মুসলিমদের আদর্শ রসুলের (সাঃ) জন্মে উম্মত খুশি হবে এটা স্বাভাবিক। তবুও সবচেয়ে বড় আফসোস তো সেটা যদি দ্বীন ইসলামের মত নেয়ামতের সন্ধান পেয়েও অজ্ঞতা, অবহেলায় তার হতে দূরে সরে থাকা হয়!!
আল্লাহতায়ালা বলেন-
“বল, তোমাদের পিতা, তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দা হওয়ার আশংকা তোমরা করছো এবং সে বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করছো, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তার রসুল তার পথে জেহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তার চূড়ান্ত ফায়সালা নিয়ে আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়ত দেন না।”
সুরা তওবাঃ ২৪
রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- “তোমাদের মধ্যে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতামাতা ও সমস্ত মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় হই।” (বুখারী, মুসলিম)
আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে রসুলের (সাঃ) মতো আর রসুলকে (সাঃ) ভালোবাসতে হবে সাহাবীদের মতো।
এই উম্মতের কোন ব্যক্তিই আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) এর মতো রসুলকে (সাঃ) ভালোবাসতে পারবে না!!! তারা রসুলের (সাঃ) জন্য নিজেদের জান-মাল বিসর্জন দিতে সদা প্রস্তুত থাকতেন, তথাকথিত বিদআত পালন করতেন না!!!
অন্য ধর্মের মানুষেরা তাদের দেবদেবীর জন্ম/মৃত্যুদিনে বিভিন্ন শিরকীয় অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করে। আর মুসলিমদের বিশ্বাস হল দিন-রাত পরিবর্তনকারী ও দিবসের মালিক আল্লাহ, তাই একমাত্র তারই অধিকার আছে কোন দিন কোন দিবস হিসেবে পালিত হবে তা নির্ধারণ করার।
তিনি আমাদের ঈদ, জুমা, হজ্ব, রমাদান, কদ্বরের মত আনন্দ ও বরকতময় দিনগুলো নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এছাড়াও ইসলামে কোন নবীদের জন্মদিন ও মৃত্যুদিন পালনের বিধান নেই, মুসলিমরা নবীদের জীবনাদর্শ মেনে চলে। যারা আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ করা রাত-দিনের মাঝে নতুন নতুন দিবস চালু করছে, তাদের এই অধিকার কে দিয়েছে?? তারা কি রাত-দিন, সময় পরিবর্তনের মালিক বা দিবসের মালিক!?
হা, রসুলের (সাঃ) জন্মে আমরা খুশি, স্বয়ং রসুল (সাঃ) তার জন্মদিন বা বার সিয়াম পালন করতেন। আসুন আমরা একদিনের জন্য নয় বরং প্রতিদিন রসুলের (সাঃ) সুন্নাহ ও সোমবারে সিয়াম পালন করে রসুলের (সাঃ) জন্মের খুশি পালন করি। আর প্রকৃত খুশি, সফলতা তো রসুলের (সাঃ) সুন্নাহ অনুসরণ করে তার সাথে সাক্ষাৎ অর্জন করা ও হাউজে কাওসারে পানি পান করা।
আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সোমবারে রোযা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন,
‘‘এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে বা আমার উপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে।’’ (মুসলিম : ১১৬২)
অন্য আরেক হাদীসে আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
(প্রত্যেক সপ্তাহে) সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়ে থাকে। কাজেই আমি রোযাদার অবস্থায় আমার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করা হোক এমনটি আমি পছন্দ করছি। (তিরমিযী: ৭৪৭)
আর বর্তমানে রসুলকে (সাঃ) ভালোবাসার দাবিদাররা বিদআত পালনে অগ্রগামী হলেও আহলে বায়াতের ফজিলত ও তাদের প্রতি দায়িত্বের কথা ভুলে গেছে।
যাইদ ইবনু আরকাম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা শক্তরূপে ধারণ (অনুসরণ) করলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।
তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ আল্লাহ তা’আলার কিতাব যা আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং আমার পরিবার অর্থাৎ আমার আহলে বাইত। এ দুটি কখনও আলাদা হবে না কাওসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য কর আমার পরে দু’জনের সঙ্গে তোমরা কিভাবে আচরণ কর। (তিরমিজি)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে মহব্বত কর। কেননা তিনি তোমাদেরকে তার নিয়ামাতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহ্ তা’আলার মহব্বতে তোমরা আমাকেও মহব্বত এবং আমার মহব্বতে আমার আহলে বাইতকেও মহব্বত কর।
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম) বলেন : ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি : আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধর (ইতরাত), আমার আহলে বাইত; নিশ্চয়ই এ দু’টি কখনই বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউসের নিকট (হাউসে কাউসারের নিকট) আমার কাছে উপস্থিত হয় (কিয়ামত দিবসে)।’
নাসায়ী, আহমাদ, খাসায়িস, পৃ. ১১২, হাদীস ৭৮; ইবনে মাগাযিলী, মানাকিব, পৃ. ২৩০, হাদীস ২৮৩; আবু ইয়ালী, মুসনাদ, ২য় খ-, পৃ. ২৯৭, হাদীস ১০২১; ইবনে আবি আসিম, কিতাবুস সুন্নাহ, পৃ. ৬৩০, হাদীস ১৫৫৫; ইবনে হাম্বাল, মুসনাদ, ১৭তম খ-, পৃ. ২১১, হাদীস ১১১৩১; তাবারানী, সুলাইমান, ৫ম খ-, পৃ. ১৬৯, হাদীস ৯৮০ ও ৪৯৮১।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আল্লাহ্কে ভালোবাস কেননা মহান আল্লাহ তাঁর নেয়ামত হতে তোমাদিগকে রিজিক প্রদান করেছেন। আল্লাহ্র ভালোবাসা পেতে হলে আমাকে ভালোবাস (রাসুলকে) আর আমার ভালোবাসা পেতে হলে আমার আহলে বাইতকে (আনুগাত্যপুর্ন) ভালোবাস।।
তিরমিজি, খঃ-৬, হাদিস-৩৭২৮ ইসঃ সেন্টার, সহীহ তিরমিজি (সকল খণ্ড একত্রে) পৃঃ-১০৮৫, হাদিস-৩৭৫১ তাজ কোং, মেশকাত শরীফ, খঃ-১১, পৃঃ-১৮৮, হাদিস-৫৯২২ এমদাদিয়া লাইব্রেরি।
হে লোকসকল! আমি একজন মানুষ। খুব শিগগিরি আমার প্রভুর নিযুক্ত ব্যক্তি (তথা মৃত্যুর ফেরেশতা) আমার কাছে আসবে এবং আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেব।
আমি তোমাদের মাঝে দু’টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; যার একটি হল আল্লাহর কিতাব; যাতে রয়েছে নূর এবং হেদায়েত। আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অত:পর বলেন: আর অপরটি হলো আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ মহান আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে অনুসরণ কর) এই বাক্যটিকে তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন।
সূত্র: সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮০৩। সূত্র:সুনানে দারেমী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩১-৪৩২।
তিরমিযি এই হাদিসটিতে ((وعترتی أهل بيتی)) শব্দগুলো বর্ণনা করেছেন। মূল হাদিসটি হলো:
إنی تارکت فيکم الثقلين ما ان تمسکتم به لن تضلّوا بعدی؛ أحدهما أعظم من الآخر: کتاب الله حبل ممدود من السماء إلی الأرض و عترتی اهل بيتی، لن يفترقا حتی يردا عليَّ الحوض، فانظروا کيف تخلفونی فيها.
“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (মূল্যবান) জিনিস (আমানত হিসেবে) রেখে যাচ্ছি। যদি তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। সেগুলো একটি অপরটির উপর প্রধান্য রাখে। (সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত (রহমতের) ঝুলন্ত রশির ন্যায় এবং অপরটি হলো আমার বংশধর; আমার আহলে বাইত।
এরা হাউযে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও একে অপর হতে আলাদা হবে না। অতএব, তোমরা লক্ষ্য রেখ যে, আমার (ছেড়ে যাওয়া) আমানতের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করো। (সূত্র: সুনানে তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬৩।)।
খলিফা মাহাদী (হাফি) আহলে বায়াত হতে আসবেন!!
** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, একদা আমরা নবী করীম (সাঃ) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উনি বলতে ছিলেন, “ঐ দিক থেকে একটি দল আসবে (হাত দিয়ে তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন)। তারা কালো পতাকাবাহী হবে। তারা সত্যের (পূর্ণ ইসলামী শাসনের) দাবী জানাবে, কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হবে না। দুইবার বা তিনবার এভাবে দাবী জানাবে, কিন্তু তখনকার শাসকগণ তা গ্রহণ করবে না।
শেষ পর্যন্ত তারা (ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব) আমার পরিবারস্থ একজন লোকের (ইমাম মাহদির) হাতে সোপর্দ করে দিবে। সে জমিনকে ন্যায় এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ভরে দিবে, ঠিক যেমন ইতিপূর্বে অন্যায় অত্যাচারের মাধ্যমে ভরে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঐ সময় জীবিত থাকো, তবে অবশ্যই তাদের দলে এসে শরীক হয়ে যেও – যদিও বরফের উপর কনুইয়ে ভর দিয়ে আসতে হয়”।
(আবু আ’মর আদ দাইনিঃ ৫৪৭, মুহাক্কিক আবু আবদুল্লাহ শাফেয়ী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)।
হারুন (রহঃ) …. আমর ইব্ন কায়স (রহঃ) থেকে, তিনি হিলাল ইব্ন আমর (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-কে এরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’অরাইন্-নাহার’ থেকে এমন এক ব্যক্তি বের হবে, যার নাম হবে ’হারিছ ইব্ন হারবাছ’ এবং তার আগে অপর এক ব্যক্তি বের হবে, যাকে লোকেরা ’মানসূর’ বলবে।
তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার-পরিজনদের তেমনিভাবে আশ্রয় দেবেন, যেমনিভাবে কুরায়শগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আশ্রয় দিয়েছিল। প্রত্যেক মু’মিনের উচিত হবে তাঁকে সাহায্য করা এবং তাঁর আহব্বানে সাড়া দেওয়া। (আবুদাউদ -৪২৯০)।
এটা আবুদাউদের একক বর্ণনা, অনেকের মতে যঈফ হলেও গ্রহণযোগ্য।