হকের পরিচয়

আমাদের পরিচয় ছিল মুসলিম। ইব্রাহিম (আ:) হতে শুরু করে রসুল (সা:) ও সাহাবীগন নিজেদের পরিচয় দিতেন মুসলিম। ইহুদি, খ্রিস্টানগন কিতাবের (তাওরাত ও ইনজিল) অনুসরণ ও নিজেদের মুসলিম পরিচয় বাদ দিয়ে বুজুর্গ ও বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদ সৃষ্টি করে দলে দলে বিভক্ত হল। অথচ নিজেদের ইব্রাহিমের (আ:) অনুসারী দাবি করত। ঠিক তেমনি আমরা রসুলের (সা:) অনুসারী দাবিদাররা বর্তমানে রসুলের (সা:) রেখে যাওয়া কিতাব, সুন্নাহ, খেলাফায়ে রাশেদীনদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন পরিচয় ও দলে দলে বিভক্ত হয়েছি।

হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে কুরআন পাঠকারী সমাজ! তোমরা (কুরআন ও সুন্নাহর উপর) সুদৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই তোমরা অনেক পশ্চাতে পড়ে আছ। আর যদি তোমরা ডানদিকের কিংবা বামদিকের পথ অনুসরণ কর তাহলে তোমরা সঠিক পথ হতে বহু দূরে সরে পড়বে। (বুখারী-আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৫), হাদিসের মানঃ সহিহ।

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি একটি সরল রেখা টানলেন এবং তাঁর ডান দিকে দুটি সরল রেখা টানলেন এবং বাম দিকেও দুটি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী রেখার উপর তাঁর হাত রেখে বলেনঃ এটা আল্লাহ্‌র রাস্তা। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ) এবং এ পথই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, অন্যথায় তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। (সূরাহ আনআম ৬ : ১৫৩)
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আহমাদ ১৪৮৫৩ তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: যিলূলুল জান্নাহ ১৬।

উক্ত হাদিসের রাবী মিজালিদ বিন সাঈদ সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও ইয়াকুব বিন সুফিয়ান বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইমাম নাসাঈ তাঁকে সিকাহ বলেছেন। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান তাঁকে দইফ বা দুর্বল বলেছেন। ইবনু মাঈন বলেন, তার থেকে দলিল গ্রহন করা যাবে না অন্যত্রে তিনি বলেন, দইফ বা দুর্বল। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। হাদিসের মানঃ সহিহ

কোন পথ সঠিক, কারা আছে হক্ব পথে এই নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মুসলিমরা!

রসুলের (স:) হাদীস দ্বারা প্রমানিত – কুরআন, সুন্নাহ যারা আকড়ে ধরবে ও যাদের অন্তরে আহলে বায়াতের প্রতি ভালোবাসা থাকবে তারাই হবে নাজাতপ্রাপ্ত (তিরমিজি, মুসলিম)।

যাইদ ইবনু আরকাম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা শক্তরূপে ধারণ (অনুসরণ) করলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ আল্লাহ তা’আলার কিতাব যা আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং আমার পরিবার অর্থাৎ আমার আহলে বাইত। এ দুটি কখনও আলাদা হবে না কাওসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য কর আমার পরে দু’জনের সঙ্গে তোমরা কিভাবে আচরণ কর।

সহীহঃ মিশকাত (৬১৪৪), রাওযুন নায়ীর (৯৭৭, ৯৭৮), সহীহাহ (৪/৩৫৬-৩৫৭)। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কিয়ামত পর্যন্ত একটি দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে কিতাল (যুদ্ধ) করতে থাকবে

জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ
কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে কিতাল করতে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করবেন। মুসলমানদের আমীর বলবেনঃ আসুন, সালাতে আমাদের ইমামত করুন। তিনি উত্তর দিবেনঃ না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম নিযুক্ত হবেন। এ হল আল্লাহর প্রদত্ত এ উম্মাতের সম্মান। (সহীহ মুসলিম)

জাবির ইবন সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

এ দ্বীন (ইসলাম) সর্বদা কায়েম থাকবে। মুসলমানদের একটি দল এর পক্ষে কিতাল করতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম)

হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ
আমার উম্মতের মধ্যে সর্বদা একটি দল থাকবে যারা হক এর উপর কিতাল করবে। তারা শত্রুপক্ষের উপর বিজয়ী থাকবে। তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে কিতাল করবে। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নম্বরঃ ২৪৮৪)

তারা শত্রুপক্ষের উপর বিজয়ী থাকবে মানে তারা অনবরত শত্রুপক্ষের উপর বিজয়ী হয়ে ভূমি দখল বা উদ্ধার করবে তা না (দাজ্জালের সময় অনেক ভূখন্ড দাজ্জালের দখলে থাকবে, আর ইয়াজুজ-মাজুজ হতে বাঁচতে মুসলিমর লোকালয় ছেড়ে তূর পাহাড়ে আশ্রয় নিতে হবে)। বরং তারা কখনও দ্বীন হতে বিচ্যূত হবে না। হয় শাহাদাত অথবা দ্বীনের বিজয়ের প্রচেষ্টা আমৃত্যু চালিয়ে যাবে!!

যারা কুরআন, সুন্নাহ, আহলে বায়াতের প্রতি মহাব্বত রেখে হক্বের পথে লড়াই করবে তারাই হক্বের পথে আছে, থাকবে! বহু কুরআন, সুন্নাহ ও হাদীসের অনুসরণের দাবিদার যারা বিভিন্ন অজুহাতে আহলে বায়াতের ফজিলত ও জেহাদকে এড়িয়ে চলে তারা কখনও হক্বের দলিল নয়!!

রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- মাহাদী আমার আহলে বায়াত (পরিবার) হতে আগমন করবে। (মুসনাদে আহমদ- ১ খন্ড, পৃ-৪৪৪)।

খলিফা মাহাদী, আলী (রাঃ) ও ফাতেমা (রাঃ) এর বংশধর হতে আসবে এই ব্যাপারে সবাই একমত। আলী (রাঃ) এর অবস্থা হয়েছিল, ঈসা (আঃ) এর অনুরূপ। ঈসা (আঃ) এর সাথে শত্রুতা, অপবাদ দিয়ে ইহুদিরা পথভ্রষ্ট হয় আর ভালোবাসার নামে বাড়াবাড়ি করে খ্রিস্টানরাও পথভ্রষ্ট হয়। তেমনি আলী (রাঃ) এর সাথে শত্রুতা ও অপবাদ দিয়ে একদল পথভ্রষ্ট হয় আর আলীকে (রাঃ) ভালবাসার নামে বাড়াবাড়ি করে শিয়ারা পথভ্রষ্ট হয়েছে- রসুলের (সাঃ) পরবর্তীতে তার বংশধরদের উপর নির্যাতন, হত্যা ও দেশ হতে বের করে দেওয়া হবে।

এরপর মাহাদী (হাফি) আসবে, তাকে হত্যা করার জন্য সিরিয়ায় কোরাইশি একজন শাসক সেনা পাঠাবে, যার সৈন্যরা হবে বনু কাল্বের (বর্তমান বাশার আল আসাদের সৈন্যরাও বনু কাল্বের)।

আল ফিতানের হাদীসে এসেছে – তিনি হবেন আবু সুফিয়ানের বংশধর বা বনু উমাইয়া, তিনি জনপ্রিয় হবেন। আজ যারা আহলে বায়াতের ফজিলত ও বনু উমাইয়ার জুলুম আড়াল করে মিথ্যা ফজিলত বর্ণনা করে তারাই হয়তো তাকে নেতা মানবে। (বনু উমাইয়ার মধ্যে কিছু সাহাবী (রা) ও উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ)-ও রয়েছেন যারা দ্বীনদার ও মুমিনদের নিকট সম্মানিত)

আল্লাহ আলীর (রাঃ) বংশধর হতে খলিফা মাহাদীকে (হাফি) পাঠিয়ে দীর্ঘদিন হতে চলে আসা দ্বন্দ্ব, শত্রুতা-অপবাদ, ভালোবাসার নামে শিরকের অবসান ঘটাবেন। তাই খলিফা মাহাদী (হাফি) ক্ষমতা নেওয়ার পর ইনশাআল্লাহ শিয়া-সুন্নী নয় সবার পরিচয় হবে মুসলিম। তাই পাথরও বলে উঠবে- হে মুসলিম! (কোথায় আছো আল্লাহর বান্দা) আমার পিছে ইহুদি লুকিয়ে আছে (মুসলিম শরীফ- কেয়ামতের ফেতনা অধ্যায়)।

এটা আল্লাহর চিরন্তন নীতি মজলুম বা তার স্বজনদের দ্বারা জালেমের পতন ঘটান, মজলুমদের ক্ষমতা দেন। ফেরাউনও মানুষকে বিভিন্ন দলে দলে বিভক্ত করেছিল, বনী ইসরায়েল জাতিকে দুর্বল ও দাসে পরিণত করেছিলো। আল্লাহ তাদের উদ্ধার করতে ও ক্ষমতা দিতে মুসাকে (আঃ) পাঠান। আল্লাহ বলেন-

“দেশে যাদের দুর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার ও তাদেরকে দেশে উত্তরাধিকারী করার। এবং তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করার এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্যবাহিনীকে তা দেখিয়ে দেওয়ার, যা তারা সেই দুর্বল দলের তরফ হতে আশংকা করত”

সুরা কাসাস-৫, ৬

মুসা (আঃ) ক্ষমতা নিবে এই আশংকায় ফেরাউন কত শিশু হত্যা করে, তদ্রূপ খলিফা মাহাদী (আ:) আসবে, ক্ষমতা নিবে এই আশংকায় ইসলামের শত্রুরা আহলে বায়াতের বহুলোককে হত্যা করবে, নিশ্চয় অপবাদ দিবে।

অনেক আলেমদের অভিমত- ঈসা (আঃ) মজলুম। কারণ তাকে ও মরিয়ম (আঃ) কে অপবাদ দেওয়া হয়, বাড়াবাড়ি করে শিরক করা হয়। এমনকি দাজ্জালও তার নামে অপবাদ দিবে সে-ই ঈসা মাসীহ। তাই আল্লাহ আসল মাসীহ ঈসাকে (আঃ) দিয়ে তাকে হত্যা করাবেন। আর তখন তাকে কেন্দ্র করে যে দুই ধর্মের বাড়াবাড়ি ছিলো পৃথিবী হতে এই দুই ধর্ম কেয়ামত পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

আবার বহুলোকই পাবেন যারা ভূখন্ড মুক্তির সংগ্রাম করছে! নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে কিন্তু কুরআন, সুন্নাহ ও আহলে বায়াতের বিপরীতে তাদের অবস্থান তারা হক্বের দলিল হতে পারে না!!

হয় শাহাদাত আর যদি ঈসার (আ:) সময়কাল পর্যন্ত জীবিত থাকি তাদের সাথে বিশ্বে ইসলাম কায়েম করা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *