হক্ব দাবীদারদের বাস্তবতা

নাজরান এলাকার একদল লোক রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে বলল, আমরা তো পূর্বে থেকেই মুসলমান ছিলাম। তখন নবী বললেন, তোমাদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে তিনটি জিনিস :

১. তোমরা শূলিকে পূজা কর ।
২. তোমরা শূকরের মাংস খাও।
৩. আর তোমরা আল্লাহর জন্য সন্তান সাব্যস্ত কর।

এভাবে তাদের মাঝে এবং নবী (সাঃ)-এর মাঝে কথা কাটাকাটি চলতে থাকে। যখনই তারা কিছু বলছে নবী (সাঃ) তাদের সে কথাগুলোকে কুরআনের আয়াত দ্বারা খন্ডন করছেন। তারা বলছিল, হে মুহাম্মাদ! তুমি তো এমন লোক যে, তুমি বল- আমাদের সাথী ঈসা (আ) আল্লাহর বান্দা তখন নবী (সাঃ) বলেন, অবশ্যই ঈসা (আ) আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল এবং তাঁর কালেমা, যা তিনি মরিয়াম (আ) এর প্রতি অবতীর্ণ করে ছিলেন। নবী (সাঃ) এর এরূপ কথা শুনে তারা ক্ষেপে যায় এবং অনেক রাগ হয় এবং বলে, আচ্ছা পিতা ছাড়া কখনো সন্তান হতে পারে? হে মুহাম্মদ! তুমি যদি তোমার কথায় সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে এমন একটা দৃষ্টান্ত দেখাও তো দেখি যে, পিতা ছাড়া সন্তান হয়। তখন তাদের কথার প্রতি উত্তরে মহান আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করেন,

إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ

“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মত।” [সূরা আলে ইমরান – ৩:৫৯]

কিন্তু এ খ্রিস্টান লোকেরা কোনো কথাই মানতে চাইল না; বরং তর্ক আরো বাড়িয়ে দিল। তখন নবী বললেন, ঠিক আছে, তোমরা যদি বিশ্বাস না কর চলো আমরা মুবাহালা করি। আর মুবাহালা বলা হয়, একদল অপর দলের প্রতি লানত করা। কারণ মহান আল্লাহই বলেছেন,

فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَاءنَا وَأَبْنَاءكُمْ وَنِسَاءنَا وَنِسَاءكُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةُ اللّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ

“হে নবী! সঠিক জ্ঞান থাকার পর যারা আপনার সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হতে চায় আপনি তাদেরকে বলুন, তোমরা আস! তোমাদের সন্তান সস্তুতিকে, স্ত্রীদেরকে নিয়ে এবং তোমরা নিজেরাও আস। আমিও আমার সন্তান-সন্তুতি, স্ত্রী এবং আমি নিজেকে নিয়ে আসব এবং আমরা মুবাহালা (পরস্পর পরস্পরকে অভিশাপ দেওয়া) করব। অতঃপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হবে মিথ্যাবাদীদের উপর।” [সূরা আলে ইমরান – ৩:৬১]

তখন নবী (সাঃ) আলী, হাসান, হুসাইন, ফাতেমাসহ এক মাঠে আসলেন । কিন্তু তারা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা আসবে না। কারণ তারা ভয় পাচ্ছিল যে, যদি সত্যি সত্যিই আল্লাহর গযব এসে যায় তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তারা বলল, ঠিক আছে হে মুহাম্মদ! তুমি যা ভালো মনে কর তাই ঠিক। অর্থাৎ তারা মুবাহালা না করে দ্বীন ইসলাম মেনে নিল। (সীরাতুন নাবুবিয়্যাহ ফী যুইল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ লি আবি ওবা, ২/৫৪৭)।

মুবাহালা বলা হয় কোনো এক মাঠে নিজেদের কথার চূড়ান্ত সত্যতার জন্য বের হয়ে যাওয়া এবং প্রত্যেকে এভাবে নিজেদের প্রতি অভিশাপ করা যে, যদি আমরা মিথ্যা বলে থাকি তাহলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন।

ঠিক একই রোগ ছিল ইয়াহুদীদের যারা নিজেদের একমাত্র সঠিক দল ও জান্নাতী মনে করত। যেহেতু তারা নিশ্চিত দাবি করত মরলে তারা জান্নাতী তাহলে মৃত্যুকে ভালোবাসা (কামনা) স্বাভাবিক ছিল কিন্তু তারা বরং দুনিয়ায় দীর্ঘজীবী হতে চাইতো।

আল্লাহ বলেন-

قُلْ إِن كَانَتْ لَكُمُ الدَّارُ الآَخِرَةُ عِندَ اللّهِ خَالِصَةً مِّن دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُاْ الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

বলে দিন, যদি আখেরাতের বাসস্থান আল্লাহর কাছে একমাত্র তোমাদের জন্যই বরাদ্দ হয়ে থাকে-অন্য লোকদের বাদ দিয়ে, তবে মৃত্যু কামনা কর, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। [সুরা বাকারা – ২:৯৪]

وَلَن يَتَمَنَّوْهُ أَبَدًا بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ وَاللّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمينَ

কস্মিনকালেও তারা মৃত্যু কামনা করবে না ঐসব গোনাহর কারণে, যা তাদের হাত পাঠিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ গোনাহগারদের সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন। [সুরা বাকারা – ২:৯৫]

وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَى حَيَاةٍ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِ مِنَ الْعَذَابِ أَن يُعَمَّرَ وَاللّهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ

আপনি তাদেরকে জীবনের প্রতি সবার চাইতে, এমনকি মুশরিকদের চাইতেও অধিক লোভী দেখবেন। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে, যেন হাজার বছর আয়ু পায়। অথচ এরূপ আয়ু প্রাপ্তি তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ দেখেন যা কিছু তারা করে। [সুরা বাকারা – ২:৯৬]

আজ দেখুন বহু আলেম, পীর নিজেদেরই একমাত্র হক্কপন্হী দাবি করে এবং অনেকে তো মুরীদদের জান্নাতের গ্যারান্টি দেয়। অথচ জীবনে কখনও শহীদী মৃত্যু কামনা করে না বরং দুনিয়ার লোভ, খ্যাতি, ভয়ে জেহাদের অপব্যাখা করে। কারণ ইহুদী, খ্রিস্টানসহ অন্যদের মত যতই তারা নিজেদের সত্যপন্থী বলে প্রচার করুক তাদের অন্তর ঠিকই জানিয়ে দেয় তারা ভুল পথে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *