রসুল (সাঃ) ও সাহাবীগণ (রাঃ) আল্লাহকে ভালোবাসতেন আর আমরা ভালোবাসার দাবি করি – আসুন শুধু খেলা নিয়ে মিলিয়ে দেখি দুই ভালোবাসার কত পার্থক্য!!
অনেক মানুষ পাবেন যতজন খেলোয়াড়দের নাম জানে, তাদের রেকর্ড জীবনকাহিনী জানে কিন্তু ততজন রসুল, নবী, সাহাবীদের অবদান ও জীবনকাহিনী জানে না!!
খেলার নিয়মকানুন সম্পর্কে একেকজন যেন বিশেষজ্ঞ!! কোনটা অফসাইড ও কি কি কারনে হলুদ কার্ড ও লাল কার্ড প্রাপ্ত হয়ে মাঠ হতে বাহির হয়ে যেতে হয়, দল হতে বাদ পড়ে, সবই মুখস্থ।
অথচ ইসলামের নিয়মনীতিগুলো অজানা – কি কি পাপ বা কাজ করলে ঈমান ভঙ্গ হয়, ইসলামের গন্ডি হতে বের হয়ে যায় তাই অজানা। কোন রাত তাহাজ্জুদের জন্য জেগেছে কি!! কত ফজর ঘুমের ঘোরে সময় শেষ হয়েছে অথচ খেলার জন্য কত আগ্রহে রাতের পর রাত জাগা হয়।
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্র বান্দা ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে সালাত ত্যাগ করা। [সহিহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ঈমান অধ্যায়, হাদিস নং-১৫৪]
আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন- আমাদের ও কাফেরদের মাঝে চুক্তি হল সালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি তা ত্যাগ করবে সে কাফির হয়ে যাবে। (তিরমিজিঃ ২৬২১, ইবনে মাজাহঃ ১০৭৯)
কেউ অনিইচ্ছাকৃত সালাত ছাড়লে বা নিয়ত ছিল হয়তো ফজরে উঠতে পারেনি এমন হলে কাউকে কাফের, মুনাফেক ভাবা যাবে না। তবে দীর্ঘদিন কেউ সালাত না পড়লে আলেমদের অভিমত সে ইসলামের গন্ডি হতে বের হয়ে যায়।
আল কুরআনে বলা হয়েছে,
“অতঃপর এমন এক সময় আসল যখন লোকেরা সালাত ছেড়ে দিল, আর লোভ-লালসায় মত্ত হয়ে গেল। ফলে তারা শীঘ্রই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হয়ে যাবে। তবে কিছু লোক এ থেকে রেহাই পাবে, যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে।” (সূরা ১৯; মারইয়াম ৫৯-৬০)।
পূর্ববর্তী জাতি সালাত ছেড়ে ধ্বংস হয়েছিল আমরা কি সে পথে হাটছি!?
আল কুরআনে আরো বলা হয়েছে,
“(পরকালে জান্নাতবাসীরা ঠাট্টার ভাষায় দোযখবাসীদের জিজ্ঞেস করবে) কী অপরাধ তোমাদেরকে আজ আগুনে ঢুকিয়েছে? উত্তরে তারা বলবে-আমরা সালাত পড়তাম না, আর মিসকীনকে খাবার দিতাম না।” (সূরা ৭৪; মুদ্দাসছির ৪২-৪৪)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
“তারা ঈমান আনেনি, সালাতও পড়েনি। বরং উল্টো তারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং (ঈমান থেকে) অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অহংকারের সাথে বাড়ি ফিরে গিয়েছে, পরিবার পরিজনের কাছে। তোমার জন্য দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ! আবারও বলছি, তোমার জন্য দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ! মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, কোন প্রকার হিসাব-নিকাশ ছাড়া) এমনিই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে?” (সূরা ৭৫; কিয়ামাহ ৩১-৩৬)
এছাড়াও দ্বীনী কাজ ব্যতীত রাত জাগা নিষেধ।
আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাযের আগে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন।
ফুটনোটঃ
(সহীহুল বুখারী ৫৪১, ৫৪৭, ৫৬৮, ৫৯৯, ৭৭১, মুসলিম ৬৪৭, নাসায়ী ৪৯৫, ৫৩০, ৯৪৪, আবূ দাউদ ৩৯৮, ইবনু মাজাহ ৬৭৪, দারেমী ১৩০০)
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৭৫৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
আচ্ছা দলের পরাজয় বা প্রিয় খেলোয়াড়ের ইনজুরিতে যতটা দুঃখ-বেদনা অনুভূত হয় ততটা অনুভূতি কি কেউ ইসলাম, রসুল (সাঃ) ও সাহাবীদের নিয়ে উপহাস করলে হয়!? মুসলিমদের দুঃখ, বেদনায় কি ততটা ব্যাথা জাগে অন্তরে!?
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মুমিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোনো একটা অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে।’ (বুখারি, হাদিস নং- ৬০১১)
প্রিয়দলের বিজয়ের জন্য আকুল আকাংক্ষা থাকে হয়তো প্রার্থনা করেন মনের সকল আবেগ দিয়ে ঠিক তেমনি ইসলামের বিজয়ের (মুজাহিদদের) জন্য কি দোয়া করেন?
গভীর রাতে আনন্দ-উল্লাসে যখন চিৎকার করে উঠেন একটু ভেবেছেন অসুস্থ, বয়স্ক, শিশু প্রতিবেশীর কষ্টের জন্য কেয়ামতে যদি আপনাদের দায়ী করা হয়!!
‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রকৃত মুসলিম সে, যার মুখ ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির সে, যে আল্লাহ যার থেকে নিষেধ করেছেন, তা ত্যাগ করে।” আর আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, “যার মুখ ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।”
সহীহ – মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।
ব্যাখ্যা
প্রকৃত মুসলিম সে, যার মুখ থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। সে তাদেরেকে গালি দেয় না, অভিশাপ প্রদান করে না, কারো গীবত করে না, তাদের মধ্যে কোনো প্রকার অপকর্ম ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে না। তারা তার হাত থেকে নিরাপদ থাকে, সে তাদের ওপর সীমালঙ্ঘন করে না, অন্যায়ভাবে তাদের সম্পদ হনন করা বা এ ধরনের কোনো কাজ সে করে না। আর মুহাজির তো সে, যে আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা ছেড়ে দেয়।
আসলে সাহাবীরা (রাঃ) সবকিছুর উর্ধ্বে আল্লাহকে ভালোবাসতেন তাই দীর্ঘদিন মদ পান করার অভ্যাস থাকলেও মদ হারাম হয়েছে তা শোনার সাথে সাথে ছাড়তে দ্বিধা করেন নি!!
আর আমাদের ভালোবাসা রোজ হেরে যায় দুনিয়ার ভালো লাগার কাছে!! পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন,
‘আর যারা ঈমানদার আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা অনেক বেশি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৫।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
‘বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
আল্লাহকে ভালোবাসার অর্থ হল রসুলের (সাঃ) সুন্নাহর অনুসরণ করা, ইসলাম জেনে-বুঝে মেনে চলা।
ইয়া’কুব ইব্ন ইবরাহীম ও আদম (রহঃ) …. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ তোমাদের কেউ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষন না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে বেশী প্রিয় হই। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি | অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান)