ধরুন কেউ একজন মুসলিম দেশের তৈরি মদ পান করে, আর অপরজন কাফেরদের তৈরি মদ পান করে। এখন আপনি ভাবলেন ও বললেন – দেশী মদ যে পান করে সে দেশপ্রেমিক বা ইসলামপ্রেমী!! কারণ সে তথাকথিত মুসলিম দেশের নাম ও অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে। অপরদিকে যে কাফের দেশের মদ পান করে সে দেশদ্রোহী। অথচ মদ মূলত হারাম তা দেশী হোক অথবা বিদেশী। তার সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই এটা বিজাতীয় নিয়মনীতি।
একই জিনিস কি খেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়!? কেউ অমুক দল বা দেশ সমর্থন করলে ইসলাম বা দেশপ্রমী আর এর বিপরীত হলে দেশদ্রোহী। অথচ এই ধরনের ক্রীড়া হারাম তার সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই, এগুলো বিজাতীয় নিয়মনীতি।
কিন্তু এসব খেলাকে কেন্দ্র করে উম্মত দলে দলে বিভক্ত, একে অপরকে উপহাস, অবজ্ঞা, মারামারি করে ফেতনা সৃষ্টি করছে।
আল্লাহ বলেন,
“হে বিশ্বাসীগণ! একদল পুরুষ যেন অপর একদল পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হয়, তারা উপহাসকারী দল অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং একদল নারী যেন অপর একদল নারীকেও উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হয়, তারা উপহাসকারিণী দল অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা (এ ধরনের আচরণ হতে) নিবৃত্ত না হয় তারাই সীমালংঘনকারী।”
সুরা হুজুরত -১১
অথচ- রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে, সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮১)।
পবিত্র কোরআনের বক্তব্য এমন,
‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দিয়ে। ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদের, যারা ধৈর্যশীল এবং এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদের, যারা মহা ভাগ্যবান।’
সুরা হামিম সাজদা, আয়াত : ৩৪-৩৫
আসুন দেখে নিই যেসব কারণে ক্রীড়া হারাম হতে পারে-
প্রায় দেখা যায় আমরা আমাদের তারকা খেলোয়াড়দের জোর করে ধার্মিক বানাতে ব্যস্ত থাকি যে মুসলিম ক্রিকেটার সেঞ্চুরি করার পর সিজদাহ দিচ্ছে মাটিতে বা তারা রোযা রেখে খেলছে। কিন্তু এমন অজ্ঞতা আমাদের মাঝে বিরাজ করছে যে আমরা সহজ জিনিসগুলো খেয়াল করি না। ফকীহগণ ঐক্যমত টাকা, অহংকার বা সম্মানের দাবিতে যেসব খেলা হয় তা হারাম। আর খেলার শুরু হয় জাতীয় পতাকাকে দাড়িয়ে সম্মানের মাধ্যমে। অথচ রাসুলের (সা:) পতাকা হল কালেমার কোন জাতীয়তাবাদের পতাকা না।
রাসুল (সা:)-কেও দাড়িয়ে সম্মান করা হারাম ছিল, আর যে ব্যক্তিকে সম্মান করে দাড়ানো হয় সে যদি খুশি হয় তার স্হান জাহান্নাম (তিরমিযি ২৭৫৪-৫৫, আবু দাউদ, বুখারী -৩০৪৩, মুসলিম ১৭৬৮)। কারণ দাড়িয়ে সম্মান পাওয়ার যোগ্য শুধু আল্লাহ, সালাতে বান্দা দাড়িয়ে আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) ও আনুগত্যের স্বীকৃতি দেয়। সেখানে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতকে দাড়িয়ে রাষ্ট্রের হামদ (প্রশংসা) ও আনুগত্যের স্বীকৃতি দেয়।
সেঞ্চুরি করার পর দাড়িয়ে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে এসব খেলায়। তার উপরে জার্সিগুলো হল প্রাণীর ছবিতে ভরা যা শিরকের প্রতীক। আর জাতীয় সংঙ্গীতে দাড়ানো ও এর ভাষা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। বলা হচ্ছে তোমার আকাশ, তোমার বাতাস অথচ আকাশ, বাতাস বাংলার নয় আল্লাহর। “তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও তার মধ্যবর্তী সব কিছুর রব।” (সুরা মারিয়ম -৬৫)।
কোন খেলোয়াড় বা সম্মানিত কেউ মারা গেলে কালো ব্যাজ লাগানো, এক মিনিট নিরবতা পালন করা যা খ্রিস্টানদের ধর্মীয় রীতি। খ্রিস্টানরা মনে করে কেউ মারা গেলে যিশু তার আত্মা নিতে আসে তাই তারা সম্মান জানাতে নিরবতা পালন করে যা সরাসরি শিরক। অথচ খেলোয়াড়দের প্রায় এসব রীতি মানতে দেখা যায়। এছাড়া খেলাগুলো পরিচালিত হয় জাতীয়তাবাদের পরিচয়ে যে ব্যাপারে রসুলের (সাঃ) বহু সতর্কবাণী রয়েছে- “যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের উপর মৃত্যুবরণ করে, আহ্বান করে, জাতীয়বাদের জন্য হত্যা করে তার স্হান জাহান্নাম।” (আবু দাউদ)।
তাই খেলা ও খেলোয়াড়দের শুধু খোলোয়াড় হিসেবে দেখুন। এখানে দেশপ্রেম ও ইসলামকে টানা বোকামী।
আর খেলোয়াড়, মডেল, তারকাদের কেন ভালোবাসেন? তাদের সুচরিত্রের কারণে না তারা খেলায় (হারাম) লিপ্ত হওয়ার কারণে!? আর আপনি তাতে বিনোদন অনুভব করেন সেজন্য। ইসলামের কারণে কাউকে ভালোবাসা মুমিনের পরিচয়, হারাম কাজ করলে মুমিন লজ্জিত হবে কিন্তু হারামের কারণে কাউকে ভালোবাসালে বা হারামকে ভালোবাসলে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।