দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ – এই মিথ্যা, জাল কথা মুসলিমদের কাছে জনপ্রিয়। অথচ মুসলিমদের ভালোবাসা সকল দেশের সকল মুসলিমের জন্য দায়িত্ব। দেশপ্রেম নামক শাসকদের স্বার্থ ও ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে আফগান-পাক দ্বন্দ্ব, তুর্কি-কুর্দী, সৌদি-ইয়েমেন মুসলিমরা পরস্পর লড়ছে।
অথচ হাদীসে বর্নিত আছে,
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্র থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত, যে ব্যক্তি (‘আমীরের) আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং ‘জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্র প্রীতির দিকে আহ্বান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন ব্যাপার থাকে না) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করে। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের উপর আক্রমণ করে, আমার উম্মাতের ভালমন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করে।
মু’মিনকেও রেহাই দেয় না এবং যার সাথে সে ও’য়াদাবদ্ধ হয় তার ও’য়াদাও রক্ষা করে না, সে আমার কেউ নয়, আমিও তার কেউ নই। (ই.ফা. ৪৬৩৩, ই.সে. ৪৬৩৫)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৬৮০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
আরও বর্নিত আছে-
সা’ঈদ ইব্নু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন একবার ‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) আমাদের নিকট আসলেন। আমরা আশা করেছিলাম যে, তিনি আমাদের একটি উত্তম হাদীস বর্ণনা করবেন। এক ব্যক্তি তাঁর দিকে আমাদের চেয়ে এগিয়ে বলল, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! ফিত্নার সময় যুদ্ধ করা সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।
কেননা, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ “তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না ফিত্নার অবসান ঘটে” – (সূরাহ আল-বাক্কারাহ ২/১৯৩)। তখন তিনি বললেন, তোমার মা তোমার জন্য বিলাপ করুক। ফিত্না কাকে বলে জান কি?
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো যুদ্ধ করতেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। কেননা, তাদের শিরকের মধ্যে থাকাটাই আসলে ফিত্না।। কিন্তু তা তোমাদের রাজ্য নিয়ে লড়াইয়ের মত ছিল না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১৪)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭০৯৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
আজ দেশপ্রেমের নামে মূলত প্রত্যেক দেশে আলাদা শাসক, আলাদা সংবিধান, আলাদা পতাকা, আলাদা জাতীর আর্দশ, আলাদা জাতীর পিতা, জাতীয় সংস্কৃতি ও চেতনাকে বুঝানো হয়। অথচ মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হতো একই রসুলের আদর্শ অনুসরণ করে- একই তাওহীদের পতাকাতলে, কুরআনের সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য।
একটু ভাবুন, দেশপ্রেম যদি ঈমানের অংশ হয় তাহলে দিন দিন আমাদের ঈমানের পরিধি কমছে। কারণ পুরো ভারতবর্ষ যখন এক শাসকের অধীনে ছিল তখন আমাদের পুরো ভারতবর্ষকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ ছিল। এরপর খন্ডিত হয়ে পাকিস্তান ও বর্তমানে বাংলাদেশ হল। তাই এখন শুধু এইটুকু ভূখন্ডকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ।
অথচ ইসলামের নিয়ম হল এই – যেখানে ইসলামী নিয়মনীতি, মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তার দ্বীন পালন করতে পারবে সেদেশেই সে থাকবে অথবা পাপ, জুলুম থেকে বাচার জন্য হিজরত করবে। নবী-রসুল, সাহাবীগণ যা করেছিলেন।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের উপর এমন এক যুগ আসছে, যখন মুসলিমের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ হবে ভেঁড়া-ছাগল; তাই নিয়ে পর্বত-শিখরে ও পানির জায়গাতে চলে যাবে; ফিতনা থেকে নিজ দ্বীন নিয়ে পলায়ন করবে। (বুখারী -৩৬০০)
বলা হয়, অন্য দেশের মুসলিমদের আর্তনাদ ওদের সমস্যা, ওরা হল আমাদের উপর বোঝা!! অনেকে বলবে ওরা অনেক পাপে লিপ্ত!! কিন্তু সারাবিশ্বে সবচেয়ে বড় পাপ হল শিরক।
শুধু এদেশে জন্মালেই সে যত বড় পাপীই হোক তার কল্যাণ চাওয়া দেশপ্রেম নামক ঈমানের অংশ কিন্তু অন্যদেশে জন্মানো মুমিন অসহায় হলেও এদেশে থাকার তার অধিকার নেই!!
ঠিক একই আচরন করা হচ্ছে আরব দেশগুলোতে আমাদের অসহায় মুসলিমদের সাথে। আমাদের প্রবাসীগণ এসবদেশে কাজের জন্য যায়। তাদেরকে নিজদেশের মানুষের মত মুসলিম ভাই বিবেচনা করা হয় না। আকামা নামক অর্থদন্ড চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ ঐসব দেশে বহু পাপী, নিকৃষ্ট আকীদা নিয়েও আরামে বসবাস করছে। ওদের নারীদের অন্য দেশের মুসলিমদের সাথে বিয়ে দিচ্ছে না।
অথচ আল্লাহ বলেন –
“মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।”
সুরা হুজুরত -১০
এ আয়াতটি দুনিয়ার সমস্ত মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন পাওয়া যায় না যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। এটাও এ আয়াতের বরকতে সাধিত হয়েছে।
এ নির্দেশের দাবী ও গুরুত্বসমূহ কি, বহুসংখ্যক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বর্ণনা করেছেন। ঐ সব হাদীসের আলোকে এ আয়াতের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোধগম্য হতে পারে। জারীর ইবন আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে তিনটি বিষয়ে “বাই’আত” নিয়েছেন। এক, সালাত কায়েম করবো। দুই, যাকাত আদায় করতে থাকবো। তিন, প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করবো।” [বুখারী: ৫৫]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকৰ্ম আর নাই। [মুসনাদে আহমাদ: ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬]।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৪০]।
অপর একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পারস্পরিক ভালবাসা, সুসম্পর্ক এবং একে অপরের দয়ামায়া ও স্নেহের ব্যাপারে মুমিনগণ একটি দেহের মত। দেহের যে অংগেই কষ্ট হোক না কেন তাতে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে ৷ [বুখারীঃ ৬০১১, মুসলিম: ২৫৮৬]।
আজ মুসলিমরা পরস্পর লড়ছে দুনিয়ার লোভে অথচ আমাদের রসুল (সাঃ) মানবজাতির জন্য রহমতস্বরুপ আর আমরা তার পথ অবলম্বন করে বিশ্বের সকল মানুষকে কল্যানের (জান্নাত) আহ্বান করবো ও জাহান্নাম হতে সর্তক করবো।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন,
‘হে নবী আমি আপনাকে সারাবিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’
সূরা আম্বিয়া : ১০৭
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
‘আমি আপনাকে সমগ্র জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি, অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।’
সূরা সাবা : ২৮
তিনি আরে বলেন,
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই সফলকাম।”
আলে ইমরান : ১০৪