১.শামঃ
কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত তৎকালীন সময়ে শামদেশ বলতে- বর্তমান সময়ের সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে বুঝানো হতো। শেষ জমানায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল শামের সিরিয়া ও ফিলিস্তিন।
আব্দুল্লাহ ইবনে হাওয়ালা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, ‘যখন তুমি দেখবে খেলাফত কোনো পবিত্র ভূমিতে অবতরণ করেছে বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন তুমি মনে করবে যে, কেয়ামত খুব সন্নিকটে এসে গেছে।’ (আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদ)
এছাড়াও রয়েছে –
হজরত মুগিরাহ ইবনে শোবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, ‘কেয়ামত আসা পর্যন্ত আমার উম্মাতের এক দল সব সময়ই (সত্যের উপর) বিজয়ী থাকবে। আর তাঁরা হলেন বিজয়ী।’ (বুখারি)।
নাওয়াস ইবনে সামআন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার দাজ্জাল প্রসঙ্গে দীর্ঘ ও বিশদ আলোচনা করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, কেয়ামতের আগে হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম যে আসমান থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তিনি যে স্থানে অবতরণ করবেন মূলত সিরিয়ার দামেস্ক নাম শহরে পূর্ব অঞ্চলে উঁচু এবং সাদা মিনারায়। তিনি অবতরণ করে দুনিয়াতে আসবেন এবং সারা দুনিয়ায় তাণ্ডব চালানো দাজ্জালের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করবেন। আর সিরিয়ার ‘লুদ’ নামক স্থানে তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন।’ (মুসলিম, কেয়ামতের ফেতনা অধ্যায়)
২. ইলিয়া, জেরুজালেমঃ
ইলিয়া বলতে মূলত জেরুজালেমকে বুঝানো হতো। এছাড়া আল কুদস, আল আকসা নামে খ্যাত মুসলিমদের প্রিয় মসজিদ জেরুজালেম।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যখন কালো পতাকাগুলো পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে বের হবে, তখন কোন বস্তু তাদেরকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। এমনকি এই পতাকাকে ইলিয়ায় (বাইতুল মুকাদ্দাসে) উত্তোলন করা হবে (খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে)”।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২২৬৯;মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৮৭৬০)
৩. খোরাসান ও মাআউন্নাহরঃ
হাদীসে বহুবার পূর্বদিক বা খোরাসানের কথা উল্লেখ আছে।
রসুলের (সাঃ) যুগে খোরাসান বলতে বুঝাত-
“উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান (হেরাত, বালখ, কাবুল, গাজনি, কান্দাহার দিয়ে বিস্তৃত), উত্তর ও দক্ষিন-পূর্ব উজবেকিস্তান (সামারকান্দ, বুখারা, সেহরিসাবজ, আমু নদী ও সীর নদীর মধ্যাঞ্চল দিয়ে বিস্তৃত), উত্তর-পূর্ব ইরান (নিশাপুর, তুশ, মাসহাদ, গুরগান, দামাঘান দিয়ে বিস্তৃত), দক্ষিন তুর্কমেনিস্তান (মেরি প্রদেশ – মার্ভ, সানজান), দক্ষিন কাজিকিস্তান, উত্তর ও পশ্চিম পাকিস্তান (মালাকান্দ, সোয়াত, দীর ও চিত্রাল), উত্তর পশ্চিম তাজিকিস্তান (সুগ্ধ প্রদেশের খোজান্দ, পাঞ্জাকেন্ত দিয়ে বিস্তৃত)”।
মাআউন্নাহর-
“এক লোক মা-আরউন্নহর (নদীর ওপার) থেকে আবির্ভূত হবে যাকে হারছ হাররাস নামে ডাকা হবে। তবে তার পূর্বে জৈনিক ব্যাক্তি (ইরাকের কুফায়/মসূল শহরে) আসবেন। যার নাম হবে মানসুর, যে (খেলাফত বিষয়ে) মুহম্মদের (সাঃ) বংশের জন্য পথ সুগম করবে বা শক্ত করবে, যেমনটি কুরাইশ আল্লাহর রাসুলকে ঠিকানা দান করেছিল। তার সাহায্য সহযোগিতা করা কিংবা তার ডাকে সাড়া দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য বলে বিবেচিত হবে”।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২৯০)
ইসলামের পরিভাষায়, আমু নদীর ওপারে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে ইসলামের পরিভাষায় ‘মা-আরউন্নহর’ বা ‘নদীর ওপার’ বলা হয়। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজিকিস্তান এর অন্তর্ভুক্ত যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের একটি অংশ।
৪. মাগরিব ও জাযীরাতুল আরবঃ
মাছজুর ইবনে গাইলান আব্দুল্লাহ ইবনে সামিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি আমার আব্বাজান আব্দুল্লাহর সঙ্গে মসজিদ থেকে বের হলাম। সে সময় আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, মিশর ও বসরা সবার আগে ধ্বংস হবে। আমি বললাম, কী কারণে তাদের ধ্বংস নেমে আসবে? ওখানে তো অনেক বড় সম্মানিত ও বিত্তবান ব্যক্তিরা আছেন। তিনি উত্তরে বললেন, রক্তপাত, গণহত্যা ও অত্যাধিক দূর্ভিক্ষের কারণে।
আর মিশরের সমস্যা হলো, নীলনদ শুকিয়ে যাবে। আর এটিই মিশর ধ্বংসের কারণ হবে। (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ৪/৯০৭)
জাযীরাতুল আরব (আরব উপদ্বীপ) ও আন্দালুসিয়া (স্পেন) ধ্বংস হবে ঘোড়ার পা ও সৈন্যদের বিরোধের কারণে। ইরাক ধ্বংস হবে দূর্ভিক্ষ ও তরবারির কারণে। আর্মেনিয়া ধ্বংস হবে ভূমিকম্প ও বজ্রের কারণে। শত্রুর আক্রমণে কুফা শহর ধ্বংস হবে। বন্যার কারণে বসরা শহর ধ্বংস হবে। তিব্বতীদের হাতে ইরানের খোরাসান শহর ধ্বংস হবে। সিন্ধবাসীদের হাতে তিব্বতীরা ধ্বংস হবে। হিন্দবাসীদের হাতে সিন্ধবাসীরা ধ্বংস হবে। ইয়ামান ধ্বংস হবে শাসকদের অন্তর্দন্ধের কারণে। মক্কা ধ্বংস হবে হাবশীবাসীর (ইথিওপিয়াবাসী) আক্রমণে। মদীনা ধ্বংস হবে দূর্ভিক্ষের কারণে। (মুসতাদরাক হাকিম- ৪/৫০৯)
জাযীরাতুল আরব বলতে এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও ইয়েমেন ।
৫. হিন্দ ও সিন্ধুঃ
হযরত সওবান (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন- ‘আমার উম্মতের মধ্যে দুটি দল রয়েছে, আল্লাহ তাদের উভয়কে দোযখ থেকে মুক্তি দিবেন। (১) হিন্দ (ভারত)-এর সাথে গাজওয়া (জিহাদ) করনেওয়ালা দল এবং (২) ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ)-এর সঙ্গী দল।’। [সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩১৭৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২২৩৯৬]
যেমন, হযরত আবু হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- – ‘রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে গাজওয়ায়ে-হিন্দ -এর ওয়াদা করেছেন। সুতরাং আমি যদি তা পেয়ে যাই, তাহলে আমি আমার জান ও মাল (আল্লাহ’র রাস্তায়) দিয়ে দিবো। আর যদি আমাকে (ওই যুদ্ধে) কতল করে ফেলা হয়, তাহলে আমি হবো সর্বোত্তম শহিদগণের মধ্যে একজন। আর আমি যদি (ওই জিহাদে বেঁচে) ফিরে আসি, তাহলে আমি আবু হুরায়রাহ হবো (দোযখের শাস্তি থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত’। [সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩১৭৩; মুসনাদে আহমদ- ২/২২৯; আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ইবনে কাসির- ১০/১৯]
রসুলুল্লাহ’র (সা) যুগে হিন্দুস্হান বলতে বর্তমান – বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা বুঝাত।
আর সিন্ধ বলতে – পাকিস্তান, চীনকে বুঝাতো।