রসুল (সাঃ) চির সম্মানিত (আমরা কি তাকে ভালবাসি?)

একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে, একদিন ক্ষুধার্ত কুকুর পূর্ণিমার চাদকে দেখে রুটি মনে করে ঘেউ ঘেউ করছিল। তার ঘেউ ঘেউ না চাদের লাবন্যতা, সৌন্দর্য্যতা কমাতে পারলো। না চাদকে তার কাজ হতে বিচ্যূত করতে পারলো। তবু অজ্ঞ কুকুর ঘেউ ঘেউ করে।

হয়তো কেউ সামান্য খাদ্য দিয়ে তার ঘেউ ঘেউ থামায় আর জ্ঞানী যারা তারা বুঝে মূর্খ কুকুরকে শায়েস্তা (বেধে না রাখলে) না করলে খাদ্যের লোভে প্রতিদিন ঘেউ ঘেউ করে চারপাশের সুন্দর পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

দুনিয়ার লোভে ক্ষুধার্তরা সে কুকুরের মত যারা জনপ্রিয়তা, পদ, অর্থের লোভে পূর্ণিমার চাদের মতো আধার রাতে হেদায়েতের আলো জ্বালানো রসুলল্লাহ’(সাঃ)-কে নিয়ে মন্তব্য করে।

তাতে রসুলের (সাঃ) সম্মান বিন্দুমাত্র কমে না, না তার রেখে যাওয়া দ্বীনের প্রদীপ নিভু নিভু হয়ে যাচ্ছে বরং তা ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র।

আল্লাহ যাকে সুমহান মর্যাদার অধিকারী করেছে তার মর্যাদা কে কমাতে পারে!!? তবে সুন্দর পৃথিবীর জন্য এই সকল কুকুরদের লাগাম দেওয়া প্রয়োজন আর আমরা আমাদের ভুলগুলো বুঝতে হবে।

শয়তান ও তার অনুসারীরা পাঠ্যপুস্তক, নাটক, চলচ্চিত্র সবখানে প্রচার করলো বাল্যবিবাহ অবৈধ ও ঘৃণিত।

আমাদের অনেকে তা গ্রহণ করলো – তারপর তারা প্রচার করলো এই ঘৃণিত কাজটাই রসুলল্লাহ’(সাঃ) করেছেন। নাউজুবিল্লাহ। প্রাথমিক অবস্থায় এসব অপপ্রচারে তীব্র প্রতিরোধ করা প্রয়োজন ছিল!!

ওরা রসুল (সাঃ) এর ওয়ারিসদের (হক্বপন্হী আলেমগণ) মৌলবাদী, উগ্রবাদী আ্যাখা দিল। মুসলিমদের হত্যা, মসজিদ ভাঙ্গল আর আলেমদের নির্যাতন, কারারুদ্ধ করলো আর আমরা চুপ রইলাম ফলে তাদের সাহস বাড়লো এখন রসুলের (সাঃ) চরিত্র নিয়ে সমালোচনা করে।

অনেকে জুলুম-নির্যাতনের, অপমানের ভয়ে অনেকে দুনিয়াবী সুবিধার জন্য চুপ ছিল। অথচ আল্লাহর আযাবের ভয় কোথায় গেল!? আর জান্নাতের প্রতিশ্রুতি ভুলে গেল।

জারীর বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাদের পাপাচারীদের বাধা দেয় না, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। [৩৩৪১]

[আবু দাউদ ৪৩৩৯, আহমাদ ১৮৭৩১,১৮৭৬৮। আত তা’লীকুর রাগীব ৩/১৭০।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪০০৯
হাদিসের মান: হাসান হাদিস

এখন আল্লাহর আযাব হতে বাচতে সাহসী হোন!! আর কাকে ভয় পাবেন আল্লাহকে না তার তুচ্ছ বান্দাকে!?
দুনিয়ার জুলুম, অপমানের ভয় করেন অথচ কেয়ামতের ভয়াবহতা ভুলে যান!!

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওরা টকশো ও আলোচনাসভা চালু করলো। যেখানে নাস্তিকরা প্রায় একই বিষয়বস্তু নিয়ে রসুল (সাঃ)-কে ও ইসলামের সমালোচনা করে চলছে।
আর একদল আলেম এতে অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করতে চাইছে যুক্তি, তর্ক দিয়ে ওদের মুখ বন্ধ করে দিবে, হয়তো তারা ইসলাম গ্রহণ করবে। এর বাহিরে মুসলিমরা কোন ব্যবস্হা নিলে এসব আলেমরা উগ্রবাদ বলে!!

আপনারা কাদের যুক্তি দিয়ে বুঝাবেন যাদের অধিকাংশ জেনেশুনে দুনিয়ার লোভে বিভ্রান্ত হয়েছে!? আবুবকর (রাঃ), উমর (রাঃ), উসমান(রাঃ), আলী (রাঃ) এর মত সাহাবীরা যদি জীবিত থাকতো তাহলে তারা জেনেশুনে এমন সভায় অংশগ্রহণ করতেন?? যেখানে রসুলের (সাঃ) চরিত্র নিয়ে সমালোচনা করা হবে!! হয়তো তখন কারও সাহসই হতো না!!?

আর তারা কেন অন্য ধর্ম নিয়ে আলোচনা, তর্ক, টকশো করে না এসব ধর্ম কি ইসলামের চেয়ে যৌক্তিক হয়ে গেল!? নাউজুবিল্লাহ।।

ইসলামই একমাত্র সত্যদ্বীন। আর কতবছর কত আলেম জবাব দিতে হবে একই প্রশ্নের!?

বিশ্বের প্রায় সবদেশে শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাখার পাশাপাশি কারাগার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন রাখা হয়!?

কারণ তারা জানে যতই সৎ উপদেশ ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হোক না কেন অনেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, নীতি নৈতিকতা মানবে না। সেজন্য তাদের উপর আইনের প্রয়োগ করতে হবে। নাহলে সমাজে অরজাকতা ছেয়ে যাবে।

আজ পর্যন্ত কেউ কি বলেছে আইন তৈরি করা উগ্রবাদ আর যারা এই আইনে বিচার করে বা চায় তারা উগ্রবাদী!?

তেমনি ইসলামের নৈতিক দাওয়াত সবার জন্য হলেও সবাই তা গ্রহণ করবে না বরং কিছুলোক ফেতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইসলাম ও নবীর সমালোচনা করবে। তাদের একমাত্র ইসলামী আইন দ্বারা ঠিক করতে হবে।

এরপরও যারা এসব নাস্তিকদের সাথে শুধু আলোচনা ও উঠাবসায় সমাধান খুজে তাদের সাবধান হওয়া প্রয়োজন!!

বায়াতে আকাবার সময় আনাসরগণের ঘটনা –

কাআব ইবন মালিক বলেন, আকাবার গিরিসঙ্কটে উপস্থিত হয়ে আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর আগমনের অপেক্ষায় ছিলাম।

এক সময় তিনি এলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আব্বাস ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিব।

আব্বাস তখনো তার পিতৃধর্মের অনুসারী ছিলেন। তবে ভাতিজা মুহাম্মদ (সা)-এর সম্পর্কে গৃহীতব্য সিদ্ধান্তে উপস্থিত থাকতে তিনি আগ্রহী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পক্ষে সুদৃঢ় অঙ্গীকার নেয়াও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সা) এসে বসলেন। প্রথম কথা বললেন আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব। তিনি বললেন, ‘হে খাযরাজের লোকজন ! আরবগণ আনসারীদের আওস ও খাযরাজ উভয় গোত্রকে খাযরাজ গোত্র নামে ডাকত।
তাদের উদ্দেশ্যে আব্বাস বললেন, আমাদের মধ্যে মুহাম্মদ (সা)-এর অবস্থা সম্পর্কে তোমরা অবগত আছ।
আমাদের মতবাদে বিশ্বাসী লোকদের হাত থেকে আমরা কিন্তু তাকে নিরাপত্তা দিয়েছি। ফলে আপন সম্প্রদায়ের মধ্যে সে তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এবং আপন শহরে সে নিরাপদ রয়েছে।

এখন সে তোমাদের সাথে মিলিত হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন তোমরা যদি মনে কর যে, মুহাম্মদ (সা)-কে দেয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ তোমরা পুরোপুরি পালন করতে পারবে এবং বিরোধিতাকারীদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবে, তবে ভাল।

আর যদি তোমরা মনে কর যে, শেষ পর্যন্ত তোমরা তাকে রক্ষা করতে পারবে না বরং বিরুদ্ধবাদীদের হাতে তুলে দেবে এবং তাকে লাঞ্ছিত করবে, তবে এখনই তাকে রেখে যাও, কারণ, নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে আপন দেশে সে সম্মান ও নিরাপত্তার মধ্যে আছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা আব্বাসকে বললাম, আপনার কথা আমরা শুনেছি। ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা)-এবার আপনি কথা বলুন এবং আপনার প্রতিপালকের পক্ষে আমাদের থেকে যত অঙ্গীকার নিতে চান, নিন।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) কথা বললেন। তিনি কুরআন তিলাওয়াত করলেন, আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিলেন এবং ইসলামের প্রতি উৎসাহিত করলেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের অঙ্গীকার নেবো যে, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের স্ত্রী-পুত্রকে যেভাবে রক্ষা কর, আমাকেও সেভাবে রক্ষা করবে।

বারা ইবন মারূর রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাত ধরে ফেললেন এবং বললেন, যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ করে বলছি, আমাদের স্ত্রীদেরকে আমরা যেভাবে রক্ষা করি আপনাকেও অবশ্যই সেভাবে রক্ষা করব।

সুতরাং ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি আমাদেরকে বায়আত করান। আল্লাহর কসম, আমরা তো যোদ্ধা জাতি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা যুদ্ধ পেয়ে আসছি। বারা কথা বলছিলেন, এরই মধ্যে আবূ হায়ছাম ইবন তায়হান বলে উঠল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এখন আমাদের মাঝে এবং স্থানীয় সম্প্রদায় ইয়াহুদীদের মাঝে একটি মৈত্রী চুক্তি আছে।

আপনার অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা ওই চুক্তি ভঙ্গ করব। পরে আপনি এমন কিছু করবেন নাকি যে, আমরা যদি এই চুক্তি ভঙ্গ করি এবং আপনাকে নিরাপত্তা দেই তারপর আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে সার্বিক বিজয় দান করেন, তাহলে আপনি আমাদেরকে ছেড়ে আপনার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসবেন? তাঁর কথায় রাসূলুল্লাহ্ (সা) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ

অর্থাৎ আমার জীবন তোমাদের জীবন, আমার ধ্বংস তোমাদের ধ্বংস। আমি তোমাদের তোমরা আমার। তোমরা যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব আর তোমরা যার সাথে সন্ধি করবে আমি তার সাথে সন্ধি করবো। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া -৩য় খন্ড)।

রসুল (সাঃ)-এর সময় আনসার, মুহাজিরগণ এমনি ছিল। যারা তাদের জানমাল, স্ত্রী, সন্তান সবকিছুর চেয়ে রসুলকে (সাঃ) বেশি ভালোবাসতেন আর তার বিরোধিতাকারী ও শত্রুদের নিজেদের শত্রু ভাবতেন!! যুগে যুগে উম্মাহর আনসার ও মুহাজিরগণ থাকবে যারা ইসলামকে বিজয়ী করবে।

এখন শুধু অপেক্ষা!!

আমরা কি আনসার, মুহাজির হতে পারবো না!?? কাপুরষতাকে আকড়ে ধরে বাচার চেষ্টা করবো!!?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *