সাহাবীদের জীবনী পর্ব-১ (মহিলা সাহাবিদের আত্মত্যাগ)

উম্মাহর মহিলা সাহাবীরা (রাঃ) সবকিছুর চেয়ে আল্লাহ ও তার রসুলকে (সাঃ) ভালোবাসতেন। উহুদ যুদ্ধ মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা যেখানে বহু সাহাবী শহীদ হন ও রসুলুল্লাহ (সা) আহত হন।

১ম ঘটনা

ইবন ইসহাক বলেন, সাফিয়্যা বিনত আবদুল মুত্তালিব হযরত হামযার (রা) লাশ দেখতে আসেন। হযরত হামযা (রা) ছিলেন তার সহোদর ভাই। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর পুত্র যুবায়র ইবন আওয়ামকে বললেন, তুমি তোমার মায়ের নিকট যাও। তাঁকে থামাও, যেন তাঁর ভাইয়ের হৃদয়বিদারক এই লাশের দৃশ্য তাঁকে দেখতে না হয়।

যুবায়র তাঁর মাকে বললেন, আম্মা! রাসূলুল্লাহ্ (সা) আপনাকে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বললেন, কেন? আমি তো জেনেছি যে, আমার ভাইয়ের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে, তাতে কী? তাতো হয়েছে আল্লাহর পথে! আমার জন্য অধিকতর খুশীর ব্যাপার আর কী হতে পারে? আমি অবশ্য‍ই ধৈর্যধারণ করব এবং ছওয়াবের আশায় থাকব ইনশাআল্লাহ্।

যুবায়র (রা) রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট এসে এই সংবাদ জানালেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন: তাঁকে আসতে দাও! সাফিয়্যা (রা) এলেন। হামযা (রা)-কে দেখলেন। তাঁর জন্যে দু’আ করলেন, শোক প্রকাশ করলেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।

আহ কেমন ছিল ঈমান!! কেমন ছিল সবর!!

২য় ঘটনা

ইমাম বুখারী অন্য একস্থানে, ইমাম মুসলিম, আবূ দাউদ ও নাসাঈ (র) এরূপ হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন ইয়াযীদ ইব্‌ন আবূ হাবীব থেকে। উমাভী বলেন, আমার পিতা হযরত আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) উহুদের যুদ্ধে যাবার পর সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আমরা সাহরীর সময় পথে বের হয়ে পড়ি। ইতোমধ্যে ফজরের সময় হয়ে যায় । আমরা জনৈক পাথর বহনকারী লোককে দেখলাম সে দৌড়াচ্ছে আর বলছেঃ

হে হামল ইব্‌ন সা’দানা! তুমি একটু অপেক্ষা কর, তারপর প্রচণ্ড যুদ্ধ ক্ষেত্রে উপস্থিত হও। পরে আমরা ভালভাবে তাকিয়ে দেখলাম যে, তিনি হলেন উসায়দ ইবন হুযায়র। এরপর আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। হঠাৎ দেখলাম একটি উট এল। উটের পিঠে একজন মহিলা । দুপাশে দুটো বোঝা।

হযরত আইশা (রা) বলেন, আমরা মহিলাটির নিকট গেলাম। তখন দেখতে পাই যে, তিনি আমর ইবন জামূহ এর স্ত্রী। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, সংবাদ কী? তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে রক্ষা করেছেন। কতক মু’মিন ব্যক্তিকে শহীদরূপে কবুল করেছেন। এবং কাফিরদেরকে মনের জ্বালাসহ বিফল মনোরোথে ফিরে যেতে বাধ্য করেছেন। যুদ্ধে মু’মিনদের জন্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী। মহিলাটি তার উটকে বসার নির্দেশ দিয়ে নিজে উট থেকে নেমে পড়লেন। আমরা তাঁর বোঝা দুটোর দিকে ইঙ্গিত করে বললাম, এগুলো কী ? তিনি বললেন, একটি আমার স্বামীর লাশ আর একটি আমার ভাইয়ের লাশ।

৩য় ঘটনা

ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল ওয়াহিদ সা’দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বানু দীনার গোত্রের এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। মহিলার স্বামী, ভাই ও পিতা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথী হয়ে যুদ্ধ করতে করতে উহুদ ময়দানে শহীদ হয়েছিলেন। ওদের মৃত্যুর সংবাদ তাঁকে শোনানোর পর তিনি বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) কেমন আছেন? লোকজন বলল, হে অমুকের মা! আপনি যেমন কামনা করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ্ তিনি ভাল আছেন। তিনি বললেন, তাঁকে একটু দেখান, ‘আমি তাঁকে এক নজর দেখে নিই! রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ইশারা করে তাঁকে দেখানো হল। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে দেখে তিনি বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনাকে সুস্থ দেখার পর সকল বিপদ আমার নিকট তুচ্ছ।

(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ৪র্থ খন্ড, উহুদ যুদ্ধ)

আহ! আমাদের এমন সময় ছিল উম্মাহর মায়েরা স্বপ্ন দেখতেন তাদের বাবা, ভাই, সন্তান আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হবে এটাই ছিল তাদের বিজয়। ফলে তারা পেয়েছিলেন রসুল (সাঃ) ও সাহাবিদের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ।

ইসলাম ও রসুল (সাঃ) নিয়ে ছিল তাদের মূলত সুখ, দুঃখ পেরেশানি। আজ এমন মা আছে যারা সন্তানকে দুনিয়ায় সমৃদ্ধ দেখতে সাগর পথে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ পাঠাতে আগ্রহী থাকে বা বড় ক্রীড়াবীদ, তারকা বানানোর জন্য শিশু বয়সে বহু কষ্ট ও ঝুঁকি নেয়। অথচ এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে যে সন্তান, স্বামী হয়তো রসুলুল্লাহর (সা) সুন্নাহ মানতে চাইছে (দাড়ি রাখা, হারাম বর্জন) নারীরা বাঁধা হয়ে উঠছে।

যদি সত্যি সন্তান, ভাই, স্বামীদের কল্যান চান- রসুলের (সাঃ) মহিলা সাহাবিদের মত আল্লাহ, তার রসুল (সাঃ) ও দ্বীনকে ভালোবাসুন তাহলে আজীবন পরিবার নিয়ে জান্নাতে থাকতে পারবেন নয়তো পথভ্রষ্ট হবেন।

আল্লাহ বলেন-

বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। (সুরা তওবা-২৪)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *