রমাদ্বান মাস পবিত্র মাস নেকী হাসিল ও ফজিলতের মাস। রাসূল (সা) এই মাসে দান, সদকাসহ নেক আমল বাড়িয়ে দিতেন।
● হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব মানুষের চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে হযরত জিবিরিল আমিন যখন তাঁর সঙ্গে মিলিত হতেন তখন তিনি আরো বেশি দানশীল হয়ে উঠতেন। (রমদ্বান মাসে) হযরত জিবরিল আলাইহিস সালামের সাক্ষাতে তিনি বেগবান বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হয়ে উঠতেন। (সহীহ বুখারি)।
মহানবী (সা.) যে ৩ কারণে রমজান মাসে বহুগুণে দান করতেন
রমাদ্বান মাসের দান-সাদকাসহ সব উত্তম আমলের সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। রমাদ্বান মাসে প্রিয়নবী বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহর পথে ব্যয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
‘কে সে, যে আল্লাহকে করজে হাসানা প্রদান করবে? অতঃপর তিনি তার জন্য তা (বিনিময়) বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন।’
সুরা বাকারা: আয়াত ২৪৫
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে; তাদের উপমা হলো একটি শস্যবীজ; যা সাতটি শীস উৎপাদন করে; (আর) প্রত্যেক শীসে একশত শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ দানশীল ও সব কিছু জানেন।’
সুরা বাকারা: আয়াত ২৬১
মহানবী (সা.) রমাদ্বানের প্রতি রাতে যখন হজরত জিবরীল আলাইহিস সালামের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হতেন, তখন দানের ব্যাপারে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হতেন। যা উপরোল্লেখিত হাদিসে প্রমাণ পাওয়া যায়।
পরিশেষে, দান-সাদকায় দুনিয়াতে সম্পদের বরকত হয়। আর পরকালে এর জন্য রয়েছে অসংখ্য নিয়ামত ও পুরস্কার। তাই দান-সাদকায় কৃপণতা করা ঠিক নয়। আল্লাহর পথে দান এমনিতেই সাওয়াবের আর তা যদি হয় পবিত্র রমজান মাসে তাহলে তো কোনো কথাই নেই।
তাইতো আল্লাহ তা’আলা বলেন,
‘দেখ! তোমরাই তো ওই বান্দা! যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা তার পথে দান করার আহ্বান জানাচ্ছেন। অথচ তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেদের প্রতি কৃপণতা করছে। (জেনে রেখ!) আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত।’
সুরা মুহাম্মদ: আয়াত ৩৮
অথচ চারপাশে সব মুসলিম দাবিদার, সিয়াম পালনকারী রমাদ্বান এলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ভেজাল খাদ্য ও ওজনে কম দেওয়া হয়। অথচ কুরআনের নির্দেশ –
“তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন ভারসাম্য। যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তুলাদন্ডে। তোমরা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না।”
সুরা আর রহমান
আল্লাহ মহাজ্ঞানী ন্যায়বিচারক। ইসলাম এমন ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি ব্যবস্হা শেখায় যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই উপকৃত হয়।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সিন্ডিকেট, লোভ ও সুদ। বছরের পর বছর টকশো আলোচনা হয় অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণই বাদ যায়, আলেমরা যেন বলতে ভুলে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ সুদভিত্তিক অর্থনীতি ব্যবস্হা।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- বেলাল সাহেব একজন বৃহৎ পাইকারী ব্যবসায়ী। তিনি একটি পণ্য কিনলেন যার মোট খরচ হল ১০০ টাকা। এই পণ্য ১০৫ টাকা বিক্রি করলেও তার লাভ থাকতো!! যেহেতু তিনি ব্যাংক হতে সুদে টাকা নিয়ে পণ্য কিনেছেন যে কারণে ব্যাংকে ৬-৭ পারসেন্ট সুদ পরিশোধ করতে হবে সেজন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে তাকে বিক্রি করতে হবে ১১০-১১২ টাকা। বেলাল সাহেব হতে ১১০ টাকায় কিনলেন ক্ষুদ্র পাইকারী ব্যবসায়ী। সেও ব্যাংক, সমবায় সমিতি হতে সুদে ধার নিয়ে পণ্য কিনলো ফলে যে পণ্য ১১৫ টাকা বিক্রি করলে তার লাভ হতো কিন্তু সুদের টাকা দিতে হবে তাই ১২০ টাকা বিক্রি করতে হবে। ১২০ টাকায় খুচরো বিক্রেতা কিনলো সেও সমবায় সমিতি হতে সুদের টাকা ধার নিল। ফলে তাকেও অধিক দামে বিক্রি করতে হবে। ফলে সমস্ত সুদ ও লাভ বহন করতে হবে সাধারণ ক্রেতাকে। এভাবে ব্যাংকগুলো, সুদের কোম্পানিগুলো বিনা পরিশ্রমে লাভ করতে থাকে আর তার ভার বহন করতে হয় সাধারণ ভোক্তাদের। আর এভাবে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়।
সুদ সম্পদের বরকত নষ্ট করে দেয়।
● রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, “যে জাতির মধ্যে সুদ প্রসারিত হয় তারা অবশ্যই দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়।” (মুসনাদে আহমাদ)।
এই দুর্ভিক্ষ অনেক ধরনেরই হতে পারে; যেমন—আগে দুর্ভিক্ষ ছিল খাবারের অভাব। আর এখন দুর্ভিক্ষ হচ্ছে নির্ভেজাল খাবারের অভাব। মানুষের কাছে টাকার নোট বাড়লেও সংসারে শান্তি নেই। শরীরে সুস্থতা নেই।
আল্লাহ বলেন-
“যারা সুদ খায় তারা তার ন্যায় দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এ জন্য যে তারা বলে ‘ক্রয়-বিক্রয় তো সুদেরই মত। অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার রব-এর পক্ষ হতে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, তাহলে অতীতে যা হয়েছে তা তারই; এবং তার ব্যাপার আল্লাহর ইখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় আরম্ভ করবে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।”
সুরা বাকারাহ -২৭৫
আরো বর্ণিত হয়েছে –
“আল্লাহ্ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আর আল্লাহ কোন অধিক কুফরকারী, পাপীকে ভালবাসেন না।”
সুরা বাকারাহ-২৭৬
আল্লাহ বলেন-
“অতঃপর যদি তোমরা (সুদ বন্ধ) না কর তবে আল্লাহ ও তার রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও। আর যদি তোমরা তাওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরা যুলুম করবে না এবং তোমাদের উপরও যুলুম করা হবে না।
সুরা বাকারাহ-২৭৮
পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজব্যবস্থা ছাড়া সুদমুক্ত অর্থনীতি পুরাপুরি আসবে না তবে তাকওয়া ও তাকওয়াক্কুল অর্জন করার মাধ্যমে ব্যক্তি পাপমুক্ত হওয়া উচিত।
পাখিদের মত রিজিক পাবেন যেভাবে?
আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা আমদের উচিত কারণ রিজিকের জন্য তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট। কিছু সাহাবায়ে কেরাম মদীনায় হিজরতের ব্যাপারে এই আশঙ্কায় ছিলেন যে,
সেখানে তো আত্বীয়-স্বজন ধন-সম্পদ কিছুই নেই সেখানে কীভাবে রূজী-রোজগারের ব্যবস্থা হবে? আল্লাহ পাক তাদের আশ্বস্ত করে বলেন,
ُﻪﻠﻟَﺍ ﺎَﻬَﻗْﺯِﺭ ُﻞِﻤْﺤَﺗ ﺎَﻟ ٍﺔَّﺑﺍَﺩ ْﻦِﻣ ْﻦِّﻳَﺎَﻛَﻭ ْﻢُﻛﺎّﻳِﺍَﻭ ﺎَﻬُﻗُﺯْﺮَﻳ
“এমন অনেক জন্তু আছে যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখেনা, আল্লাহই তাদের এবং তোমাদের রিযিক দেন।”
সূরা আনকাবুত আয়াত-৬০
মুফাসসিরে কেরামগণ বলেন, মানুষ, ইঁদুর ও পিপীলিকা ছাড়া কোন প্রাণী-ই তাদের খাদ্য সংরক্ষণ করেনা। তারা দিনে আনে দিনে খায়। আল্লাহর উপর এরকম অগাধ বিশ্বাস আছে তাদের! মানুষ যদি আল্লাহর উপর এরকম বিশ্বাস করতে পারত তাহলে তারাও এরকম রিযিক পেত।
● আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন- “যদি তোমারা যথার্থই আল্লাহর উপর ভরসা করতে, তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে পাখির মত রিযিক দান করতেন। ভোরবেলা পাখিরা খালিপেটে (বাসা থেকে) বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যাবেলা উদর পূর্তি করে (বাসায়) ফিরে আসে।” [ইবনে মাজাহ- ৩৪৯৬, হাদীস -সহীহ)।