রাশিয়া বনাম ইউরোপ আর মিডিয়ার ছলনা

বর্তমান মিডিয়ার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ। ইউরোপ এই যুদ্ধে সরাসরি যোগ না দিলেও অস্ত্র, হেলিকপ্টার ও অর্থায়ন দিয়ে সাহায্য করছে। এছাড়াও ইউরোপসহ বহুদেশের স্বেচ্ছাসেবক নামী দল ইউক্রেনের হয়ে লড়ছে যাদের মধ্যে অনেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা। মিডিয়ায় যদিও তাদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রচার করছে কিন্তু রাশিয়ার দাবি- ওরা স্বেচ্ছাসেবক নয় বরং টাকার বিনিময়ে যুদ্ধ করছে।

অপরদিকে রাশিয়ায় সিরিয়া Mercenaries দের ইউক্রেনে নিয়ে আসছে যুদ্ধের জন্য। Mercenaries হল রাশিয়ার অর্থায়নে সিরিয়ায় বাশারের (নুসাইরিয়া শিয়া) পক্ষে লড়াইকৃত সৈনিক। জালেম বাশার নুসাইরিয়া শিয়া যারা মুসলিম না সকল ওলামা এমনকি কয়েকবছর আগে শিয়ারাও ঐক্যমত ছিল। পূর্বের পোস্টগুলোতে এই ব্যাপারে আলোচনা আছে।
ওরা কোন দেশের সেনাবাহিনীর অংশ নয় বরং ওদের কাজ হল টাকার বিনিময়ে যুদ্ধ করা, তাই সেনাবাহিনীর মত ওদের তেমন নিয়মনীতি মানতে হয় না, যুদ্ধাপরাধের শাস্তিও হয় না। সিরিয়ার যুদ্ধে বাশারকে টিকিয়ে রাখার ভূমিকায় ছিল ওরা।
ওরা অত্যন্ত বর্বর হয়। খুন, ধর্ষন, শিশু হত্যা করতেও দ্বিধা করে না, ওদের সাথে কন্টাক্ট হল ভূমি দখল করা। যদিও রাশিয়া, ইরান, সিরিয়ার দাবি ওরাও সাহায্যকারী।

কেন কাফের দেশগুলো নিজেদের এত সশস্ত্র বাহিনী থাকতে স্বেচ্ছাসেবক বা ভাড়াটে সৈনিক ব্যবহার করে!?

প্রথমত নিজদেশের সৈনিকদের অন্যদেশে পাঠালে জনগণ বিরোধিতা করতে পারে, ওরা মরলে সমালোচিত হবে।
দ্বিতীয়ত যখন দুটো দেশ সরাসরি নিজদেশের সৈনিকদের দিয়ে লড়াই করায় লড়াইটা শুধু এই দেশের বলে গন্য হবে পক্ষান্তরে স্বেচ্ছাসেবক বা mercenaries রা যখন সাহায্যের নামে লড়াই করবে তখন তাকে যুদ্ধ না বলে মানবতার লড়াই বলে প্রচার করা যাবে।
আর এছাড়া বড় শক্তিধর দেশগুলো সরাসরি পরস্পরের সাথে লড়াই করা হতে বেচে যায়।

এবার মিডিয়ার বিপরীত আচরন দেখি- আজ যদি বাংলাদেশের কোন মুসলিম মায়ানমার, কাশ্মীরের মানুষকে সাহায্য বা লড়াই করে তাহলে তথাকথিত মুসলিম দেশের মিডিয়া তাদের খারেজী, উগ্রবাদী বলবে।
রাশিয়ার পক্ষ হয়ে সিরিয়ার mercenaries বা ইউক্রেনের পক্ষে হয়ে স্বেচ্ছাসেবক নামক দল লড়ছে তাদের কেউ কি উগ্রবাদী প্রচার করছে?
তখন মিডিয়া অন্যদেশের ব্যাপার বলে এড়িয়ে যায় না। অথচ সিরিয়ায়সহ, বহু অসহায় মুসলিম দেশের সাহায্যে যদি এগিয়ে যায় তখন তথাকথিত মুসলিম দেশের মিডিয়া একবাক্যে সবাইকে খারেজী উপাধি দিবে। শেষ জমানার হাদীসগুলো দেখুন- শামে মুসলিমরা জড়ো হবে বা হচ্ছে।

● হজরত শুরাইহ ইবনে উবাইদ (রহ.) বলেন, হজরত আলী (রা.) ইরাকে অবস্থানরত অবস্থায় তাঁকে শামবাসীদের ব্যাপারে বলা হলো, আপনি তাদের ওপর অভিশাপ করুন! তখন তিনি বলেন, না, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে শাম ভূখণ্ডে আবদালরা (আল্লাহর ওলিদের বিশেষ দল) থাকেন, তাঁরা ৪০ জন থাকেন, যখনই তাঁদের থেকে একজন মারা যান, আল্লাহ তাঁর স্থানে অন্য একজনকে রাখেন, তাঁদের বরকতে বৃষ্টি হয় ও শত্রুর ওপর জয়লাভ হয়। ভবিষ্যতে তাঁদের অছিলায় শামবাসীদের থেকে আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৯৬)

● হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, হিজরতের পর আরেকটি হিজরত শিগগিরই সংঘটিত হবে। তখন ভূপৃষ্ঠের সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হবে তারাই, যারা ইবরাহিম (আ.)-এর হিজরতভূমিতে (শাম দেশে) অবস্থান করবে। আর গোটা পৃথিবীতে সর্বনিকৃষ্ট মানুষরাই বাকি থাকবে। তাদের ভূমিগুলো তাদের নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাদের অপছন্দ করবেন। তাদের ফিতনার আগুন বানর ও শূকরের সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে (তাদের দুশ্চরিত্রের কারণে তারা যেখানেই যাবে, সেখানেই ফিতনা লেগে থাকবে)।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৮২)

● ইবনে হাওয়ালা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ইসলামী বাহিনী শিগগিরই কয়েকটি দলে দলবদ্ধ হবে। একটি দল শামে, একটি ইয়েমেনে ও অন্য একটি ইরাকে। ইবনে হাওয়ালা (রা.) জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি সে যুগ পাই, তখন আমি কোন দলটিতে যোগদান করব, তা বলে দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি শামের বাহিনীতে থাকবে, কেননা তা আল্লাহর পছন্দনীয় ভূমির একটি, সেখানে তিনি তাঁর সর্বোত্কৃষ্ট বান্দাদের একত্রিত করবেন। আর যদি তুমি তাতে যোগদান না করো, তাহলে তুমি ইয়েমেনের বাহিনীকে গ্রহণ করো, আর তোমরা শামের কূপ থেকে পানি গ্রহণ করো। কেননা আল্লাহ আমার জন্য—অর্থাৎ আমার উম্মতের জন্য শাম ভূখণ্ড ও তার বাসিন্দাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৮৩)

● মুয়াবিয়া ইবনে কুররা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন শামভূমি ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, তখন তোমাদের মধ্যেও কোনো কল্যাণ থাকবে না। আর আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, তাদের যারা ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২১৯২)

তাই মিডিয়ার উপর পুরাপুরি নির্ভর না হয়ে সতর্ক হোন। আর এক শ্রেনীর আলেম পাবেন- এদেশের মধ্যকার ব্যাপারে অন্যদেশের মুসলিমরা কেন জড়াবে এটা তাদের নিজস্ব সমস্যা। অথচ কাফেররা মুসলিম দেশে আঘাত করলে চুপ থাকে ওদের হতে সাবধান হোন। মুসলিমদের অন্তর্গত বা বাহির্গত ব্যাপার বলে কিছু নেই বরং শামের সাথে পুরো মুসলিম উম্মাহর সম্পর্ক জড়িয়ে থাকবে শেষ জমানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *