দেশ-বিদেশে ভূত, জিনের নাম করে বহু অনুষ্ঠান জনপ্রিয়৷ অনেকে তা দেখছে নিজের অজান্তেই এমন অনেক আকীদায় বিশ্বাসী হচ্ছে যা কুফরী।
পরিচিত ভাইয়ের অনুরোধে ২-১ বার শোনার উপর আঁতকে উঠি যেখানে – এমন কিছু কাহিনি বলা হয় যে কুরআন দ্বারা রুকইয়া করার পরও জিনের কিছু না হয়ে বরং হেসে উঠে, আবার কোন খোনার ঘন ঘন কিছু অস্পষ্ট পড়ায় জিন ভয় পায় বা কোন তাবিজের কারনে জিন ছেড়ে চলে যায় নাউজুবিল্লাহ। এসব প্রোগামগুলোতে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হয় যা শয়তানের ষড়যন্ত্রের অংশ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।-সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮
জিন মানুষের তুলনায় অনেক শক্তিশালী ঠিক কিন্তু যখন কুরআন দ্বারা বান্দা আল্লাহর কাছে সুরক্ষা চায় তখন জিনের ক্ষমতা হার মানে, বান্দা আল্লাহর সুরক্ষায় চলে আসে।
আমাদের শয়তান ও জ্বিন সিরিজগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা আছে।
অনেকে জিন দেখতে পরিত্যক্ত বাড়ি, বন-জঙ্গলে যায়, অদ্ভুত কিচ্ছাকাহিনী দেখে। ১ম কথা জিন যদি কাফের বা শয়তান শ্রেনীর হয় তাদের হতে দূরে থাকার নির্দেশ ইসলামে রয়েছে। অপরদিকে জিন যদি মুসলিম হয় আপনার কোন মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে গোয়ান্দাগিরি বা অনধিকার চর্চা করা কি ইসলামিক? তাদের অধিকার দিয়েছে ইসলাম সুন্দরভাবে থাকতে। মানুষ চাইলেই জিনকে দেখতে পারে না বরং জিন, শয়তান মানুষকে এমন জায়গা হতে দেখে যা সাধারণত মানুষ দেখতে পারে না। আল্লাহ বলেন-
“বলুন আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগের সাথে শুনেছে। অতঃপর বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি।”
সুরা জিন
হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থে এসেছে যে, এই ঘটনা তখনকার যখন শয়তানদেরকে আকাশে খবর শোনা থেকে উল্কাপিণ্ডের মাধ্যমে প্ৰতিহত করা হয়েছিল। এ সময়ে জিনেরা পরস্পরে পরামর্শ করল যে আকাশের খবরাদি শোনার ব্যাপারে বাধাদানের এই ব্যাপারটি কোন আকস্মিক ঘটনা মনে হয় না। পৃথিবীতে অবশ্যই কোন নতুন ব্যাপার সংঘটিত হয়েছে। অতঃপর তারা স্থির করল যে, পৃথিবীর পূর্ব পশ্চিম ও আনাচে-কানাচে জিনদের প্রতিনিধিদল প্রেরণ করতে হবে। যথাযথ খোঁজাখুঁজি করে এই নতুন ব্যাপারটি কি তা জেনে আসবে। হেজাযে প্রেরিত তাদের প্রতিনিধিদল যখন ‘নাখলাহ’ নামক স্থানে উপস্থিত হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন।
জিনদের এই প্রতিনিধিদল সালাতে কুরআন পাঠ শুনে পরস্পরে শপথ করে বলতে লাগলঃ এই কালামই আমাদের ও আকাশের খবরাদির মধ্যে অন্তরায় হয়েছে। তারা সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে স্বজাতির কাছে ঘটনা বিবৃত করল। আল্লাহ্ তা’আলা এসব আয়াতে সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে তাঁর রাসূলকে অবহিত করেছেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণনা করেন এই ঘটনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিনদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআন শোনাননি এবং তিনি তাদেরকে দর্শনও করেন নি বরং তার কাছে জিনদের কথা ওহী করে শোনানো হয়েছিল মাত্ৰ।” [বুখারী: ৪৯২১, মুসলিম: ৪৪৯]
তবে আল্লাহ চাইলে নবী, রসুল বা বুজুর্গ ব্যক্তিদের দেখাতে পারেন যেমন- আদম (আঃ) ইবলিসকে দেখেছিল। এছাড়া জিনরা ইচ্ছে করলে মানুষসহ ভিন্নরুপে এসে দেখা দিতে পারে। যেমন – রসুলের (সা:) কাছে জিনরা ঈমান এনেছিল, অপরদিকে জ্বিন শয়তান মানুষের ছদ্মবেশে এসে রসুলকে (সা:) হত্যার বুদ্ধি দেয়। (সীরাতে ইবনে হিশাম)।
অনেকে বিভিন্ন কুফর, শিরকের মাধ্যমের জিনের সাহায্য চায় তাদের নিকট জিন আসতে পারে (সুরা বাকারাহ ১০২ আয়াত দেখুন, বিস্তারিত জিন সিরিজে পাবেন)। সুতরাং যারা ভূত, জিন খুজতে বনে জঙ্গলের পরিত্যক্ত বাড়িতে যায় তাদের বলি- শয়তান জিন আপনার চারপাশে ছড়িয়ে আছে আপনারা কি দেখতে পান? তার জন্য দূরে যাওয়ার দরকার নেই।
শয়তানের অজুহাত হল- আদম (আ:) এর জন্য আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছে তাই সে প্রতিটি আদম সন্তানের উপর প্রতিশোধ নিতে সংকল্পবদ্ধ। কুরআনে বর্নিত-
“সে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে পথভ্রষ্ট করেছ, আমিও শপথ করেছি যে, আমিও তাদের জন্য আপনার সরলপথে ওৎ পথে বসে থাকবো। তারপর আমি তাদের হামলা করব তাদের সম্মুখ দিক হতে, তাদের পিছন দিক, তাদের ডানদিক হতে, তাদের বামদিক হতেও। আর তুমি তাদের অধিকাংশদের কৃতজ্ঞ হিসেবে পাবে না।”
সুরা আরাফ-১৬-১৭
তাই আদম সন্তান যেখানে রইবে তার অবস্থান আশেপাশে থাকবে।
সঙ্গী জিন- হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
‘তোমাদের মধ্যে এমন কোনও ব্যক্তি নেই যার সাথে জ্বিনদের মধ্য থেকে একজন সাথী ও ফিরিশতাদের মধ্য থেকে একজন সাথী নিযুক্ত করা হয় না।’ সাহাবীগণ বললেন- হে আল্লাহর রসূল! আপনার সাথেও আছে কি?’ তিনি বললেন-‘হ্যাঁ, আমার সাথেও, কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করেছেন এবং সে মুসলমান হয়ে গেছে। এখন সে সৎকাজ ছাড়া অন্য কিছুর কথা আমাকে বলে না। (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
● অন্য বর্ণনায় হযরত আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একরাতে জনাব রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমার কাছ থেকে উঠে বাইরে চলে গেলেন। আমার চিন্তা হল (যে, হয়তো তিনি অন্য কোনও স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন)। তিনি ফিরে এসে আমাকে (জাগ্রত ও চিন্তিত অবস্থায়) দেখে বললেন- তোমাকে তোমার শয়তান ওয়াসওয়াসায়) ফেলেছে। আমি নিবেদন করলাম- ‘আমার সাথেও শয়তান আছে?’ তিনি বললেন-‘হ্যাঁ, শয়তান তো সকল মানুষের সাথে থাকে। আমি নিবেদন করলাম- হে আল্লাহর রসূল! আপনার সঙ্গেও আছে কি?’ তিনি বলেন -‘হ্যাঁ, কিন্তু আমার পালনকর্তা আমাকে সহায়তা করেছেন, অবশেষে সে মুসলমান হয়ে গেছে।
● হযরত হবনে উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
আদমের চেয়ে আমাকে এই দু’টি শ্রেষ্ঠত্বও দান করা হয়েছে- (১) আমার শয়তান কাফির ছিল, আল্লাহ তা’আলা তার বিরুদ্ধে আমাকে মদদ করেছে। শেষ পর্যন্ত সে মুসলমান হয়ে গেছে এবং (২) আমার পত্নীগণ আমার সহায়তাকারিণী থেকেছে। অপরদিকে (৩) আদমের শয়তান ছিল কাফির এবং (৪) তাঁর স্ত্রী ছিল তাঁর পদস্থলনের অংশীদার। (ইবনে হিব্বান ২১০১, তবারানী)
এই হাদীসগুলো রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর করীন (সঙ্গী শয়তান)-এর ইসলাম কবুলের সুস্পষ্ট প্রমাণ। এবং এটি নবীজীরই বৈশিষ্ট্য। উল্লেখিত হাদীসের একটি অর্থ এটাও যে, আল্লাহ তা’আলা ‘নবীজীকে সাহায্য করেছেন এমনকি তিনি সঙ্গী-শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষিত থাকতেন।
● হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
মানুষের সাথে শয়তানদের সম্পর্ক থাকে, ফিরিশ্তাদেরও সম্পর্ক থাকে। শয়তানদের সম্পর্ক হল মন্দের দিকে প্ররোচিত করা ও সত্যকে মিথ্যা বানানো। এবং ফিরিশ্তাদের সম্পর্ক হল সৎকাজের প্রতি প্রেরণা দেওয়া এবং সত্যকে স্বীকার করা। সুতরাং যে ব্যক্তি এটা বুঝতে পারবে (যে, সে ফিরিশতার দ্বারা উপকৃত হচ্ছে), তাহলে তার উচিত এটাকে আল্লাহর বিশেষ দান মনে করা এবং এজন্য আল্লাহর গুণগান করা। আর যে ব্যক্তির অবস্থা এর বিপরীত হবে, সে যেন শয়তানের (অনিষ্ট) থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে। অতঃপর নবীজী (কোরআন পাকের এই আয়াতটি) …..”শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্য্যময়, সর্বজ্ঞ।” (তিরমিজি ২৯৯৮, তাফসিরে ইবনে কাসির)
তাই যখন দারিদ্র্যতার ভয় আসবে বিশ্বাস রাখতে হবে আল্লাহ প্রাচুর্য্যময় আর যখনই অশ্লীলতার আশংকা জাগবে স্মরণ করবেন আল্লাহ সবকিছু দেখেন ও জানেন।
ওলহান ও খিনজির
● হযরত উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনাব রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
অযূরও এক শয়তান আছে, যার নাম ‘অল্হান’। সুতরাং তোমরা পানির অপচয় থেকে বেচে থাকো। এরকম করলে শয়তান পালাবে)।
‘খিনজির/খানজাব’ – বিশেষ একপ্রকার জিন, যারা মানুষ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন তাদেরকে নানান রকম চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দেয়, লোকদেরকে সালাত থেকে অমনোযোগী ও উদাসীন করে তোলে। এর ফলে তারা সালাতে ভুল করে, কত রাকাত পড়েছে মনে থাকেনা, কোনটা কি করছে সন্দেহে পড়ে যায়, সুরা-ক্বিরাতে উল্টা-পাল্টা করে। একারণে তাদের সালাতে সওয়াবও কমে যায়। তাই আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে যথাযথ খুশু (ভয়) ও খুজু (বিনয়, স্থিরতা) সহকারে মনোযোগী হয়ে সালাত আদায় করার জন্য।
● রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সালাতের জন্য যখন আযান দেওয়া হয় তখন শয়তান সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পলায়ন করে, যেন সে আযানের শব্দ না শুনতে পারে, আযান শেষ হলে সে আবার লোকালয়ে ফিরে আসে। (সালাতের জন্য মসজিদে) ইকামত আরম্ভ হলে (শয়তান) আবার পলায়ন করে। ইকামত বলা শেষ হলে পুনরায় উপস্থিত হয় এবং ওয়াসওয়াসা ঢেলে দিয়ে সালাত আদায়রত ব্যক্তি ও তার অভীষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যে সকল বিষয় তার স্বরণ ছিল না, সেই সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট করে সে বলতে থাকেঃ অমুক বিষয় স্বরণ কর, অমুক বিষয় স্বরণ কর। ফলে সেই ব্যাক্তি কত রাকাত সালাত পড়েছে, এমনকি সেটাও ভুলে যায়।” (মুয়াত্তা মালিকঃ সালাত অধ্যায় ৩, হাদিসঃ ১৫২)।
শয়তান যখন নামাযের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত আযান শুনে পালিয়ে রোহা চলে যায়।” বর্ণনাকারী বলেন: মদীনা শরীফ থেকে রোহা ৩৬ মাইল দূরে অবস্থিত। (মুসলিম, ২০৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৮৮)
অপরদিকে – ভালো জিন আযান শুনে এমনকি কেয়ামতের দিন সাক্ষ্য দিবে।
আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (রহ.) আবদুল্লাহ ইবন আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ সায়ীদ খুদরী (রা.) তাকে বললেন, আমি দেখছি তুমি বকরি চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালোবাস। তাই তুমি যখন বকরি চরাতে থাক বা বন-জঙ্গলে থাক তখন উচ্চকন্ঠে আজান দাও। কেননা, জিন, ইনসান বা যেকোনো বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শুনবে, সে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে স্বাক্ষ্য দিবে। আবূ সায়ীদ (রা.) বলেন, একথা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে শুনেছি। (বুখারী শরীফ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৫৮২)।
তার মানে বনে জঙ্গলে মুসলিম জিন থাকতে পারে, সুতরাং তাদের বিরক্ত করা অনাধিকার চর্চা।
শক্তিশালী ইফরিত
কুরআনে বর্ণিত,
“সুলায়মান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্মসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে বিলকীসের সিংহাসন আমাকে এনে দেবে? জনৈক ইফরিত-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং আমি একাজে শক্তিবান, বিশ্বস্ত।”
সুরা নামল ৩৮-৩৯
সুলায়মান (আঃ) জেরুজালেম হতে শাসন করতেন অপরদিকে রানী বিলকীসের সিংহাসন ছিল ইয়েমেনের সাবায় যা বর্তমানে মারিব নামে পরিচিত। কয়েকশো মাইলের দূরত্ব স্বত্বেও দ্রুত সিংহাসন এনে দেওয়ার কথা প্রমান করে ইফরিত জ্বিন দ্রুতগতি সম্পন্ন ও শক্তিশালী। অনেক আলেমদের অভিমত- তারা কোন বস্তুকে চোখের আড়াল করে অন্যখানে নিয়ে যেতে পারে এজন্য জাদুকররা জাদুর জন্য ওদের সাহায্য নেয়।
● রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “গতকাল রাতে আমার সালাত নষ্ট করার জন্য জ্বিনদের মধ্য হতে এক ‘ইফরীত’ (জিন) থু থু নিক্ষেপ করেছিল। তবে আল্লাহ তাআ’লা তার উপরে বিজয়ী হতে আমাকে সাহায্য করেছেন। সকালে তোমাদের সবাইকে দেখানোর জন্য আমি তাকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে চেয়েছিলাম। তারপর আমার ভাই সুলায়মানের দুয়ার কথা আমার মনে পড়ল। (আমার ভাই সুলায়মান আল্লাহর কাছে এই বলে দুয়া করেছিলেন), “হে আমার মালিক, (আমি যদি কোনো ভুল করি তাহলে) তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি আমাকে এমন এক সাম্রাজ্য দান করো, যা আমার পরে আর কেউ কোনোদিন পাবে না, তুমি নিশ্চয়ই মহানদাতা।”( সুরা সোয়াদঃ ৩৫।)” সহীহ বুখারীঃ ৭৫, সহীহ মুসলিমঃ ১১০৪।
ডুবুরি ও কারুকার্য শিল্পে দক্ষতা
আল্লাহ বলেন-
“আর সকল শয়তানকে তার অধীন করে দিলাম, যারা ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী’। ‘এবং অন্য আরও অনেককে অধীন করে দিলাম, যারা আবদ্ধ থাকত শৃংখলে”
ছোয়াদ ৩৮/৩৭-৩৮
আরও উল্লেখ রয়েছে –
“তারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাষ্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লীর উপরে স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত…”
সাবা ৩৪/১৩
সুলায়মান (আঃ) এর নিকট অনেক বিজ্ঞ মানুষ থাকা স্বত্বেও তিনি জ্বিন দ্বারা দুর্গ, অট্টালিকা নির্মাণ করতো এবং ওরা ডুবুরির কাজ করত।
আল্লাহ বলেন-
“তাকে বলা হ’ল, প্রাসাদে প্রবেশ করুন। অতঃপর যখন সে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করল, তখন ধারণা করল যে, এটা স্বচ্ছ গভীর জলাশয়। ফলে সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলায়মান বলল, এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ। বিলক্বীস বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছি। আমি সুলায়মানের সাথে বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণ করলাম”
সুরা নামল
তার মানে বুঝা যায় নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞান উন্নত ও ওরা পানিতে অনেকক্ষণ থাকতে পারে। এছাড়া মূর্তির গায়ে শয়তান জিন থাকে। খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা:) এরকম দেখতে পান ও উযযা মূর্তিকে ভাঙ্গেন।
ইমাম বায়হাকী মুহাম্মাদ ইব্ন আবূ বকর ফকীহ – আবুত্ তুফায়ল থেকে বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ্ (সা) মক্কা বিজয়ের পর খালিদ ইব্ন ওলীদকে নাখলায় প্রেরণ করেন।
কারণ, তথায় উয্যা মূর্তি স্থাপিত ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নির্দেশ পেয়ে তিনি সেখানে গমন করেন। সে মূর্তি তিনটি মূল্যবান কাঠের পায়ার উপর স্থাপিত ছিল।
খালিদ ঐ পায়াগুলি কেটে দেন এবং যে ছাদের নীচে মূর্তি ছিল সে ছাদও ধ্বসিয়ে দেন। এরপর তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে সবকিছু অবহিত করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁকে বললেন, পুনরায় ফিরে যাও, তুমি কিছুই করতে পারনি। সুতরাং খালিদ আবার সেখানে ফিরে গেলেন। উয্যা মূর্তির সেবকগণ খালিদকে দেখেই ভীত বিহ্বল হয়ে পাহাড়ে গিয়ে উঠলো।
পালাবার সময় তারা বলতে লাগলোঃ ওহে উয্যা ! ওকে নিশ্চল করে দাও। ওকে অন্ধ করে দাও। যদি তা না পার, তবে নিজে লাঞ্ছিত হয়ে মরে যাও। রাবী বলেন, খালিদ মূর্তির কাছে পৌঁছলে দেখেন, এক উলংগ এলোকেশী নারী, মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে মাথায় ও মুখে মাখছে। খালিদ তাকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করলেন। তারপর তিনি ফিরে এসে নবী করীম (সা)-কে ঘটনা জানালে তিনি বললেন : এটাই প্রকৃত উয্যা। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ৪ খন্ড -৫৪৫)
এছাড়া টয়েলেটেও খারাপ জিন থাকে। সুতরাং যারা জিন দেখতে দূরে যান আশেপাশের শত শত জিন রয়েছে পারলে এগুলো দেখুন।