বর্ষবরণ ও উৎসব ফেতনা

মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ও ইবাদতের জন্য দিন, সময়, তারিখ হিসাব রাখা প্রয়োজন।

নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহ্‌র বিধানে আল্লাহর কাছে গণনায় মাস বারটি তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।(সুরা তওবা -৩৬)

আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারটি নির্ধারিত, এতে কম বেশি করার কারো সুযোগ নেই। জাহেলিয়াতের লোকেরা বদলালেও তোমরা সেটা বদলাতে পার না। তোমাদের কাজ হবে আল্লাহর এ নির্দেশ মোতাবেক সেটাকে ঠিক করে নেয়া। [কুরতুবী]

বিদায় হজ্জের সময় মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খোতবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মানিত মাসগুলোকে চিহ্নিত করে বলেন: তিনটি মাস হল ধারাবাহিক— যিলকদ, যিলহজ ও মহররম, অপরটি হল রজব। [বুখারী: ৩১৯৭; মুসলিম: ১৬৭৯]

আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় সময় আবার ঘুরে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফিরে এসেছে। যে পদ্ধতিতে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিনের মত। মাসের সংখ্যা বারটি। তন্মধ্যে চারটি হচ্ছে, হারাম মাস। তিনটি পরপর যিলকদ, যিলহজ, ও মুহাররাম। আর হচ্ছে মুদার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাস সানী ও শাবান মাসের মাঝখানে থাকে। [বুখারী; মুসলিম:]

প্রতিটি ধর্মের লোকেরা তাদের দিন, তারিখ, সময় হিসেব করে ইবাদত ও উৎসব করে। দীর্ঘসময় ধরে মুসলিমরা হিজরী সাল ও মাস গননা করতো। যাতে তাদের ইবাদতের দিনগুলো সহজভাবে চেনা যেত। রসুলুল্লাহ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পর দুটি উৎসব উদযাপন বন্ধ করেন। একটি হল নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন, অন্যটির নাম ছিল মিহিরজান (বায়হাকী, খন্ড -২)। এই উৎসবের বিপরীতে মুসলিমদের আনন্দ উৎসব নির্ধারিত হয় দুই ঈদে।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।” (আহমদ, আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৪৩৪৭)। যারা থার্টি ফাস্ট মানছে তারা মনের অজান্তে শিরকী উৎসবে জড়াচ্ছে। অনেকে উৎসবের নামে মনের অজান্তে শিরকী উৎসবে জড়াচ্ছে। সম্রাট আকবর ১ম বাংলা সাল, মাস ও বার মুসলিমদের মাঝে চালু করেন। সমস্যা হল এসব মাস ও বারের নাম শিরকের সাথে সম্পর্কিত।

১। বৈশাখ- বিশাখা দেবী, নক্ষত্রের নাম অনুসারে এসেছে। বিশাখা দেবীকে একজন জ্ঞানী পরামর্শদাতা এবং প্রেমময় বিষয়ে একজন কূটনীতিক, এবং রসিকতায় খুব বিশেষজ্ঞ। তিনি ঐশ্বরিক দম্পতিদের সাথে দেখা করার জন্য এবং প্রেমের বিভিন্ন মেলো অভিজ্ঞতার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করতে বিশেষজ্ঞ। তিনি দক্ষতার সাথে শ্রীমতি রাধিকা এবং শ্রী মাধবের ঐশ্বরিক রূপগুলিতে ফুল এবং পাতার নকশা আঁকেন এবং ফুলের মালা দিয়ে তাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের মুকুট তৈরি করেন।

ব্যক্তিগতভাবে শ্রী শ্রী রাধা মাধবের কাপড়ের সূচিকর্মের পাশাপাশি, বিশাখা দেবী সখীদের এবং তাদের সহকারীদের তত্ত্বাবধান করেন যারা তাদের প্রভুর পোশাক তৈরি এবং যত্ন করে। তিনি বৃন্দা দেবীর দাসীদেরও নির্দেশ দেন যারা বৃন্দাবনের ফুল, লতা এবং গাছের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। আর মুমিনদের বিশ্বাস ফুল, ফসলের রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহর।

২। জৈষ্ঠা নক্ষত্র, ও অগ্নিদেবতার নাম থেকেই জ্যৈষ্ঠ মাসের নামকরণ।

৩। অষধা নক্ষত্রের নাম থেকেই আষাঢ় মাসের নামকরণ।

৪। শ্রাবণা নক্ষত্রের নাম থেকেই শ্রাবণ মাসের নামকরণ।

৫। ভদ্রা নক্ষত্রের নাম থেকেই ভাদ্র মাসের নামকরণ।
অনেকের মতে শ্রীকৃষ্ণের বাশি হতে ভাদ্র নাম এসেছে।

৬। আশ্বিনী নক্ষত্র ও অশ্বিনী কুমারের নাম থেকেই আশ্বিন মাসের নামকরণ।

৭। কৃত্তিকা নক্ষত্র, কার্তিক দেবতার নাম থেকেই কার্তিক মাসের নামকরণ।

৮। মৃগশিরা বা অগ্রহায়নী নক্ষত্রের নাম থেকেই অগ্রহায়ণ মাসের নামকরণ। অনেকের মতে সূর্য দেবতার পরিক্রমন হতে এসেছে।

৯। পুষ্যা নক্ষত্র, পার্বন নক্ষত্র থেকেই পৌষ মাসের নামকরণ।

১০। মঘা নক্ষত্রের নাম থেকেই মাঘ মাসের নামকরণ।

১১। ফাল্গুনি নক্ষত্র, জ্বলন্ত কাঠ বা যজ্ঞ জড়িত ফাল্গুন মাসের নামকরনে।

১২। চিত্রা নক্ষত্রের, বাসন্তী দেবীর শাড়ি হতে চৈত্র মাসের নামকরণ।

এছাড়া শুক্র – বৃহস্পতিবার সবই দেবদেবীর নাম। এসব মাসের সাথে বিভিন্ন পূজা, উৎসব জড়িত।

আর গ্রহ, নক্ষত্রের কারনে ঋতু পরিবর্তন হয় না, বরং আল্লাহ সুপরিকল্পিতভাবে পরিবর্তন করেন। তাই কখনও কখনও শীত, বসন্ত, বর্ষা আগে পিছে হয়।

আল্লাহ বলেন-

তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে তোমরা চিন্তা করেছ কি? তোমরাই কি তা মেঘ হতে বর্ষণ কর, না আমি বর্ষণ করি? (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৬৮-৬৯)

হাদিসে রয়েছে, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়াতে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন। সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। নামাযান্তে তিনি লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের প্রভু আজ রাতে কী বলেছেন? লোকেরা বললঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন।

তিনি বললেনঃ আল্লাহ বলেছেন, আজ সকালে আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আমার প্রতি ঈমানদার হয়েছে আবার কেউ কাফের হয়েছে। যে ব্যক্তি বলেছে, আল্লাহর ফযল ও রহমতে বৃষ্টি হয়েছে, সে আমার প্রতি ঈমান এনেছে আর নক্ষত্রকে অর্থাৎ বৃষ্টি বর্ষণে নক্ষত্রের প্রভাবকে অস্বীকার করেছে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বলেছে, অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টিপাত হয়েছে, সে আমাকে অস্বীকার করেছে আর নক্ষত্রের প্রতি ঈমান এনেছে’’। (বুখারী)।

আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার ফেতনা চেনা ও বুঝার তৌফিক দিক। আর খেলাফত ছাড়া সম্পূর্ণরুপে এগুলো নির্মূল করা যাবে না তবে আপাতত নিজেরা জাহেলী নিয়ম, উৎসব হতে বিরত থাকা ও অন্যদের সতর্ক করা ও সচেতন করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *