বন্যা, বিপদ হোক দ্বীনের পথে ফিরে আসার কারন

আমর নাকিদ (রহঃ) … যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন। এ সময়ে তিনি বললেনঃ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ নিকট ভবিষ্যতে সংঘটিত দুর্যোগে আরবরা ধ্বংস হয়ে যাবে। আজ ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীর এতটুকু পরিমাণ খুলে দেয়া হয়েছে। এ সময় সুফিয়ান (রহঃ) এর হাত দ্বারা দশের চক্র বানালেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধবংস হয়ে যাব? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপাচার বেশী হবে। (সহীহ মুসলিম -৬৯৭১)

যখন সমাজে, দেশে পাপ বৃদ্ধি পায় তখন মুমিন থাকা স্বত্বেও বিপদ-আপদ, বিপর্যয় হতে পারে। যা মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রিয় হবার পরীক্ষা, কাফের, ফাসেকের জন্য আল্লাহর কাছে ফিরে আসার সুযোগ নাহয় আযাব।

আল্লাহ বলেন-

অতঃপর তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে, তখন তারা আনুগত্যে বিশুদ্ধ হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। তারপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখন তারা শির্কে লিপ্ত হয়। (সুরা আনকাবুত-৬৫)

অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে –

মানুষকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার পালনকর্তাকে ডাকে, অতঃপর তিনি যখন তাকে নেয়ামত দান করেন, তখন সে কষ্টের কথা বিস্মৃত হয়ে যায়, যার জন্যে পূর্বে ডেকেছিল এবং আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে; যাতে করে অপরকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। বলুন, তুমি তোমার কুফর সহকারে কিছুকাল জীবনোপভোগ করে নাও। নিশ্চয় তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত। (সুরা যুমার-৮)।

যখনি কোন বড় বিপদ আসে কাফেররাও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ ডাকে, বিপদ শেষে আবার শিরকে লিপ্ত হয় অধিকাংশই। এমনকি ফেরাউনের মত তাগুতরা বিপদে একনিষ্ঠ আল্লাহর সাহায্য চাইতো। মুসাকে (আ) আহ্বান জানাতো দোয়া করার জন্য, ঈমান আনার মিথ্যা ওয়াদা করতো।

আল্লাহ বলেন-

“আর তাদের উপর যখন কোন আযাব পড়ে তখন বলে, হে মূসা আমাদের জন্য তোমার পরওয়ারদেগারের নিকট সে বিষয়ে দোয়া কর যা তিনি তোমার সাথে ওয়াদা করে রেখেছেন। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে এ আযাব সরিয়ে দাও, তবে অবশ্যই আমরা ঈমান আনব তোমার উপর এবং তোমার সাথে বনী-ইসরাঈলদের যেতে দেব।” (আল আরাফ: ১৩৪)

যখন করোনায় বিশ্ব ফেরাউনরা ভয়ে কাপছিল তখন বহুদেশে প্রকাশ্যে আযান, সালাত পড়তে দিল আর বহুদেশের সংসদ হতে মুসলিমদের দোয়া করতে বলল। যখন কোভিড কমে এল মুসলিম নির্যাতন বেড়ে গেল যেমনটা ফেরাউনদের অনুসারীরা করতো। আজ কাফের, মুশরিক, মুনাফেকরা একনিষ্ঠ আল্লাহর সাহায্য চাইছে।
আজ অনেক ইসলামবিদ্বেষীও মসজিদ, মাদ্রাসায় দোয়ার আয়োজন করবে, দান করবে।

আমরা সারাজীবন সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, সর্বশক্তিমান, বিপদে রক্ষাকারী হিসেবে আল্লাহকে মানলেও বিধানদাতা হিসেবে আল্লাহকে কতটা মানছি? আমল দ্বারা স্বীকার করে নিচ্ছি? অথচ কেউ যদি সব গুণবাচক নাম ও সত্তা মানে শুধু রিজিকদাতা অথবা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে অন্যকে মানে বা অন্যের কাছে রিজিক চায় তাহলে শিরক হবে। তাহলে আল্লাহর বিধানের বিপরীতে বান্দার কাছে বিধান চাইলে কি শিরক হবে না!? রিযিকদাতা, সৃষ্টিকর্তা আর বিধানদাতা এক আল্লাহই। আরবের কাফেররা রিযিকদাতা আল্লাহকে মানতো কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে শিরক করতো তাই তারা মুশরিক ছিল।

আল্লাহ বলেন –

যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আসমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে-আল্লাহ। বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি রহমত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে? বলুন, আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে। (সুরা যুমার -৩৮)

আজ আমাদের অনেকেই আসমান, জমিনের স্রষ্টা আল্লাহকে মানলেও বহু শিরকে লিপ্ত।

আল্লাহ বলেন-

“বিধান দেওয়ার ক্ষমতা এক আল্লাহরই।” (সুরা ইউসুফ আয়াত- ৪০)।

তিনি আরও বলেন-

“তারা কি জাহেলিয়াতের বিধান চায়? দৃঢ়বিশ্বাসীগণের নিকট আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা কে হতে পারে?” (সুরা মায়েদাহ- ৫০)।

আল্লাহর দ্বীনের বিপরীত সকল বিধানই জাহেলিয়াত, আমরা আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি করি অথচ তার পরিচয়, বিধান জানি না, তার বিধান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করে তার বিপরীত বিধান ও বিধানদাতার প্রশংসা ও প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি।

কুরআনে বর্নিত সাবা জাতির সাথে কিছুটা মিলে যায় বর্তমান পরিস্থিতি!

আল্লাহ বলেন –

নিশ্চয় সাবা সম্প্রদায়ের জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল একটি নিদর্শন : দু’টি উদ্যান, একটি ডানে ও অপরটি বামে, (তাদেরকে বলা হয়েছিল) ‘তোমরা তোমাদের রবের রিয্ক থেকে খাও আর তাঁর শোকর কর। এটি উত্তম শহর এবং (তোমাদের রব) ক্ষমাশীল রব’।
º
পরে ওরা আদেশ অমান্য করল। ফলে আমি ওদের ওপর বাঁধ-ভাঙ্গা বন্যা প্রবাহিত করলাম এবং ওদের বাগান দু’টিকে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দু’টি বাগানে, যাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউগাছ এবং কিছু কুলগাছ।
º
সে আযাব আমি তাদেরকে দিয়েছিলাম তাদের কুফরীর কারণে। আর আমি অকৃতজ্ঞ ছাড়া অন্য কাউকে এমন আযাব দেই না।

(সুরা সাবা-১৫, ১৬, ১৭)

সাবা ছিল ইয়েমেনের সমৃদ্ধ জাতি। যাদের ব্যাপক রহমত দেওয়া হয়েছিল। সহজে প্রচুর ফসল, ফল উৎপন্ন হতো।
কিন্তু তারা কুফরীতে লিপ্ত হয়। ফলে আল্লাহ তাদের বাধ ভাঙ্গা বন্যা দেন ফলে সুস্বাদু ফল, ফসলের বদলে বিস্বাদ ফলমূল, বরই, ঝাউগাছ হয়।

তারা পাহাড়ের মাঝে বাঁধ তৈরী করে পানি আটকে রাখার যে ব্যবস্থা করেছিল এবং তা চাষাবাদ ও বাগান সেচ করার কাজে লাগাত, আমি কঠিন বাঁধভাঙ্গা বন্যার দ্বারা সেই বাঁধকে ভেঙ্গে ফেললাম এবং সবুজ ও ফলদার বাগানকে এমন বাগানে পরিবর্তন করে দিলাম যাতে শুধু প্রাকৃতিক ঝাড় জঙ্গল থাকে। যাতে প্রথমতঃ কোন ফল হয় না। আর যদি কোন গাছে হয়, তবে তা তেতো, কষযুক্ত, যা কেউ সাধারণত খেতে চাইবে না। তবে কিছু কুল (বা বরই) গাছ ছিল তাতেও অধিক কাঁটা, আর কুল সামান্যই ছিল। আর এমন জোরে পানির স্রোত হলো যা সেই বাঁধ ভেঙ্গে ফেলল এবং পানি শহরেও প্রবেশ করে গেল। যাতে তাদের ঘর-বাড়ী ডুবে গেল এবং গাছপালা উজাড় করে পতিত জমিতে পরিণত করে দিল।

একটু ভাবুন- বিশ্বের বহুদেশে ফসল ফলানো বহু কষ্টের, অনেক দেশে তেমন ফসলও হয় না। অন্যতম ফসলসমৃদ্ধ দেশ ইউক্রেন ধ্বংসের মুখে। অথচ এইদেশে সহজে ফসল হয়। খালে-বিলে, নদী-সাগরে মাছ আজও বিদ্যমান। আম, জাম, কাঠালসহ বহু গাছে পানিও দেওয়া লাগতো না। শাপলা, কলমি, কচু এমনিতে হতো। আজ ফসল, ফল বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ইসলাম, জেহাদবিমুখ হওয়ায় কাফেররা আমাদের ভয় পায় না, বাঁধ ছেড়ে বন্যায় ভাসিয়ে দেয়। এগুলো কি দ্বীনের পথে ফিরে আসার সংকেত নয় কি!?

আল্লাহ বলেন,

বলুন, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তার রাসূল এবং তাঁর (আল্লাহর) পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশী প্রিয় হয় তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের সন্তানরা, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের আপনগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহ্‌ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না। (সুরা তওবা-২৪)

এই ৮ টা জিনিস যা আল্লাহ, রসুল (সা:) ও জেহাদ হতে প্রিয় হয় বা যা হারানোর ভয়ে বা ওদের মায়ায় দ্বীন হতে দূরে সরে যায়। আল্লাহ কখনো কখনো তা কেড়ে নেন। তখন মুমিনের নিকট দুনিয়ার বেচে থাকা তুচ্ছ মনে হয়, একমাত্র আখেরাতের জীবন অগ্রগন্য হয়। ফলে তারা লড়াই করে শহীদ অথবা বিজয়ী হয়।

আফগান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, মাগরিব অঞ্চল সেই উদাহরণ স্থাপনের পথে ইনশাআল্লাহ। একটু ভাবুন- আমরা মাত্র কয়টা লাশ দেখছি, মাত্র কয়টা দিন উপবাস থেকেছি, কয়টা দিন মাত্র গৃহহারা। অথচ শাম, ফিলিস্তিনসহ বহুদেশে বহুবছর মুসলিম মরছে, গৃহহারা, খাদ্যহীন কষ্ট করছে! তাদের কষ্টটা উপলব্ধি করে তাদের জন্য সাহায্য ও দোয়া কতটুকু করেছিলাম আমরা।

তওবা করুন, নিয়ত করুন বিপদ শেষে বিভিন্ন চেতনার নামে শির্ক, কুফরে না জড়িয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা যেন হয় আমাদের লক্ষ্য।

ইনশাআল্লাহ এই বিপদ চলে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *