতি না হোক সেজন্য বিচার আল্লাহর কাছে চান, সহেন্দভাজনের নাম বলা হতে বিরত থাকেন। সেখানে তার স্ত্রীকে হত্যাকারী বলা ও একজন হত্যাকারী ক্ষমা করে দেওয়ার মিথ্যা কাহিনি বর্ননা করা হলো আহলে বায়াতের উপর অপবাদ। কারন এভাবে একটা হত্যাকারীকে ক্ষমা করা মানে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। তারা এসব মিথ্যা রটায় এজন্য যেন কেউ তার হত্যাকারী, সাহায্যকারীদের লানত না দেয়। যুক্তি পেশ করে ক্ষমা করার জন্য যেহেতু হাসান (রা:) ক্ষমা করে দিয়েছেন।

আর ধরুন শেষবার তার স্ত্রী বিষ দিয়েছিল তাহলে এর পূর্বে বারবার বিষ কারা দিয়েছিল!?

সাহাবীরা তার শাহাদাতকে বিপর্যয় মনে করতো, এমনকি তাই হয়েছিল।

খালিদ বিন মিদান হতে বর্ণিত, মিক্বদাম বিন মাদীকারব এবং আমর বিন আসওয়াদ আসলেন মু’আবিয়াহ বিন আবী সুফিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য। মু’আবিয়াহ বিন আবী সুফিয়ান জিজ্ঞাসা করলেন মিক্বদাম বিন মাদীকারব কেঃ “আপনি কি জানেন যে হাসান বিন ‘আলী ইন্তিকাল করেছেন?” মিক্বদাম তৎক্ষণাৎ তিলাওয়াত করলেনঃ “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি’ঊন (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ্ই জন্য এবং তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে)”। মু’আবিয়াহ বিন আবী সুফিয়ান জিজ্ঞাসা করলেন মিক্বদাম বিন মাদীকারব কেঃ “আপনি কি এটিকে কোনও বিপদ মনে করেন?” তিনি উত্তর করলেনঃ “কেন আমি এটিকে বিপর্যয় মনে করব না, যখন আমি আল্লাহর রসূলকে হাসান বিন ‘আলীকে কোলে নিয়ে বলতে শুনেছিঃ সে আমার আর হুসাইন ‘আলীর” [আবু দাউদ, মুসনাদ আহমাদঃ ১৭২২৮ (৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা-১৩২), হাদীসটি সহীহ।

পরিশেষে সকল অনুমান হতে বিরত থাকি। হাসান (রা:) এর হত্যাকারীর উপর লানত আর আল্লাহ আমাদের আহলে বায়াতের সাথে জান্নাত দান করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *