পুরো দেশজুড়ে আজ শহীদ মিনার, রাস্তা-ঘাট, বিদ্যালয় সবই নামধারী শহীদের নামে। আলেমরা দীর্ঘদিন ওয়াজ করেছেন কিন্তু প্রকৃত শহীদ কারা আজও জানানো হয়নি। শহীদ হল সাক্ষ্যদাতা যে জান, মাল দিয়ে আল্লাহর দ্বীনের সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন- “যারা ঈমান এনেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায় আর যারা কুফরী করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। সুতারং তোমার লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে।” (সুরা নিসা- ৭৬)। হযরত আবু মুসা (রাঃ) হতে বর্ণিত- “এক ব্যক্তি গনীমতের মাল অর্জনের জন্য জিহাদ করল, একজন নিজের বীরত্ব, সুনামের জন্য জেহাদ করল, এদের মাঝে কে আল্লাহর পথে প্রকৃত জেহাদ করল? রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য জেহাদ করল সে প্রকৃত মুজাহিদ।” (সহীহ বুখারি- ২৬৫৫, মুসলিম -৫০২৯)। উহুদ যুদ্ধের সময় কুযমান নামে এক ব্যক্তি মুসলিমের পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ করে, একসময় সে আহত হয়, মুসলিমরা বলতে থাকে যে, “হে কুযমান, তুমি আজকে ভীষণ কষ্ট ভোগ করেছ। এর বিনিময়ে পুরস্কারের সুসংবাদ গ্রহণ কর! সে বলল কেমন করে সুসংবাদ নেব, আমি তো লড়াই করছি আমার সম্প্রদায়ের ইজ্জত রক্ষার্থে, তা নাহলে আমি আদৌ লড়াই করতাম না, এক পর্যায়ে ব্যাথায় সে আত্মহত্যা করে, রসুল পূর্বেই তাকে জাহান্নামী ঘোষনা করেছিলেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ৪র্থ খন্ড পৃ-৭৩)। রসুলের যুগে কাফেররা বুঝেছিল ঈমান না আনলে, দ্বীন রক্ষায় যুদ্ধ না করলে তার পুরস্কার পাওয়া যায় না। বর্তমান যুগে মুসলিমরাও তা জানে না। উহুদ দিবসেই মুখায়রীক নামক এক ইহুদি ঈমান আনে, সে তার গোত্রের লোকদের ডেকে বলে, হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! আল্লাহর কসম মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। তারা বলল, আজ শনিবার। সে বলল, তোমাদের কোন শনিবার নেই। সে তার গোত্রকে বলল আমি মরলে আমার সম্পত্তি রসুলুল্লাহ (সাঃ) পাবেন। তিনি শহীদ হন রসুল (সাঃ) তাকে জান্নাতী ঘোষনা করেন। (আল – বিদায়া- ওয়ান নিহায়া- ৪ খন্ড- ৭৪)। যারা ইসলামের পতাকা, আল্লাহর সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে তারাই প্রকৃত শহীদ আর যারা জাতীয়তাবাদী পতাকা, মানবরচিত সংবিধানের জন্য লড়াই করে তারা কিভাবে শহীদ হয়? যারা ৫ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, কুরআন শুনে বা তেলওয়াত করে, আল্লাহ হু আকবর ধ্বনিতে রসুল (সাঃ) কে আর্দশ মেনে লড়াই করে তারা আর যারা দেশীয় সংগীত, দেশের জয়ের স্লোগান নিয়ে, দেশের নেতাকে আদর্শ মেনে যুদ্ধ করে তারা কি করে এক হতে পারে?! হা, কোন মুসলিম ভূখন্ডে যদি কাফেররা আক্রমণ করে তখন মুসলিমদের রক্ষার জন্য জেহাদ ফরজ হয় তা হতে হবে ইসলামের পতাকাতলে, কুরআন-সুন্নাহের নিয়ম অনুযায়ী। আর মুসলিমরা পরস্পর দ্বন্দ্ব হলে, ফয়সালা হবে কুরআন অনুযায়ী। আল্লাহ বলেন, “যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগত পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনছাফকারীদের পছন্দ করেন।” (সুরা হুজরাত, ৯)।