মুনাফেকের বৈশিষ্ট্য হল মিথ্যা বলা, বিশেষ করে সে যতই আমলহীন, ঈমান বর্জন করুক না কেন নিজেকে মুমিনই প্রচার করে।
মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব? জবাবে তিনি বললেন, আকাশে মেঘ না থাকাবস্থায় দুপুরের সময় সূর্য দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সাহাবাগণ বললেন, জী না।
অতঃপর তিনি বললেন, আকাশে মেঘ না থাকাবস্থায় পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সাহাবাগণ বললেন, জী না। তারপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন! চন্দ্ৰ-সূৰ্য কোন একটি দেখতে তোমাদের যেরূপ কষ্ট হয় না, তোমাদের রবকেও দেখতে তোমাদের ঠিক তদ্রুপ কষ্ট হবে না। আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাৎ হবে।
তখন তিনি বললেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মান দান করিনি, কর্তৃত্ব দান করিনি, জোড়া মিলিয়ে দেইনি, ঘোড়া-উট তোমার কাজে লাগিয়ে দেইনি এবং সুখ-স্বাচ্ছদের মাঝে তোমার পানাহারের ব্যবস্থা করিনি? জবাবে বান্দা বলবে, হ্যাঁ, হে আমার রব। তারপর তিনি বলবেন, তুমি কি মনে করতে যে, তুমি আমার মুখোমুখী হবে? সে বলবে, না, তা মনে করতাম না। তিনি বললেন, তুমি যেরূপভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে তদ্রুপভাবে আমিও তোমাকে ভুলে যাচ্ছি।
অতঃপর দ্বিতীয় অপর এক ব্যক্তির আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হবে। তখন তিনি তাকেও বলবেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মান দান করিনি, নেতৃত্ব দেইনি, তোমার পরিবার (জোড়া মিলিয়ে) দেইনি, উট-ঘোড়া তোমার কাজে লাগিয়ে দেইনি এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পানাহারের জন্য তোমাকে কি সুবিধা করে দেইনি? সে বলবে, হ্যাঁ করেছেন। হে আমার পালনকর্তা!
তারপর তিনি বললেন, আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে এ কথা তুমি মনে করতে? সে বলবে, না। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি যেমন আমাকে ভুলে গিয়েছিলে অনুরূপভাবে আমিও তোমাদেরকে ভুলে যাব।
তারপর তৃতীয় অপর এক ব্যক্তির আল্লাহর সাথে দেখা হবে। এরপর তিনি আগের মতো অবিকল বলবেন। তখন লোকটি বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার প্রতি এবং কিতাব ও রসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। আমি সালাত আদায় করেছি, সাওম পালন করেছি এবং সাদাকা করেছি। এমনিভাবে সে যথাসাধ্য নিজের প্রশংসা করবে। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এখনই তোমার মিথ্যা প্রকাশিত হয়ে যাবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর তাকে বলা হবে, এখনই আমি তোমার উপর আমার সাক্ষী উপস্থিত করব। তখন বান্দা মনে মনে চিন্তা করতে থাকবে যে, কে তার বিপক্ষে সাক্ষী দিবে? তখন তার জবান বন্ধ করে দেয়া হবে এবং তার উরু, গোশত ও হাড়কে বলা হবে, তোমরা কথা বলো। ফলে তার উরু, গোশত ও হাড় তার আমলের ব্যাপারে বলতে থাকবে। এ ব্যবস্থা এজন্য করা হবে যেন, আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোন সুযোগ তার অবশিষ্ট না থাকে। এ ব্যক্তি হচ্ছে মুনাফিক যার প্রতি আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট। (মুসলিম-ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৭২২২)
চিন্তা করুন- রোজ কেয়ামতে যখন অনেকে নিজের অসহায়ত্ব, দ্বীন নিয়ে অবহেলা স্বীকার করে নিবে মুনাফেক তখনও সর্বশ্রোতা, সর্বশক্তিমান, যিনি সবার গোপন ও প্রকাশিত সবকিছু জানেন তার সম্মুখে মিথ্যাচার করার সাহস দেখাবে!! তাহলে সাধারণ মুসলিমদের সাথে ওদের মিথ্যাচার স্বাভাবিক নয় কি!?
অথচ বর্তমানে কুরআন-সুন্নাহর বিপরীত মুনাফেকদের (মিডিয়া ও আলেম) সংবাদ, নির্দেশনা, শিক্ষা মুসলিমরা এমনভাবে মেনে নিচ্ছে যেন এগুলো তাদের সফলতা দিবে। আর যখনি কেউ তাদের কুকর্ম জানিয়ে দেয়- ওরা ঈমান না এনে উল্টো পরহেজগার মুসলিমদের বিরোধিতা করে নিজেদের ঈমানদার দাবি করে।
আল্লাহতায়ালা বলেন-
‘মানুষদের মাঝে কিছু (লোক এমনও) আছে যারা (মুখে) বলে আমরা আল্লাহতায়ালা ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি (আসলে) এরা মোটেই ঈমানদার নয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-৮)।
লোকগুলো সমাজে মুসলিমদের সামনে ঈমানের দাবি করে। তারা শুধু মুখে ইসলামের কালেমা পড়ে। মুখের ভাষায় তারা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে এবং বলে আল্লাহতায়ালা ও পরকালের প্রতি তারা বিশ্বাসী। কিন্তু তাদের অন্তরে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল নয়। তাই আল্লাহতায়ালা বলেছেন এরা ঈমানদার নয়। তবে তারা কেন এই কথা বলে?
এ প্রশ্নের জবাবে মহান আল্লাহরাব্বুল আলামিন বলেন-
‘এরা আল্লাহতায়ালা ও তার ঈমানদার বান্দাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। তারা অন্য কাউকে নয়, নিজেদেরই ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। যদিও (এ ব্যাপারে) তারা কোনো প্রকারের চৈতন্য রাখে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-৯)
মুনাফিকরা আল্লাহ ও ঈমানদারদের সাথে ধোঁকাবাজি করে। ঈমানের কথা বলে তারা নানাবিধ সুযোগ সুবিধা হাসিল করতে চায়। তারা যেন শক্তিশালী মুসলিম বাহিনীর রোষানলে না পড়ে এবং সামাজিক নিরাপত্তা লাভ করে, এরকম পার্থিব স্বার্থ হাসিলের জন্যই তারা ঈমানদারদের সাথে ধোঁকাবাজি করে চলাফেরা করে কিন্তু তাদের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে তারা বুঝতে পারে না যে, তারা নিজেরাই নিজেদের ধোঁকা দিচ্ছে। কারণ যে ব্যক্তি কোনো সৎকাজ করে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই করে আবার যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় কাজ করে তার শাস্তিও তাকেই ভোগ করতে হবে। এর দ্বারা আল্লাহর কোনো লাভ বা ক্ষতি হবে না। কারণ মহান আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি জগতের মুখাপেক্ষী নন বরং সবাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী।
তারা এসব দেশে যেখানে মানুষের মাঝে ইসলামিক আবেগ বিদ্যামান সেখানে ইসলামের ছদ্মবেশ ধরে কিন্তু আবার ইসলামের শত্রুদের সাথেও ওদের বন্ধুত্ব থাকে। ওদের লেবাস, চলাফেরা মুসলিমদেরই ধোকা দেওয়ার অন্যতম হাতিয়ার।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করে বলেন-
‘তুমি যখন তাদের দিকে তাকাবে তখন তাদের (বাইরের) দেহাবয়ব তোমাকে খুশি করে দেবে আবার যখন তারা তোমার সাথে কথা বলবে তখন তুমি (আগ্রহভরে) তাদের কথা শুনবেও।’ (সুরা মুনাফেকুন, আয়াত-৪)।
মহান আল্লাহ বলেন-
‘অবশ্যই মুনাফিকরা আল্লাহতায়ালাকে ধোঁকা দেয়, (মূলত এর মাধ্যমে) তিনিই (আল্লাহই) তাদের প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন, এরা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন একান্ত আলস্য ভরেই দাঁড়ায় তারা কেবল লোকদের দেখায়। এরা আল্লাহতায়ালাকে কমই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত-১৪২)।
ওদের শাস্তি ভয়াবহ ও জানাজা নিষেধ
মহান আল্লাহ বলেন-
‘তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো কিংবা না করো (এ দু-টোই) তাদের জন্য সমান। (কারণ) আল্লাহতায়ালা কখনোই তাদের ক্ষমা করবেন না; আল্লাহতায়ালা কোনো নাফরমান জাতিকে হেদায়েত দান করেন না। (সুরা মুনাফেকুন, আয়াত-৬)।
আল্লাহতায়ালা বলেন-
'আল্লাহতায়ালা মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং কাফেরদের জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।' (সুরা তাওবা, আয়াত-৬৮)