স্বাধীন রাষ্ট্র বনাম শরীয়া রাষ্ট্র

আমরা মুসলিম জাতিসত্তা, এক ও অভিন্ন আল্লাহর আনুগত্য করি। তার প্রেরিত রসুলই (সা:) একমাত্র আদর্শ, আর সে আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করার জন্য আমাদের সংগ্রাম। প্রতিটি মুসলিমদের আমরা ভালোবাসি, প্রতিটি নিরীহ মানুষের কল্যান চাই – যেন দ্বীন ইসলামের ছায়াতলে এসে জান্নাতে আমরা একত্রিত হতে পারি।

কিন্তু আমরা যখন আকীদার জন্য কোন সংগ্রামী দলের বিরুদ্ধে বলি তার মানে এই নয়- আমরা তার সংগ্রামকে অপছন্দ করি বরং তারা আকীদা বিশুদ্ধ করে সংগ্রাম চালিয়ে যাক ও শহীদ হয়ে জান্নাতের মর্যাদা অর্জন করুক, এটাই প্রার্থনা করি। কিন্তু আকীদা বিশুদ্ধ না করে কোন দল বা সংগঠন শুধু ভূখন্ড বিজয় করবে। কাফের হতে হয়তো ক্ষমতা হস্তান্তর হবে শুধু কিন্তু কুফরী আইন সুদ, জেনা, মদ সবই বৈধ থেকে যাবে। তখন প্রকৃত ইসলাম যারা চাইবে – তাদের উপরই জুলুম, নির্যাতন আসবে। যুগ যুগ হতে তাই হয়ে আসছে। তাই আমাদের সমর্থন, ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য যারা শুধু ভূখন্ড বিজয় নয়, আল্লাহর দ্বীনের বিজয় চায়!

এজন্য আপনাদের স্বাধীনতা ও স্বাধীন রাষ্ট্রের ধোকা বুঝতে হবে

এই মহাবিশ্বে একমাত্র স্বাধীন হল আল্লাহ। তিনি যা ইচ্ছে করেন, সবকিছুই তার অধীন। আল্লাহ মানুষকে কিছু ক্ষমতা দিয়েছেন। আল্লাহর ইচ্ছেই সে তা কর্মে পরিণত করতে পারে। তবে আল্লাহর কাছে প্রিয় হল মুসলিম। মুসলিম হল যারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনকারী। আর ইবলিশ শয়তানই আল্লাহর কাছে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ চান তার ইচ্ছেমত পাপ ও ফেতনা ছড়ানোর জন্য।

মানুষ হয় ইসলামী নিয়মনীতি মেনে আল্লাহর অধীন হয়ে মুসলিম হবে, না হয় নিজের মনমতো চলে নফসের অধীন হয়ে শিরকে লিপ্ত হবে। ইসলামি রাষ্ট্র বলতে বুঝায় এমন রাষ্ট্রব্যবস্হা যা আল্লাহর আইন ও একমাত্র সংবিধান কুরআন-সুন্নাহর অধীন। যেখানে সার্বভৌম ক্ষমতা আল্লাহর আর তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র বলতে বুঝায় জনগনের পছন্দনীয় শাসক, শাসন ও তার আইন বা সংবিধানের অধীন যা প্রয়োজনে আল্লাহর আইনকে বাতিল করে নিজেরা মনমতো আইন রচনা করতে পারবে।

এভাবে আল্লাহর বিধানদাতা সত্তার সাথে শিরকে লিপ্ত হয়। যারা এই ধরনের নিয়মনীতিকে ভালোবাসবে, সর্মথন করবে তারা আল্লাহর শত্রুকে ভালোবাসা ও সমর্থন দিয়ে আল্লাহর শত্রুতে পরিণত হয়। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ যদি কুরআনের আইন দ্বারা পরিচালিত না করে আল্লাহ সেখানে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করেন।

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) হতে বর্নিত- “যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তার রসুলের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায় সম্পদ কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহন করে না, তখন আল্লাহ পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন।” (ইবনু মাজাহ- ৪০১৯)।

সারা বিশ্বে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর দিকে তাকালে এই হাদীসের প্রতিফলন দেখা যায়। তারা আল্লাহর আইন দ্বারা রাষ্ট্র চালায়নি তাতেই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পরে বিজাতীয় কাফেররা তাদের ভূখন্ডের সম্পদ লুন্ঠন করে নিচ্ছে। ব্রিটেন হতে আলাদা হয়ে যখন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয় তখন পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র গঠন না করে নিজেদের ক্ষমতার জন্য জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠন করে। যদি ইসলামি রাষ্ট্র হত তাহলে পূর্ব-পশ্চিমে হত একই পতাকা, একই সংবিধান আল-কুরআন, একই রসুলের সুন্নাহ চলত, দাপ্তরিক ভাষা হত আরবি আর সবাই নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকার থাকত। সকল মুসলিম সবক্ষেত্রে তাদের পরিপূর্ণ অধিকার পেত তা যে ভূখন্ডেই থাকুক না কেন!! তাহলে যুদ্ধই হত না কারণ লাখো মুসলিমের ভেতর ইসলামের জ্ঞান না থাকলেও ইসলামের প্রতি ভালোবাসা ছিল।

কিন্তু তারা জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র কায়েম করে। নিজস্ব পতাকা, সংবিধান, আদর্শ, ভাষা চালু করতে গিয়ে জুলুম নির্যাতন শুরু করে ফলে শুরু হয় যুদ্ধ। আজ দেখুন কুরআনের আইন নেই এইদেশে তাই একদল ক্ষমতায় এলে আরেক দল ও সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হয়।

তথাকথিত স্বাধীনতার নামে আমাদের বার বার বিভক্তি হয়েছে (ভারত হতে পাক-ভারত, পাকিস্তান হতে বাংলাদেশ)। আর শাসক বদল হয়েছে, মানুষ তার অধিকারের সঠিক মূল্যায়ন পায়নি। সাহাবীরা কখনো মক্কা বিজয় বা বদর দিবস পালন করেনি কারণ বদর, উহুদের চেতনা একদিনের জন্য না বরং সবসময় পালনীয়। আজও আরবদেশসহ বিভিন্ন দেশে কথিত মুসলিম ক্ষমতাসীনরা খুন, ধর্ষন করছে আর তাদের বিরোধিতা করলে আঘাত আসছে।

যারা ইসলাম চায়- এরকম শত শত আলেমগন বন্দী, নির্যাতিত। স্বাধীনতার নামে আপনি যদি শাসকের অন্যায়, শিরকের বিরোধিতা করলেই দেশদ্রোহী উপাধি পাবেন তাহলে যারা ভারত, পাকিস্তান শাসকের বিরোধিতা করেছে তারা দেশদ্রোহী ছিলেন। কারন তখন দেশটা তাদের ও শাসক তারা ছিল। আর রসুলগণ ফেরাউন, নমরুদ, আবু জাহেলদের শিরকী নিয়মনীতির বিরোধিতা করেন। ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন যা মসজিদ হতে রাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে দেশীয় চেতনার নামে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রনীতি মানার সুযোগ নেই।

স্বাধীনতার নামে বার বার ক্ষমতা পরিবর্তন, ভূখন্ড কাটসাট হয়েছে শুধু। ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও মুসলিমদের কল্যান এসেছে কি!? পুরা জমিনটা আল্লাহর, সর্বত্রই তার দ্বীন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন থাকতে হবে। আর কেয়ামত পর্যন্ত হক্ব দল থাকবে – তারা শিরকমুক্ত হয়ে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। তাদের চিনতে হলে মিডিয়া নির্ভর না হয়ে কুরআন, সুন্নাহ গবেষণা করুন। তাগুত, আল ওয়ালা ওয়াল বারা, আহলে বায়াতের ফজিলত, জাতীয়তাবাদ, খেলাফত নিয়ে জানুন। ইনশাআল্লাহ উপলব্দী করতে পারবেন, কারা হক্ব পথে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *