সুবিচার, নিরাপত্তা, বহুবিবাহ ও পরকীয়া

আল্লাহ বলেন- “আর যদি আশংকা কর তোমরা ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন বা চার আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি। (সুরা নিসা-৩)। রসুলুল্লাহ (সাঃ) একাধিক বিয়ে করেন এটা সত্য কিন্তু আজ এমনভাবে এটা প্রচার করা হচ্ছে রসুলের (সাঃ) এই সুন্নত পালনই অতি গুরুত্বপূর্ণ বাকীগুলোর কথা মনে আসে না। রসুল (সাঃ) বহু জেহাদে নেতৃত্ব দেন স্ত্রীগণও তার সাথে যান, আমাদের জীবনে একবারও জেহাদ আসে না। রসুল (সাঃ) ইয়াসরিবের নাম পরিবর্তন করে মদীনা তাইয়েবা রাখেন আর আজও মসজিদে শিরকী নাম বিদ্যমান তা পরিবর্তন করতে পারলাম না। একের অধিক বিয়ের ক্ষেত্রে সুবিচার রাখা ফরজ-

১. সকল স্ত্রীর সমান অধিকার থাকতে হবে বাসস্থান, খাবার সম্মানের ক্ষেত্রে।

২. রসুলের (সাঃ) স্ত্রীগণ ও বংশ অপরিচিত ছিল না। তিনি বিবাহের পর ওয়ালিমার (দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো) ব্যবস্হা করেন, এটা তাদের অধিকার (বুখারী, মুসলিম- বিবাহ অধ্যায়)। ফলে সামাজিকভাবে স্ত্রীগণকে উম্মত চিনত। এখন ১ম স্ত্রীর ক্ষেত্রে বিশাল আকারে ওয়ালিমা করলেন আর সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও ২য় স্ত্রীর ক্ষেত্রে করলেন না, অবশ্যই তার অধিকার বঞ্চিত করলেন।

৩. রসুলের (সাঃ) স্ত্রীগণ তার হতে বহু হাদীস শিখেন উম্মতকে জানান, স্ত্রীগণকে দ্বীনের শিক্ষা দিতে হবে।

৪. স্ত্রীদের পর্দার ব্যবস্হা করতে হবে, রসুলের (সাঃ) স্ত্রীগণ মাহরাম পুরুষ ছাড়া বের হতেন না। তারা ছিলেন উম্মতের মা এবং দারিদ্র্যতা, কষ্টে জীবন কাটান। রসুল (সাঃ) নিজে খেজুর পাতার ছাটায়ে শুতেন। এমনও বহুদিন ছিল রসুলের চুলায় আগুন জ্বলে নি। রসুল (সাঃ) ক্ষুধায় পেটে পাথর বেধে পরিখা খনন করে, দুঃখ-কষ্ট দারিদ্র্যতা ও চরম নির্যাতনে সত্য দ্বীন প্রকাশে ছিলেন অটল। নবী ও রসুলগণ দ্বীন প্রচারের কারণে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হন আর বর্তমানে হাততালি ও টাকা মেলে অথচ ইসলাম ও কুরআন আজও একই, সমাজব্যবস্হা আজও জাহেলিয়াতে। একটা মূল ব্যাপার হল রসুল (সাঃ) ও সাহাবীরা একাধিক বিয়ে করেছেন বেশিরভাগই মদীনা জীবনে মক্কাজীবনে নয়। মক্কাজীবনে তাদের তো জীবনের নিরাপত্তাই ছিল না। নির্যাতন, অভাব, অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। কাফেররা তাদের কন্যা দিবে কি উল্টো রসুলের (সাঃ) দুই কন্যাকে তালাক দিয়ে দেন ইসলামের সাথে শত্রুতা প্রদর্শন করে এবং সুমাইয়াকে (রাঃ) প্রকাশ্যে যৌনাঙ্গে বর্শা নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। মদীনা রাষ্ট্রে মুসলিমদের নিরাপদ ভূখন্ড হল- তখন কোন মুসলিম নারীর উপর আঘাত তো দূরের কথা শুধু একজন ইহুদির ষড়যন্ত্রের কারণে বাজারে এক মুসলিম নারীর পোষাক খুলে যায়, তা নিয়ে সংঘাত হয়। শেষ পর্যন্ত রসুল (সাঃ) সহ সাহাবীরা ওদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। মদীনা হতে ওদের বের করে দেন। এখন সঠিক ইসলাম মেনে ও প্রচার করে দেখুন আপনার ও আমার অবস্হা হবে মক্কার জীবনের মত একজন স্ত্রীর নিরাপত্তা দেওয়াই কষ্টকর হবে। আর কয়জন আপনাকে মেয়ে দিবে? কাফের, ইহুদির দালাল, জঙ্গি অপবাদ দিয়ে অধিকাংশ লোকই পাত্রী দিবে না। সঠিক দাওয়াত দেওয়ার ফলে হয়তো হিজরত ও জেহাদ ফরজ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে মক্কা জীবনের মত একজন নারীই উত্তম। সাহাবীরা সামর্থ থাকাস্বত্বেও শুধু নিজে একাধিক বিয়ে করতেন না বরং গরীব সাহাবী ও দাস-দাসীদের বিবাহের ব্যবস্হা ও সাহায্য করতেন। আজও হাজার যুবক বিয়েহীন বেকার ঘুরে কে তাদের সাহায্য করছে?

এবার আসি এক বোন অনুরোধ করছে জানতে- তার স্বামী পরকীয়া করে ধরা পড়ে, তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে করে। এটা জায়েজ কিনা?? এবং তাকে শরীয়তের দলিল দেখিয়ে বাধ্য করে ২য় স্ত্রীর সাথে একই গৃহে থাকতে। বোন দুঃখজনক হল, শরীয়তে বিবাহিত পরকীয়ার শাস্তি দেওয়া আছে আর অবিবাহিত ব্যাভিচারের শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত। বর্তমানে ইসলামী আইন কায়েম নেই তাই সে শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। সকল ফিকাহ একমত প্রেম করে বিবাহ করলে বিয়ে জায়েজ হবে যদি মেয়ের ওয়ালীমা দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রেম হারাম তার জন্য যে গোনাহ করেছে তওবা করলে এটা আল্লাহর ইখতিয়ার তিনি ক্ষমা করবেন কিনা। তেমনি ওদের পরকীয়া অবৈধ ও কবীরা গোনাহ, আল্লাহ হয়তো এর জন্য শাস্তি দিবেন কিন্তু বিয়েটা গ্রহণযোগ্য। এখন সিদ্ধান্ত আপনার- আপনার পরিস্থিতি আপনি ভালো জানেন। হয় ক্ষমা করে সংসার করবেন না হয় আলেম, মুফতিদের সাথে আলোচনা করে কার্যকর সিদ্ধান্তে আসুন। আর এসব ঘটনার অন্যতম কারণ মেয়েদের প্রকৃত দেনমোহর দেওয়া হয় না। আল্লাহ বলেন-

الزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ ۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ

“ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে।” (সূরা নুর, ৩)।

এই আয়াতের অনেকে ভুল ব্যাখা করে যে- মুমিন নর/নারীর জীবনে মুমিন স্বামী/স্ত্রী পায়। বরং এখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুমিনরা যেন মুমিনদের বিয়ে করে, ব্যাভিচারীকে নয়। এই আয়াতের ব্যাখায় আলেমগণ বলেন- মুমিন কখনও অশ্লীলতা পছন্দ করবে না সুতরাং ব্যাভিচারীকে পছন্দ করবে না সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ফেরাউনের স্ত্রী ছিল আছিয়া (আঃ) যিনি বিশ্ব ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম নারীদের একজন। যার কাছে মুসা (আঃ) বেড়ে উঠেন। এটা যেমন ছিল তার জীবনে পরীক্ষা, তেমনি সৌভাগ্য কারণ তিনি মুসা (আঃ) এর মত অন্যতম শ্রেষ্ঠ রসুলের মায়ের ভূমিকা পালন করেন এবং শত কষ্টেও দ্বীনে অটল থেকে জান্নাতের উচ্চমর্যাদা লাভ করেন। তেমনি মনে করুন এটা আপনার জীবনের পরীক্ষা। নিজ সন্তানকে মুজাহিদ, মুফাসসির হিসেবে গড়ে তুলেন যেন ইসলামী সমাজ গড়ে নারীদের উপর নির্যাতনের অবসান ঘটাতে পারে এবং আপনার জান্নাতে উত্তম স্হান পেতে সহায়ক হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *