এদেশে দুর্নীতি, ধর্ষন, চুরি, ডাকাতি, পরকীয়া নিত্যদিনের ঘটনা। কোন ঘটনা ঘটার পর সাময়িক আন্দোলন হয় এরপর আরেকটা ঘটনা এসে তার স্থান দখল করে নেয়। বিচার ব্যবস্থার দেরির কারণে অপরাধী ঘটনার আড়ালে চলে যায়। আমরা আন্দোলন করি, যে যার মত বিচার চাই। কেউ বলে ক্রসফায়ার, কেউ বলে ফাঁসি।
ভাই, কে বিধানদাতা আপনি না আল্লাহ!? কে মহাজ্ঞানী মানুষ না আল্লাহ? প্রতিদিনই সালাতে পড়ছেন- সকল প্রশংসা বিশ্বপ্রতিপালকের (সার্বভৌমত্ব আল্লাহর), যিনি বিচার দিবসের মালিক (সুরা ফাতেহা)। আপনি কার আইনে বিচার চাইবেন মানবরচিত আইনে? হাজার বছর ধরে মানবরচিত আইন কি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে?
মানবরচিত আইন কি অদ্ভূত!! প্রেমিক-প্রেমিকা নিজ ইচ্ছায় যা করে তা বৈধতা পায় (হালাল)। অথচ আল্লাহ তা অবৈধ (হারাম) বলেছেন। যারা তা মানছেন বা যারা আইনদাতাদের সাহায্য-সহযোগীতা করছেন তারা কি আল্লাহর বদলে এসব আইনদাতাকে মহাজ্ঞানী মানছেন না?
মানব রচিত আইনের ফলে কিছু তথাকথিত মানবতাবাদীর জন্ম হয় তারা কিছু অপরাধে টকশোসহ, মিডিয়া সরগরম করে অথচ এর চেয়ে বড় অপরাধে চুপ থাকে। যেমন- ওদের দেখবেন বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সরব আবার পরকিয়ার ক্ষেত্রে নিরব।
কিন্ত এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে লাখ লাখ লোক আপন মায়ের সাথে জেনা করার সমপরিমাণ গোনাহে লিপ্ত এটা যেন কোন অপরাধ নয়।
রসুলুল্লাহ’ (সাঃ) বলেন- সুদ হল সত্তর প্রকার পাপের সমষ্টি, তার মাঝে সবচেয়ে নিম্নতম হল আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা। (ইবনে মাজাহ)।
আপনি সমাধান খুজবেন মানরচিত কিতাবে, টকশোর বক্তব্যে, আল্লাহর কিতাব বা তার বাণীতে নয় শান্তি আসবে কি করে?
এমনি এক ঘটনা ঘটেছিল- যেখানে চুরির দায়ে গ্রামের মেম্বার অভিযুক্ত চোর ও তার মাকে প্রকাশ্যে শাস্তি (জুতাপেটা ও চুল কমানো) দিল। মাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল কারণ তিনি নাকি চোরের প্রশয়দাতা। যেখানে অনেক হুজুরদেরও সমর্থন ছিল। অথচ উক্ত এলাকার চেয়ারম্যান মহিলা যিনি ও তার ছেলে লুটপাট, চাঁদাবাজির জন্য বিখ্যাত।
প্রশ্ন ছিল- মেম্বার বা বাকীরা কি চেয়ারম্যান ও তার সন্তানকে একই শাস্তি দিতে পারবেন!? তাহলে এই কেমন জাহেলিয়াতের আইন- যেখানে অসহায়ের জন্য শাস্তি একরকম আর ক্ষমতাসীনদের জন্য অন্যরকম!! এটা হল আসলে বনী ইসরায়েলের জাহেলিয়াতের নীতি যা বর্তমান জাহেলরা অনুসরণ করে চলেছে-
আল্লাহ বলেন-
হে রসূল, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলেঃ আমরা মুসলিম অথচ তাদের অন্তর মুসলিম নয় এবং যারা ইহুদী; মিথ্যা বলার জন্যে তারা গুপ্তচর বৃত্তি করে। তারা অন্যদলের গুপ্তচর, যারা আপনার কাছে আসেনি। তারা বাক্যকে (তাওরাতের) স্বস্থান থেকে পরিবর্তন করে। তারা বলেঃ যদি তোমরা এ নির্দেশ পাও, তবে কবুল করে নিও এবং যদি এ নির্দেশ না পাও, তবে বিরত থেকো। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার জন্যে আল্লাহর কাছে আপনি কিছু করতে পারবেন না। এরা এমনিই যে, আল্লাহ এদের অন্তরকে পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্যে রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং পরকালে বিরাট শাস্তি। (সুরা মায়েদাহ -৪১)
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশ দিয়ে এক ইয়াহুদীকে মুখ কালো ও বেত্ৰাঘাত করা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তাদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা কি ব্যভিচারের শাস্তি এরকমই তোমাদের কিতাবে পাও? তারা বললঃ হ্যাঁ। তখন তিনি তাদের আলেমদের একজনকে ডেকে বললেন, “যে আল্লাহ মূসার উপর তাওরাত নাযিল এটাই ব্যভিচারের শাস্তি? সে বলল, না।
তবে যদি আপনি আমাকে এর দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস না করতেন, তাহলে আমি কখনই তা বলতাম না। আমাদের কিতাবে আমরা এর শাস্তি হিসেবে ‘প্রস্তারাঘাতকেই দেখতে পাই। কিন্তু এটা আমাদের সমাজের উঁচু শ্রেণীর মধ্যে বৃদ্ধি পায়।
ফলে আমাদের উঁচু শ্রেণীর কেউ সেটা করলে তাকে ছেড়ে দিতাম। আর নিম্নশ্রেণীর কেউ তা করলে তার উপর শরীআত নির্ধারিত হদ (তথা রজমের শাস্তি) প্রয়োগ করতাম।
তারপর আমরা বললাম, আমরা এ ব্যাপারে এমন একটি বিষয়ে একমত হই যা আমাদের উঁচু-নীচু সকল শ্রেণীর উপর সমভাবে প্রয়োগ করতে পারি। তা থেকেই আমরা রজম বা প্রস্তারাঘাতের পরিবর্তে মুখ কালো ও চাবুক মারা নির্ধারণ করি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি প্রথম আপনার সেই মৃত নির্দেশকে বাস্তবায়ন করব, যখন তারা তা নিঃশেষ করে দিয়েছে। তখন তাকে রজম করার নির্দেশ দেয়া হল এবং তা বাস্তবায়িত হলো। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেন। (মুসলিম)
অথচ ইসলামের সৌন্দর্য দেখেন বিচার ব্যবস্থা সবার জন্য সমান।
সাঈদ ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মাখযুমী সম্প্রদায়ের জনৈকা মহিলার ব্যাপারে কুরাইশ বংশের লোকদের খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল যে কিনা চুরি করেছিল। সাহাবাগণ বললেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কে কথা বলতে পারবে? আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পাত্র উসামা (রাঃ) ছাড়া কেউ এ সাহস পাবে না।
তখন উসামা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কথা বললেন। এতে তিনি বললেনঃ তুমি আল্লাহ তা’আলার দেওয়া শাস্তির বিধানের ক্ষেত্রে সুপারিশ করছ? এরপর তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করলেন এবং বললেনঃ হে মানব মণ্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের লোকেরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে।
কেননা কোন সম্মানিত লোক যখন চুরি করত তখন তারা তাকে রেহাই দিয়ে দিত। আর যখন কোন দুর্বল লোক চুরি করত তখন তার উপর শরীয়তের শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ এর কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে তবে অবশ্যই মুহাম্মাদ তাঁর হাত কেটে দেবে। (সহীহ বুখারী -৬৩৩১)
আল্লাহ বলেন-
“আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন- যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। অনন্তর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে নিন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গোনাহের কিছু শাস্তি দিতেই চেয়েছেন।
মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান। তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?” (সুরা মায়েদাহ, ৪৯-৫০)।
তাই আল্লাহর আইনের বিপরীত জাহেলদের বিধান হতে বিরত থাকুন, স্বেচ্ছায় তাদের বিচার করার অধিকার দিয়ে ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্থ করা উচিত কি!!?