মূর্তির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পর্ব-২ (ধর্ম ও সংস্কৃতি)

মুসলিমরা হলো শ্রেষ্ঠ জাতি যাদের মানবজাতির কল্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ বলেন-

আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (আলে ইমরান ১০৪)

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভুত করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে। (আলে ইমরান ১১)

মুমিনের চেয়ে কেউ কল্যানকামী হতে পারে!? যারা মানুষকে জান্নাতের কল্যানের দিকে আহ্বান করে ও জাহান্নাম হতে সতর্ক করে। নবী, রসুলগন বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কল্যানকামী।

আল্লাহ সুরা নাহলে বলেন-

“নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি, তারা যেন শুধু আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে বর্জন করে।” (আয়াত-৩৬)।

ইসলামিক ভাষায় তাগুত বলতে বুঝায় আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত বা অনুগত্য করা হয় এবং যে এটা পছন্দ করে সেও তাগুত। আল্লাহর ক্ষমতার পরিবর্তে কাউকে ক্ষমতাশীল মনে করা, আল্লাহকে ভালোবাসার মত বা তার চেয়ে বেশি ভালোবেসে কারো আনুগত্য করাও তাগুত।

আমরা যখন কালেমা পড়ি একমাত্র ইবাদতের যোগ্য আল্লাহকে মানি, অন্য সকল দেব/দেবী,নতাগুতকে অস্বীকার করি। একমাত্র দ্বীন হিসেবে ইসলামকে মেনে নিই, অন্য সকল ধর্মকে মিথ্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেই! আর মিথ্যা কি সম্মানের যোগ্য? আমরা সকল অমুসলিমদের দাওয়াহ দিবো ভদ্রতার সহিত- যেন তারা শির্ক, কুফর ছেড়ে ইসলামের ছায়াতলে আসে এবং তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করি যেন জান্নাতে একসাথে থাকতে পারি। যদি না মেনে নেয়- এটার তাদের ইখতিয়ার, ফায়সালা আল্লাহ আখেরাতে করবেন।

আল্লাহ পাক বলেন-

“দ্বীনের মধ্যে কোন জবরদস্তী নেই। নিশ্চয় সঠিক পথ ভুল পথ হতে পৃথক হয়ে গেছে। সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাহলে সে এমন মজবুত হাতল ধরল যা কখনো ভাঙ্গবে না এবং আল্লাহতায়ালা হচ্ছে সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সুরা বাকারাহ- ২৫৬)।

কিন্তু আজ অমুসলিমদের দাওয়াহ ও শির্কের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে খুব কমই মুসলিম পাওয়া যায় বরং অনেকে তাদের শির্ক উৎসবে যেন আগ্রহ সৃষ্টি করছে। যারা মূর্তিপূজার বিরোধীতা করে তাদের খারেজী বলছে। আচ্ছা জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ:) দাওয়াহর অংশ হিসেবে মূর্তি ভেঙ্গেছিলেন, আপনাদের মতে ইব্রাহিম (আ:) খারেজী ছিলেন? নাউজুবিল্লাহ! (জাতির ভুল ভাঙ্গাতে -যে মূর্তি নিজেকে রক্ষা করতে পারে না, তোমাদের কিভাবে রক্ষা করবে। ওরা বুঝেছিল ঠিকই ভয়ে, লোভে ঈমান আনেনি)।

অথচ কুরআনে আল্লাহ তার প্রশংসা করেছেন। আমরা কাউকে মূর্তি ভাঙ্গার দিকে ডাকছি না- বরং অমুসলিমদের দাওয়াহ দেওয়া ফরজ। এমনকি কুরআন সুন্নাহ দ্বারা শাসিত রাষ্ট্রে জিজিয়া দিয়ে তারা তাদের উপসানালয়ে তাদের ইবাদত করবে, কোন মুসলিম তাদের উপর কোনরূপ জুলুম করবে না।

অনেকে না বুঝে জিজিয়ার বিরোধিতা করেন। ইসলা-মী রাষ্ট্রে মুসলিমরা যাকাত দিবে আর সামার্থ্যবান অমুসলিমরা জিজিয়া দিবে যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, উন্নয়নের কাজে খরচ হবে এবং বিপদগ্রস্ত, দারিদ্র্য অমুসলিমকে সাহায্য করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আচ্ছা বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্হায় মুসলিম, অমুসলিম সবাই কর দেন- তখন তা জুলুম মনে হয় না? প্রতিবাদ তখন কই থাকে?

ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমের উপর জুলুম হলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে আর শাস্তির ভয়ে কোন মুসলিম ওদের উপাসনালয়ে যাবে না।

কিন্তু মুসলিমদের জন্য নিষেধ তাদের পূজার স্থানে যাওয়া- এতে শির্কের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে বা অপসংস্কৃতির দিকে যেতে পারে। যে রকমটা মুসা (আ:) জাতির সময় হয়েছিল।

কুরআনে বর্নিত-

আমি (আল্লাহ) সাগর পার করে দিয়েছি বনি ইসরাইলকে। এরপর তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছাল, যারা স্বহস্ত নির্মিত মূর্তিপূজায় নিয়োজিত ছিল। ইহুদিরা বলতে লাগল- ‘হে মুসা; আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতোই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন।’ মুসা বললেন, ‘তোমরা তো বড়ই মূর্খ। এরা (মূর্তিপূজক) ধ্বংস হবে, এরা যে কাজে নিয়োজিত রয়েছে এবং যা কিছু তারা করেছে তা ভুল! তাহলে কি আল্লাহকে ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোনো উপাস্য অনুসন্ধান করব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে সারা বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।’ (সূরা আরাফ : ১৩৮-১৪০)।

তুর পাহাড়ে ওঠার আগে বনি ইসরাইলের সাথে এক জনপদের দেখা হলো, সেখানে তাদের দেবদেবীর পূজা করতে দেখল, মিসরীয়দের মতো। তাতে তাদের মনেও দেবদেবী পূজার শখ জাগল।

এছাড়া কুরআনের বহু আয়াত মূর্তিপূজার বিপক্ষে –

তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ (সূরা হজ্জ : ৩০)

তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর ‘মিথ্যা’। (সূরা আনকাবুত : ১৭)

আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন- ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন করুক একটি কণা এবং একটি শষ্য কিংবা একটি যব! -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৩

এখন মূর্তিপূজার বিরোধিতা করায় উগ্রবাদী বললে আপনারা অজান্তেই রসুলগনকে উগ্রবাদী ও কুরআনকে উগ্রবাদী কিতাব প্রচার করছেন। শয়তান মানুষকে মূর্তিপূজার দিকে আহ্ববান করে আর মুসলিম ইসলামের দিকে।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ ও জুয়া আর প্রতিমা-মূর্তি এবং ভাগ্য নির্ধারক তীর সমূহ অপবিত্র শয়তানের কাজ, তাই তোমরা তা পরিহার কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। [সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০]

অথচ মুসলিম নামধারীরা অমুসলিমদের কল্যান চাওয়ার নামে তাদের মূর্তি তৈরির সাহস, উৎসাহ দেয় যেন শির্কে লিপ্ত হয়ে জাহান্নামের পথ সহজ হয়!

আহ এটাই কি কল্যানের পথ, নাকি তাদের ইসলামের দিকে আহবান করা উত্তম যেন জাহান্নামের পথ হতে ফিরে আসে।

মহান আল্লাহ বলেনঃ

আর তুমি তাদের নিকট ইবরাহিমের ঘটনা বর্ণনা কর, যখন সে তার পিতা ও তার কওমকে বলেছিল, তোমরা কিসের ইবাদাত করো? তারা বলল, আমরা মূর্তির পূজা করি। অতঃপর আমরা নিষ্ঠার সাথে তাদের পূজায় রত থাকি। সে বলল, যখন তোমরা ডাকো তখন তারা কি তোমাদের সে ডাক শুনতে পায়? অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে? তারা বলল, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের পেয়েছি তারা এরূপই করতো। ইবরাহিম বলল, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছো তোমরা যাদের পূজা করো। তোমরা এবং তোমাদের অতীত পিতৃপুরুষেরা? সকল সৃষ্টির রব ছাড়া অবশ্যই তারা আমার শত্রু। [সূরা শুআরা, আয়াত ৬৯-৭৭]

মহান আল্লাহ বলেনঃ

আর ইব্রাহিম বলল, দুনিয়ার জীবনে তোমাদের মধ্যে পরস্পরিক ভালোবাসার জন্যই তো তোমরা আল্লাহকে ছাড়া মূর্তিদেরকে গ্রহণ করেছো। তারপর কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে অভিশাপ দিবে, আর তোমাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম আর তোমাদের জন্য থাকবে না কোন সাহায্যকারী। [সূরা আনকাবুত, আয়াত ২৫]

নিশ্চয়ই ইব্রাহিম (আ:) আমাদের জন্য উওম আদর্শ। অমুসলিমদের নিরাপত্তা আর মন্দির পাহারা দুটো ভিন্ন জিনিস। ইসলা-মী রাষ্ট্রে কেউ শাস্তির ভয়ে ওদের জুলুম করবে না- আর কোন মুসলিম অন্য ধর্মের পূজা (উৎসব) ও মন্দিরে যাবে না। তাই অমুসলিমদের উপর আঘাতের প্রশ্ন আসে না। গেলে অন্যান্য মুসলিমদের নিকট তার মান, মর্যাদা বজায় থাকবে না।

আর অনেকে ধর্মীয় উৎসব সংস্কৃতি এক করে ফেলছেন। পূজায় প্রকাশ্যে অশ্লীল গান বাজনা চলে, অনেকে মদ পান করে, অশ্লীলতা চলে। এসব হিন্দি, বাংলা গানের সাথে হিন্দুধর্মের পূজার কোন সম্পর্ক নেই। ওদের জন্য বৈধ কীর্তন, ধর্মগ্রন্থ পাঠ, তারা তা করুক। গীতা, বেদ, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ান, বিষ্ণু পুরানসহ সকল পুরান, মনুসংহিতায় কোথায় এসব নাচ গানের বৈধতা দেওয়া আছে? বরং মনুসংহিতায় অশ্লীলতা নাচ গান নিষেধ করা হয়েছে। সনাতন ধর্ম যদি অনেক পুরাতনই হয় তখন কি তথাকথিত হিন্দীভাষা বা গান ছিলো! আজও গীতা, বেদ, মহাভারত সংস্কৃত হতে বাংলা হচ্ছে।

আপনারা যখন পাহারা দিবেন তখন কি শির্ক, কুফরী গান শোনা ও অশ্লীলতা দেখা হতে বিরত থাকতে পারবেন?
জেনেশুনে কোন দেবদেবীর শির্ক বাক্য, অশ্লীল গান শোনা ও চোখের জেনা কি হালাল হবে?

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-‘গানবাদ্য শ্রবণ করা কবিরা গুনাহ এবং গানের অনুষ্ঠানে বসা ফাসেকি আর এর দ্বারা আনন্দানুভব করা কুফরি।’ (আবু দাউদ : ৬৭৪)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে এমন কিছু লোক হবে যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।’ (বুখারি : ৮৩)।

হজরত নাফে (রা.) বলেন, ‘আমি একদা হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর সঙ্গে পথ চলছিলাম। তখন তিনি বাঁশির শব্দ শুনলে তার আঙুলদ্বয় কর্ণদ্বয়ে স্থাপন করলেন এবং রাস্তা ত্যাগ করে অন্য রাস্তায় অগ্রসর হলেন। কিছু দূরে গিয়ে বলেন হে নাফে! তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম জ্বী না। তখন তিনি আঙুলদ্বয় কান থেকে সরালেন। অতঃপর বলেন, আমি একদা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন বাঁশির শব্দ শুনতে পেয়ে আমি যেমন করলাম তিনিও ঠিক তদ্রুপ করেছিলেন।’ (আবু দাউদ: ৬৭৪)

প্রতিটি অপসংস্কৃতির প্রতিবাদ করা মুমিনের দায়িত্ব – তা ইসলামের নামে/বিয়ের অনুষ্ঠানের অশ্লীল নাচগান বা বাজি ফুটানো হোক না কেন!?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *