সুলায়মান ইব্ন দাউদ (রহঃ) …. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার জানামতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ এ উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীতে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি দীনের ’তাজ্দীদ’ বা সংস্কার সাধন করবেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)। পুনঃনিরীক্ষণঃ সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), যুদ্ধ বিগ্রহ – অধ্যায়।
মুজাদ্দিদ অর্থ সংস্কারক। যিনি ইসলামের নামে বিভিন্ন ভুল, ভ্রান্তি, অপবাদ, বিদআত, কুফরের সংস্কার করে দ্বীন ইসলামকে রসুলের (সা:) ও খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ অনুযায়ী চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। কিন্তু এই মুজাদ্দিদকে কেন্দ্র করে উম্মত বহুভাগে বিভক্ত। কারো দৃষ্টিতে একজন মুজাদ্দিদ অন্য দলের নিকট তিনি ফেতনাবাজ।
এমনকি অনেকে তার ভক্ত দ্বারা মুজাদ্দিদ দাবি করে বা ভক্তরা মুজাদ্দিদ বলে প্রচার করে নতুন ফেরকাসহ নতুন ধর্মমত সৃষ্টি করে গেছে। অনেকে শেষে নিজেকে নবী দাবি করেছে। এসবকে কেন্দ্র করে উম্মত মুসলিম পরিচয় ভুলে বহুনামে আজ পরিচয় দিচ্ছে।
গোলাম আহমদ কাদেয়ানীকে মুজাদ্দিদ দাবি করে দুটি দল হয় একদল লাহোরী যারা তাকে শুধু মুজাদ্দিদ মানে আরেকদল তাকে নবী মানে। তথাকথিত ফেতনাবাজ মুজাদ্দিদগণ প্রথমে কিছু চমকপ্রদ কর্ম বা কথা প্রচার করে জনপ্রিয়তা হাসিল করে। কিছু ভক্ত সৃষ্টি হওয়ার পর তারা ফেতনা ছড়াতে শুরু করে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা কুরআন, হাদীসকে ভিন্নরূপে ব্যাখা করে যেরূপ ব্যাখা সাহাবী, তাবেয়ীরা করেননি। বর্তমানেও দেখবেন দাজ্জালকে নিয়ে আধুনিক ব্যাখার নাম দিয়ে সাহাবী, তাবেয়ীদের ব্যাখার বিপরীত বিশ্লেষণ করে অনেকে জনপ্রিয় হচ্ছে। নিশ্চিত এগুলো পরবর্তীতে ফেতনার কারন হবে।
মুজাদ্দিদ মানে এই নয় ইসলামে নতুন কিছু সংযোজন করবেন বরং দ্বীন পূর্নাঙ্গ ও পরিশুদ্ধ। মুজাদ্দিদ দ্বীন রসুল (সা:), খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ মতে চালাবে, প্রচার করবে ও সুন্নাহকে পুন:প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে।
মুজাদ্দিদ নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও প্রায় সকল আলেম ঐক্যমত ইসলামের প্রথম মুজাদ্দিদ উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ:) আর শেষ মুজাহিদ্দ হবেন খলিফা মাহাদী (হাফি:)।
তবে অনেকের অভিমত- উম্মাহর প্রথম মুজাদ্দিদ হলেন হোসাইন (রাঃ)। খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ ফিরিয়ে আনতে তিনি স্বোচ্চার হোন ও শহীদ হোন। তিনি উম্মাহর বুকে চেপে আসা প্রথম বিদআত রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করেন, উম্মত যেন খেলাফায়ে রাশেদীনের মত স্বাভাবিক মত প্রকাশের অধিকার ফিরে পায় এবং খেলাফত আবার ফিরে আসে সেজন্য তিনি উদ্যোগী হোন।
সাফীনাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নবুওয়্যাতের ভিত্তিতে পরিচালিত খিলাফত ত্রিশ বছর অব্যাহত থাকবে। অতঃপর আল্লাহর যাকে ইচ্ছা রাজত্ব বা তাঁর রাজত্ব দান করবেন। সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমাকে সাফীনাহ (রাঃ) বলেছেন, হিসেব করো, আবূ বকর (রাঃ) দুই বছর, ‘উমার (রাঃ) দশ বছর, ‘উসমান (রাঃ) বারো বছর ও আলী (রাঃ) এতো বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমি সাফীনাহ (রাঃ) -কে বললাম, এরা ধারণা করে যে, ‘আলী (রাঃ) খলীফাহ ছিলেন না। তিনি বলেন, বনী যারকা অর্থাৎ মাওয়ানের বংশধরগণ মিথ্যা বলেছে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৬ ৪৬
আলীর (রা:) সময় মুসলিমদের পরস্পর যুদ্ধ – সংঘাত হতে মক্কা-মদিনা কে সুরক্ষিত রাখতে তিনি দারুল খেলাফা কুফাতে নিয়ে আসেন। কারন মক্কা-মদিনা অত্যন্ত পবিত্র ভূমি, দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের কারনে এর পবিত্রতা যেন বিনষ্ট না হয়। (পরবর্তীতে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের খেলাফতের সময়, বনু উমাইয়ার রাজত্বকালে মক্কা আক্রমণ হয়েছে, সম্মানহানী হয়েছে।)
প্রকৃত দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হোসাইন রা. তার প্রিয় নানা রসুলের (সা:) নীতি অনুসরণ করেন। রসুল (সা:) যেমন মক্কা হতে হিজরত করে মদীনায় যান। যেখানে তার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সর্মথক ছিল।
রসূল (সা) মদীনা হতে দাওয়াতী ও জেহাদী কার্যক্রমের মাধ্যমে ইব্রাহিম (আ:) এর রেখে যাওয়া তাওহীদ মক্কায় ফিরিয়ে আনেন। তেমনি হোসাইন রা. কুফা যেতে চেয়েছিলেন, ওখানে আহলে বায়াতের অনুরাগী ছিল। হোসাইন (রা:) ঈমানী দৃঢ়তা, দাওয়াতী চেতনায় হয়তো বিপ্লব সৃষ্টি হবে, এই আশাংকায় ইসলামের শত্রুরা তাকে পথে বাধা দেন। ফলশ্রুতিতে তিনি শহীদ হোন।
দাওয়াতী কাজে ও সুন্নাহর ফিরানোর পথে বাঁধা, জুলুম – নির্যাতন আসলে প্রয়োজনে জেহাদ করতে হয় হোসাইন (রা:) এই আর্দশ পুনরায় জাগিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েকে (রা:) সাহাবীরাসহ অন্যরা খলিফা নিযুক্ত করেন এবং নয় বছর তার ন্যায় শাসন বিদ্যমান থাকে। হোসাইন রা যদি সেদিন মক্কা-মদিনা ফিরে যেতেন উম্মত হয়তো জালেম শাসকের বিরোধিতা করার সাহস ফিরে পেত না।
হোসাইন (রাঃ), আবদুল ইবনে যুবায়ের (রা), ঈমাম আবু হানিফা (রহ:) ও ঈমাম হাম্বল (রহ:) সবাই জালেম শাসকের বিরোধিতা করেন। কেউও স্বৈরাচারী রাজাদের আনুগত্য করেননি বরং জুলুম নির্যাতনের শিকার হোন।
অথচ আজ আমাদের সমাজে এমন কাউকে মুজাদ্দিদ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে – যারা রাজতন্ত্রের সমর্থক, জালেম শাসকের পৃষ্ঠপোষক, উম্মাহকে সুন্নাহ ও খেলাফতের দিকে আহ্বানের বদলে বিভিন্ন বিদআতী কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা/সমর্থন করে গেছেন ও চলছেন।
শেষ মুজাদ্দিদ মাহাদী হাফি ও খেলাফতের দিকে আহ্বান করবে এবং খেলাফত পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিবেন এবং তিনিও আহলে বায়াত হতে আসবেন। তার বিরুদ্ধেও প্রথম সেনা পাঠাবে শাম হতে এক মুনাফেক শাসক।(মুসলিম, আল ফিতান)