সুন্নাতে ঐশ্বর্য পাক আমাদের কুরবানী

আল্লাহ সকল প্রকার শিরক, কুফর, বিদআত মুক্ত হয়ে হালাল আয়ে কুরবানির তৌফিক দিক আমাদের। কিছু বছর আগের ঘটনা – রেললাইনের পাশে দাড়িয়ে ছিলাম, হঠাৎ শুনলাম একজন বৃদ্ধা মহিলার আহাজারি। কিছু লোক ভিড় করল, কিছু মানুষ হাসছিল, আমিও দেখতে গেলাম।

দেখলাম- রেললাইনের পাশে এক অসহায় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা মহিলা হতাশ ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে আহাজারি করছে। দীর্ঘক্ষন ধরে তারা আশেপাশের কাগজ, পাতা সংগ্রহ করে গোশত তরকারির রান্না করেছে, খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিবে এমন সময় দেখলো কিভাবে যেন পাশ্ববর্তী নর্দমা হতে একটা সাপ ভিতরে ঢুকে গেছে।

বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা মহিলা হতভম্ব বুঝছে না কি করবে। হয়তো বহুদিন বা মাস পরে একটু ভালো খাবার স্বপ্ন এভাবে শেষ মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল। তারা বুঝছে না কি করবে তরকারিটা খাবে না ফেলে দিবে।

আহ!! একপাশে দাড়িয়ে ভাবছি!! আমরা কত অকৃতজ্ঞ, কতভাবে খাবার অপচয় করি!! অথচ এক টুকরো গোশত ও সাদা ভাত বহুমানুষের বহুদিনের স্বপ্ন।

আসুন কুরবানির পশুর গোশত দিয়ে তাদের সে স্বপ্ন পূরন করি। আমাদের কাছে দানটা হয়তো ক্ষুদ্র, কিন্তু ওদের কাছে তা অনেক বড় প্রাপ্তি! আর দানের বিনিময়ে ইনশাআল্লাহ পাবেন জান্নাতের সমৃদ্ধি!

আর আমাদের চিন্তাধারা একটু পরিবর্তন করলে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়বে। রাস্তার পাশের বিলাসী দালান দেখে ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখে অন্তরে হাহাকার তৈরি না করে বরং বিলাসী দালানের পাশের বস্তি, ফুটপাতে অসহায় দেখুন- আপনার কুরবানির পশুর গোশত আহারে তাদের একটা দিন অন্তত আনন্দে কাটুক!

সাধারণত কুরবানির সময় বিভিন্ন জায়গা হতে গরিবরা ভীড় করে বড় শহরগুলোতে। সবাইকে দানের সামর্থ্য আমাদের হয়তো থাকে না। অবহেলা ও অপমানসূচক আচরন না করে বুঝিয়ে বলুন- ওদের দিতে না পারায় আপনিও ব্যর্থিত এবং দোয়া করেছেন আল্লাহ যেন উত্তম স্হান হতে রিযিক দেন। আর সবচেয়ে বেশি খেয়াল করুন- এমন আত্মসম্মানের অধিকারী ব্যক্তিদের যাদের হয়তো কুরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই কিন্তু লজ্জায় চাইতেও পারে না!

আপনার, আমার পশুর কুরবানির রান্না করা প্রথম খাবার ওদের সাথে একসাথে হোক। ওদের শিশুদের কুরবানি পশু দেখতে ও স্পর্শ করতে দেন – যেন ওদের মনে হয় এটাতে ওদেরও অধিকার আছে! ওদের শিশুদের নিজের শিশুর মত ভাবুন- যাদের দুঃখ সহ্য করতে পারেন না! ভয় করুন! আমাদের কোন অহংকার বা অবহেলার কারনে ওদের অশ্রু ঝরলে আল্লাহ যদি অসন্তুষ্ট হয়ে যান।

ওদের মুখের হাসি ফুটিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। যেন শিশুকাল হতে বাচ্চারা বুঝতে শিখে- মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই। সুখের ভাগীদার সবাই আর কাউকে দুঃখে রেখে অন্যের অন্তরে সুখ জাগতে পারে না। দেশের পরিস্থিতি দেখুন- আপনার ফ্রীজে খাবার ভর্তি রইবে অথচ আশেপাশের গরিব, প্রতিবেশী ক্ষুধায় কষ্ট করবে এমনটা সাহাবীদের যুগে কল্পনা করা যেত!?

হজরত সালামা ইবনে আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে লোক কুরবানি করেছে, সে যেন তৃতীয় দিনে এমন অবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কুরবানির গোশতের কিছু থেকে যায়।

পরবর্তী বছর সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি তেমন করব, যেমন গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন-‘তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ। কারণ গত বছর মানুষের মধ্যে ছিল অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাতে সহযোগিতা কর।’ (বুখারি, মুসলিম)।

তাই যখন অভাব অনটন বিদ্যমান চারপাশে তিনদিনের বেশি ধরে না রাখাটা উত্তম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *