আবু বকর (রা:) তখন মুসিলম জাহানের খলিফা। একদিন উমাইনা ও আকরা ইবনে হারেস নামে দুজন ব্যক্তি আবু বকর (রা:) এর কাছে এসে বলল- “হে আল্লাহর রাসুলের খলিফা আমাদের কাছে এক খন্ড জলাভূমি আছে, তাতে কোন খড়- ঘাস নেই এবং তা কোন উপকারে আসে না। সুতরাং আপনি যদি রায় দেন আমরা একে চাষ করব এবং পরবর্তীতে আল্লাহ যদি চায় তা উপকারে আসবে। আবুবকর (রা:) তার কাছের লোকদের এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল- তারা বলল জমিটা দেয়া হলে এর দ্বারা ওরা উপকার লাভ করবে। তখন আবু বকর (রা:) জমিটা তাদের দিলেন এবং এ ব্যাপারে দুজনের জন্য একখানা শর্তনামা লিখলেন। আর বললেন- এ ব্যাপারে তোমরা ওমরকে (রা:) স্বাক্ষী রেখো। যখন তারা দুজন ওমর (রা:) এর কাছে গিয়ে পত্র পড়লেন, ওমর (রা:) পত্রটি কেড়ে নিলেন। লোক দুজন আবু বকর (রা:) এর কাছে এসে বললেন- “খলিফা আপনি না ওমর। তখন আবু বকর (রা:) বললেন- যদি তিনি চান তিনি খলিফা। অতঃপর ওমর (রা:) রাগান্বিত হয়ে আবু বকর (রা:) এর কাছে গেলেন এবং বললেন- আপনি এই জমি সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। এই জমির মালিক আপনি একা নাকি সমস্ত মুসলিমরা? আবু বকর (রা:) বললেন- সমস্ত মুসলিমরা।” তখন ওমর (রা:) বললেন- তাহলে কিভাবে এই জমি দুজনকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন? আবু বকর (রা:) বললেন- আমার পাশে যারা ছিল তারা আমাকে এই পরামর্শ দিয়েছেন। তখন আবু বকর (রা:) বললেন- হে ওমর! আমি তাদের এ কথা বলেছি তুমি এ ব্যাপারে আমার থেকে বেশি শক্তিশালী আর তুমিই আবার বিজয় লাভ করেছ। (আল ইসাবাতু লি ইবনে হাজার-৩/৫৫)। আবু বকর (রা:), নবী ও রাসুলদের পরে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। ওমর (রা:) আল্লাহর খাতিরে আবু বকরের (রা:) জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে সদা প্রস্তুত ছিলেন। সেই ওমর (রা:) শুধুমাত্র ইসলামের জন্য আবু বকরের (রা:) তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন আর খলিফা আবু বকর (রা:) তা বুঝতে পেরে ওমর (রা:) এর প্রশংসা করেন। কারণ ইসলামের শিক্ষা হল এই- সৎ কাজে পরস্পরকে সহযোগীতা করবে এবং ভুল হলে তা সংশোধন করে নিবে। মুহাম্মাদ বিন ওবায়দুল্লাহ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদা দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রাঃ)- এর নিকটে কিছু কাপড় আসলে তিনি সেগুলি হকদারগণের মাঝে বন্টন করে দেন। এতে আমাদের প্রত্যেকে একটি করে কাপড় পেল। কিন্তু তিনি নিজে দু’টি কাপড় দিয়ে তৈরী একটি পোষাক পরিধান করে খুৎবা দিতে মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতঃপর বললেন, হে লোকসকল! তোমরা কি আমার কথা শ্রবণ করছ না? এমতাবস্থায় বিখ্যাত সাহাবী সালমান ফারেসী (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, জি না, আমরা শ্রবণ করব না। ওমর (রাঃ) বললেন, কেন হে আবু আব্দুল্লাহ? তিনি বললেন, আপনি আমাদেরকে একটি করে কাপড় দিয়েছেন। অথচ আপনি পরিধান করেছেন (দুই কাপড়ের) বড় পোষাক! ওমর (রাঃ) বললেন, ব্যস্ত হয়ো না হে আবু আব্দুল্লাহ! অতঃপর তিনি ছেলে আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) কে ডাকলে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর কসম করে জিজ্ঞেস করছি, আমার পোষাকে যে অতিরিক্ত কাপড় রয়েছে, সেটা কি তোমার নয়? আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বললেন, জি, এটি আমার। অতঃপর সালমান ফারেসী (রাঃ) বললেন, এখন আপনি বক্তব্য শুরু করুন, আমরা শ্রবণ করব (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কেঈন ২/১২৩; ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ১/২০৩)। “আজ যারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শেখায় দেখুন, সামান্য মেম্বারের সমালোচনা করলে হামলা ও মামলা শুরু হয়। এখন মুসলিম দেশের শাসকগণ জনগনের সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করে ইচ্ছেমত লুন্ঠন ও বন্টন করছে, কেউ সমালোচনা করলে শাস্তি পেতে হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- “আল্লাহ প্রাপকের কাছে আমানত ফিরিয়ে দিতে তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে, তখন ন্যায় বিচার কর। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের উত্তম উপদেশ দান করেন।নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শোনেন ও দেখেন (৪ঃ৫৮)। একবার ওমর (রাঃ) তার সন্তান আবদুল্লাহর জন্য তিন হাজার দিরহাম ও উসামা ইবনে যায়েদের জন্য চার হাজার দিরহাম ভাতা ঠিক করলেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন- হে বাবা আপনি আমাকে তিন হাজার আর উসামাকে চার হাজার দিলেন। তার বাবার যে মর্যাদা সে মর্যাদা কি আপনার নেই আর উসামার যে মর্যাদা সে মর্যাদা কি আমার নেই? ওমর (রাঃ) বললেন- নিশ্চয় তার বাবা রসুল (সাঃ) এর নিকট বেশি প্রিয় ছিল আর সেও তোমার চেয়ে রসুল (সাঃ) এর নিকট বেশি প্রিয়। সাহাবীরা বেতন-ভাতাসহ সমস্ত কাজে দ্বীনদারিতা ও আল্লাহর রসুল (সাঃ) এর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতেন। এখন এদেশে ঘুষখোর, সুদখোর চাকরিজীবীদের বেতন আর মসজিদের ঈমাম ও মাদ্রাসার বেতনের পার্থক্য লক্ষ্য করুন?!