ইসলাম শুধু আবেগ দিয়ে নয় কুরআনের সঠিক ব্যাখা , সুন্নাহ গবেষণা দিয়ে ব্যাখা করলে উম্মতের জন্য কল্যাণকর হয়।
ঈমাম মাহদী আসার পূর্বে একটি আলামত হল ফোরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় উঠা। এখন মূল সমস্যা হলো- এগুলো নিয়ে এমন বিভ্রান্তি ছড়িয়ে গেছে সহজ জিনিসটা যেন জটিল মনে হবে।
আগে বুঝতে হবে,কেয়ামতের আলামত ও ফেতনার মধ্যে পার্থক্য কি!? কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত যত লক্ষন হাদীসে বর্ণিত আছে সবগুলোই আলামত তারমধ্যে ফেতনাও পড়ে। কিন্তু সব আলামত ফেতনা (বিপদ, বিশৃঙ্খলা, পরীক্ষা) নয় বরং রহমত। যেমন ঈসা (আঃ) ও মাহাদীর (হাফিঃ) আগমন। আবার কিছু আলামত এমন মুমিনের জন্য রহমত আর কাফের, মুনাফেকের জন্য ফেতনা তার মধ্যে স্বর্ণের পাহাড় উঠা অন্যতম।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “অদূর ভবিষ্যতে ফোরাত সোনার ভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দেবে। সে সময়ে যে ওখানে উপস্থিত থাকবে, সে যেন তার থেকে কিছুই গ্রহণ না করে”। (সহিহ বুখারি, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৬০৫; সুনানে তিরমিজি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৯৮)
** হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সেই পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ফোরাত থেকে সোনার পাহাড় বের হবে। তার জন্য মানুষ যুদ্ধ করবে এবং প্রতি একশ জনে নিরানব্বই জন লোক মারা যাবে। যে কজন জীবনে রক্ষা পাবে, তারা প্রত্যেকে মনে করবে, বোধ হয় একা আমিই জীবিত আছি”। (সহিহ মুসলিম, ৭০০৮-৭০১০)।
এখন প্রশ্ন আসে স্বর্ণের পাহাড় কবে উঠবে বা প্রকৃত স্বর্ণের পাহাড় না অন্যকিছু।
১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদীসে তৈল সংক্রান্ত কিছু বোঝাতে তিনি “কাফিসু”(قفيز) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। টাকা পয়সার জন্য “দিরহাম” (درهم) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আর স্বর্ণের জন্য “জাহাবুন” (ذهبن من جبل) শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
সুতরাং এটা তেল, গ্যাস হবে না স্বাভাবিক। কারণ রসুলুল্লাহ (সাঃ) সহজভাবে বর্ণনা করতেন যেন উম্মত বুঝতে পারে। আর অপেক্ষা করুন ইউক্রেনের যুদ্ধ ও দ্বন্দ্ব শামে স্হানাতরিত হবে এবং এটা আরও বড় হবে।
আর আরবে ছোট টিলাযুক্ত পাহাড়কেও জাবাল বলে, তাদের পাহাড়গুলো ভারতবর্ষের মতো বিশালও হয় না। তাই এভারেস্টের মত পাহাড় উঠবে এই ধারণা ভুল হবে, আর পাহাড়ের বেশিরভাগ অংশই থাকে জমিনে। সুতরাং উপরে যতটুকু স্বর্ণ দেখা যাবে হয়তো ভূ-অভ্যন্তরে আরও বেশি থাকবে।
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, চতূর্থ ফিৎনা হচ্ছে, অন্ধকার অন্ধত্বপূর্ন ফিৎনা। যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে উঠবে, আরব অনারবের কোনো ঘর বাকি থাকবেনা, যেখানে উক্ত ফিৎনা প্রবেশ করবেনা? এই ফিতনা দ্বারা মুসলমানেরা লাঞ্ছিত অপদস্ত হতে থাকবে।
ফিৎনাটি শাম দেশে (সিরিয়ায়) চক্কর দিতে থাকলেও রাত্রিযাপন করবে ইরাকে। তার হাত পা দ্বারা আরব ভুখন্ডের ভিতরে বিচরন করতে থাকবে।
উক্ত ফিৎনা এ উম্মতের সাথে চামড়ার সাথে চামড়া মিশ্রিত হওয়ার ন্যায় মিশে যাবে, তখন বালা মুসিবত এত ব্যাপক ও মারাত্নক আকার ধারন করবে যা দ্বারা মানুষ ভালো খারাপ নির্ণয় করতে পারবেনা।
ঐ মুহুর্তে কেউ উক্ত ফিৎনা থামানোর সাহসও রাখবেনা। একদিকে একটু শান্তির সুবাতাস বইলেও অন্যদিকে ফিৎনা তীব্র আকার ধারন করবে। সকালবেলা কেউ মুসলমান থাকলেও সন্ধ্যা হতে হতে সে কাফের হয়ে যাবে। উক্ত ফিৎনা থেকে কেউ বাঁচতে পারবেনা।।
কিন্তু শুধু ঐ লোক বাঁচতে পারে, যে সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায় করুন সুরে আকুতি জানাতে থাকে। সেটা প্রায় ১২ বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে এবং এক পর্যায়ে সকলের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
ইতোমধ্যে ফুরাত নদীতে স্বর্ণের একটি ব্রিজ (পাহাড়) প্রকাশ পাবে। যা দখল করার জন্য সকলে যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে এবং প্রতি নয় জনের সাতজন মারা পড়বে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৭৬ ]
** হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন চতূর্থ ফিতনা বা যুদ্ধ ১২ বছর স্থায়ী হবে। যখন অবসান হবে তখন অবসান হবে। ( অর্থাৎ ১২ বছর সময় শেষ হবে তারপর) স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফুরাতকে খুলে দেওয়া হবে। অতপর তার উপর প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৭০ ]
সুহায়ল (রহঃ) থেকে এ সূত্র থেকে বর্ণিতঃ
অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এতে বর্ধিত বর্ণনা করেছেন যে, আমার পিতা বলেছেন, যদি তোমরা ঐ পাহাড় দেখো তবে তোমরা এর নিকটেও যেও না। (ই.ফা. ৭০০৯, ই.সে. ৭০৬৬)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭১৬৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
তারমানে বুঝা যায়,স্বর্ণের পাহাড় উঠবে সিরিয়া যুদ্ধের ১২/১৮,(আরেক হাদীসে ১৮) বছর পর এর আগে নয়। আর এই স্বর্ণের পাহাড়ের নিকট যেতে মুমিনদের মানা করা হয়েছে, ফলে এই যুদ্ধে কোন মুমিনরা অংশ্রগ্রহণ করবে না। প্রকৃতপক্ষে এই পাহাড় কাফের, মুনাফেকের জন্য ফেতনা। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের দুর্বল করে মুসলিমদের সাহায্য করবেন। মুনাফেক ও মুমিন চেনা তখন সহজ হবে।
যেমন – খলিফা মাহাদী আসার পূর্বে সিরিয়ার হারাস্তায় ১ লাখ খাসাফ জাতির (রাশিয়া) বাহিনী ও মদীনার বায়দা নামক স্হানে ৭০ হাজার সুফিয়ানীর বাহিনী ধসিয়ে মুসলিমদের রক্ষা করবেন।
হাফসাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, একটি বাহিনী এ কা’বা গৃহের বিপক্ষে যুদ্ধ করার ইচ্ছা করবে। তারপর তারা যখন “বাইদা” নামক এক ময়দানে পদার্পণ করবে তখন তাদের মাঝের অংশটি ভূমিতে ধ্বসে যাবে। এ সময় অগ্রভাগের সৈন্যরা পশ্চাতের সৈন্যদেরকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকতে থাকবে। অতঃপর প্রত্যেকেই ভূমিতে ধ্বসে যাবে। বেঁচে যাওয়া একটি ব্যক্তি ছাড়া তাদের কেউ আর বাকী থাকবে না। সে-ই তাদের সম্বন্ধে অন্যদেরকে খবর দিবে। এ কথা শুনে এক লোক বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি হাফসাহ্ (রাঃ)-এর উপর মিথ্যারোপ করনি এবং হাফসাহ্ (রাঃ)-এর সম্বন্ধেও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনিও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর মিথ্যারোপ করেননি। (ই.ফা. ৬৯৭৮, ই.সে. ৭০৩৫)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭১৩৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
ততদিন পর্যন্ত ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে না, যতদিন না দামেস্কের নিকটবর্তী হারাস্তা নামক জায়গা ভূমিধ্বসের কারণে ধ্বংস না হয়। (ফাওয়াহিদ আল ফিকহ্ আল মাহদী আল মুনতাজার, লেখকঃ মারি বিন ইউসুফ কারামী হাম্বলী)।
হযরত আবু জাফর আল বাকের (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমিরুল মুমিনীন (হযরত আলী রাঃ) বলেছেন, যখন শামে (সিরিয়াতে) দুটি বৃহৎ দলের মধ্যে মতানৈক্য দেবে এবং এটি শেষ হবে না যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা একটি নিদর্শন না প্রকাশ করেন?
তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, হে আমিরুল মুমিনীন সেই নিদর্শন টা কি?
উত্তরে তিনি বলেন, শামে (সিরিয়াতে) একটি ভূমিকম্প দেখা দিবে যার কারণে এক লক্ষ লোক ধ্বংস হবে। যার (হারাস্তা ভূমিধ্বসের) মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের উপর রহমত বর্ষন করবেন, আর কাফেরদের উপর আযাব প্রদান করবেন।
যখন এটি ঘটবে, তখন পশ্চিম দিক থেকে ধূসর বর্নের ঘোড়া সহকারে হলুদ পতাকাবাহী দল এগিয়ে আসবে। তারা ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসলীলা চালাবে।
তখন তুমি দেখবে দামেস্কের একটি গ্রাম যাকে হারাস্তা বলা হয়, সেটি ধ্বসে পরবে। তারপর দামেস্কের পার্শ্ববর্তী শুষ্ক উপত্যকা ওয়াদিউল ইয়াবেস থেকে ওয়াকিলাতুল আকবাদ (সুফিয়ানী) বেরিয়ে আসবে। তারপর তুমি মাহদীর আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা কর। (আল ফিতান)