খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় ও পরবর্তী দীর্ঘসময় মুসলিমরা হিজরি সাল ও আরবি মাস মেনে চলতো।
কিন্তু বর্তমানে মুসলিমরা আরবি কিছু মাস ও জুমাবার নাম জানলেও বাকী মাস ও বারের নাম তাদের অজানা। মুসলিমরা আজ নববর্ষ বা new year বরনের নামে যেসব উৎসব ও নিয়মনীতি অনুসরন করছে তা শিরকী উৎসব।
আসুন জেনে নিই – ইংরেজি মাস ও বারের ইতিহাস!!
১। Sunday: এটা হল সূর্যের দিন। গ্রিক পুরাণমতে, হেলিওস হচ্ছেন এক শক্তিশালী দেবতা। ইনি সূর্যদেব হিসেবেও খ্যাত। গ্রিক ‘হেলিওস’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সূর্য। রোমান ভাষায় Sol বলতে সূর্যরূপী দেবতাকেই বোঝানো হয়, যাকে স্যাক্সন ভাষায় বলা হতো Sunne, আর সেখান থেকেই ইংরেজি Sun. পৃথিবীর আকাশ থেকে দেখতে পাওয়া জ্যোতিষ্কগুলোর মধ্যে সূর্যই সবচেয়ে উজ্জ্বল, যার আলোয় পুরো পৃথিবী আলোকিত হয়। সূর্যই অন্যসব জ্যোতিষ্ক শাসন করে বলে ল্যাটিন ভাষায় রবিবারকে dominica বলে, যা Lord’s Day নামেও পরিচিত।
২। Monday: এটা হল চাঁদের দিন। এটা আসলে Moon’s day থেকে পরিবর্তিত হয়ে এই রূপে এসেছে। গ্রিক পুরাণ মতে, selenes হচ্ছেন চাঁদের দেবী। রোমান ভাষায় এই চাঁদকে বলে Moon. আরেকটি বহুল প্রচলিত নাম হচ্ছে Luna, যিনি কিনা Sol (সূর্য) দেবতার পরিপূরক এক নারী সত্ত্বা।
৩। Tuesday: গ্রিক শাস্ত্রমতে, Ares নামে এক দেবতা আছেন, যিনি যুদ্ধ আর ধ্বংসের প্রতীক। এর নামে আকাশে দৃশ্যমান মঙ্গলগ্রহের নাম রাখা হয়েছে Ares. আর এই গ্রহের নাম অনুসরণ করেই আবার গ্রিক ভাষাতে মঙ্গলবারের নাম রাখা হয়েছে ἡμέρᾱ Ἄρεως মানে ‘Ares এর দিন’। রোমান ভাষায় অনুরূপ দেবতা হচ্ছেন Mars। তবে, স্যাক্সনদের ধর্মবিশ্বাস মতে, Mars এর অনুরূপ দেবতা মানে যুদ্ধ আর ধ্বংসের দেবতা হলেন Tiu, সেখান থেকেই ইংরেজি Tuesday.
৪। Wednesday: গ্রিক পুরাণ মোতাবেক দেবতা জিউসের এক সন্তানের নাম হারমিস। এই হারমিস দেবতা বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। Hermes দেবতার নামানুসারে গ্রিক ভাষায় সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্রহের নাম রাখা হয়েছে Hermes. আর বুধবারের নামও তাই। ওদিকে রোমান মাইথোলজি বলে, ব্যবসা-বাণিজ্যের দেবতা হচ্ছেন Mercury. তবে ইংরেজি ভাষায় কিন্তু দিনটির নাম Mercury Day নয়; বরং Wednesday, যা এসেছে জার্মান প্রভাবিত বিশেষ দেবী Woden এর নাম থেকে। এই ওডেন দেবীর জন্য বরাদ্দকৃত দিনের নাম Woden’s Day বা Wednesday.
৫। Thursday: মানে Thor’s day. অ্যাংলো-স্যাক্সন বিশ্বাস মোতাবেক থর হলেন থান্ডার বা বজ্রপাতের দেবতা। তাই, তার নামে একটি দিনের নাম রাখা হলো Thursday. গ্রিক ভাষায় এই ‘বজ্রপাতের পিতা’ খ্যাত দেবতাটি হচ্ছেন জিউস। তাই তো গ্রিক ভাষায় সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহটির নাম প্রচলিত গল্পগাথার সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে ‘জিউস’, আর বারের নামটিও ‘জিউসের বার’। অবশ্য এই গ্রহকে ইংরেজিতে আমরা কিন্তু ‘থর’ বা ‘জিউস’ নামে চিনি না, চিনি রোমান ‘জুপিটার’ নামে।
৬। Friday: গ্রিক ‘আফ্রোদিতি’ বা রোমান ‘ভেনাস’ হচ্ছেন সৌন্দর্য, প্রেম ও কামনার দেবী, তার নামেই শুক্রগ্রহের নাম। আবার এই গ্রহের নামেই দিনটির নাম ‘আফ্রোদিতির বার’ (গ্রিক) আর ‘ভেনাসের বার’ (রোমান)। অ্যাংলো-স্যাক্সনদের কাছে অবশ্য সৌন্দর্যের দেবী হলেন ফ্রিগ, সেখান থেকেই ইংরেজি ফ্রাই ডে নামের উৎপত্তি।
৭। Saturday: Saturn’s Day বা স্যাটার্নের দিন। স্যাটার্ন হলেন রোমান দেবতা যিনি খুশি হলে ভালো ফসল দেন কৃষকদেরকে। গ্রিক ভাষায় অনুরূপ দেবতা হলেন ক্রোনাস। অ্যাংলো-স্যাক্সন ভাষায় এই নামের কোনো প্রতিশব্দ পাওয়া যায়নি। ইংরেজিতে Saturday নামটি সরাসরি রোমান থেকে আত্তীকরণ করা হয়েছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভাষায়, এ দিনকে বোঝাতে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়, তার অর্থ ‘স্নানবার’। সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা সপ্তাহের শনিবারে কেবল স্নান করতো, এজন্যই হয়তো এমন নাম।
চলুন এইবার মাসের নামগুলোকে দেখি
জানুয়ারি: ‘জানুস’ নামের একজন রোমান দেবতার নামে এই মাসের নাম রাখা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী দেবতা জানুস’কে বলা হয় ‘গড অফ ডোরস’। কোনও কিছু শুরু করার দরজা। বিভিন্ন জাদুঘরে এই দেবতার দু’দিকে দুটো মুখবিশিষ্ট মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। এমনটা মনে করা হয় যে, ইনি ভূত এবং ভবিষ্যৎ দুটোই দেখতে পেতেন। তাই মনে করা হয় আগের বছরের শেষ আর নতুন বছরের শুরুর দিকে ঘোরানো তার দুই মুখ।
ফেব্রুয়ারি: অনেক কাল আগে থেকে পাশ্চাত্যে বসন্তকালের শুরুর দিকে এক ধরনের উৎসব পালন করা হত যার নাম ছিল ‘ফেব্রুয়া’। এই উৎসবে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট সব পরিষ্কার করা হত। এই শোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের আত্মা এবং মনেরও এক ধরনের শুদ্ধিকরন হত। আর এই উৎসবের নাম থেকেই মাসটির নামকরণ করা হয় ‘ফেব্রুয়ারি’।
মার্চ: এই মাসের নামকরণের পেছনে দুটো তত্ত্ব আছে। আর দুটোই গড়ে উঠেছে রোমান যুদ্ধদেবতা ‘মার্স’ কে ঘিরে। এই মাস থেকেই প্রবল ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে বলে এর হিংস্রতা বা প্রচণ্ডতাকে তুলনা করা হত ‘মার্স’ এর সাথে। আবার আরেক মত অনুসারে, আগে মার্চ মাস দিয়ে শুরু হত রোমানদের বছর। তাই এই সময়ে সব যুদ্ধের অবসান ঘটত। সেই সুত্র ধরে যুদ্ধদেবতা মার্সের নামানুসারে নামকরণ করা হয় মাসটির।
এপ্রিল: এই মাসের নামকরণ নিয়েও আছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কেউ কেউ মনে করেন ‘দ্বিতীয়’ কথাটির লাতিন শব্দ থেকে এসেছে নামটি। আবার অনেকে মনে করেন লাতিন শব্দ ‘আপেরিরে’ যার অর্থ খোলা বা ফোটা, এর থেকে এসেছে নামটি। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয় এপ্রিল মাসে সবকিছু নতুন করে ফোটে। প্রকৃতি সাজে এক নতুন রূপে আর সেই বিচারেই এর নামকরণ। আরেক মতে এই নামকরণের পেছনে আছেন রোমান দেবী ‘অ্যাফ্রোদিতির নাম।
মে: রোমানদের এক দেবী ছিলেন। তার নাম ছিল ‘মেইয়া’। তিনি দেবতা অ্যাটলাসের মেয়ে এবং মারকিউর তার ছেলে। কথিত আছে এই দেবীই ছিলেন সমস্ত শস্যের রক্ষাকর্ত্রী। তাই এই শস্য ফলনের মাসটিকে তার নামে উৎসর্গ করা হয়।
আর জুলাই মাস জুলিয়াস সিজারের নামে ও আগস্টাসের নামে আগস্ট হয়। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সংখ্যা অনুযায়ী রাখা হয় যার অর্থ ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম মাস কারণ পূর্বে ১ম মাস মার্চ ধরা হত।
আজ যারা new year মানছে তারা মনের অজান্তে জানুস দেবতার উৎসব পালন করছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর ইয়াহূদী ও নাসারারা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২০]
রাসূল (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ, অনুসরণ ও সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে”। (আবু দাউদ)