আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় তাঁর দু’হাতের তালু জড়ো করে তাতে ফুঁ দিতেন এবং তাতে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন। এরপর দুই হাতের তালু দিয়ে দেহের যেখানে সম্ভব, সেখানে মুছে দিতেন। শুরু করতেন মাথার উপরিভাগ দিয়ে; এরপর চেহারা ও দেহের সামনের অংশ। এই কাজ তিনি তিনবার করতেন।’’ [সহিহ বুখারি: ৫০১৭]
উকবাহ্ ইবনু আমির (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক (ফরজ) নামাজের শেষে সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। (সিলসিলা সহিহাতে এসেছে সূরা ইখলাসের কথাও।) [আবু দাউদ: ১৫২৩, হাদিসটি হাসান]
এছাড়াও সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৫), সুরা বাকারার শেষের দুই আয়াত (২৮৫ ও ২৮৬), সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব এবং সুরা নাস পড়া যেতে পারে।
বদনজর থেকে বাঁচার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঝাঁড়-ফুক দেয়া। বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ঝাঁড় ফুকের সময় এসব দোয়া পড়া-
بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ وَمِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أوْ عَيْنٍ حاَسِدٍ اللهُ يَشْفِيْكَ بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরক্বিকা মিং কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা ওয়া মিন সাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসাদিল্লাহু ইয়াশফিকা বিসমিল্লাহি আরক্বিকা।
অর্থ: আল্লাহর নামে কষ্ট দানকারীর সব অনিষ্টতা থেকে তোমাকে ঝাঁড়-ফুক করছি। হিংসুক ব্যক্তির কুদৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাঁড়-ফুক করছি। আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করতে তারই নামে ঝাঁড়-ফুক করছি।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
أعُوذُ بِكَلِماَتِ اللهِ التاَّمَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطاَنٍ وَهاَمَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লিআম্মাতিন।’
অর্থ: ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামসমূহের মাধ্যমে শয়তানের সব আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বিষধর প্রাণীর ও বদনজরকারীর অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’ (বুখারি)।
بِسْمِ اللهِ يُبْرِيْكَ ومِنْ كُلِّ داَءٍ يَشْفِيْكَ، ومِنْ شَرِّ حاِسِدٍ إذاَ حَسَدَ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ ذِيْ عَيْنٍ
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়া মিন কুল্লি দাঈন ইয়াশফিকা, ওয়া মিন শাররি হাসাদিন ইজা হাসাদা, ওয়া মিন শাররি কুল্লি জি আইনিন।’
অর্থ: ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, তিনি তোমাকে মুক্ত করুন, প্রত্যেক অসুখ থেকে আরোগ্য দান করুন, প্রত্যেক হিংসুকের হিংসা থেকে এবং প্রত্যেক বদনজরের অনিষ্ট থেকে (মুক্ত করুন)।’ (মুসলিম)।
শয়তান মানুষকে ভীতি সৃষ্টি করে আতংকিত করতে চায়, যখনই মানুষ তাকে ভয় করে বা তার পরিকল্পনা সফল হতে দেখে সে খুশি হয়। আবার যখন সে দেখে মুসলিমরা ভয় ও পরিপূর্ণ ভরসা রাখে আল্লাহর উপর তখন সে কষ্ট পায়। তাই যেকোন বিপদে, অসুস্থতায় শয়তানের ভীতি নয় বরং তওবা করে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া উচিত।
ওয়াহাব ইবনন বাকীয়্যা (রহঃ) …. আবূ মালীহ (রহঃ) একব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একই উটের পিঠে সাওয়ার ছিলাম। এ সময় উটটি লাফালাফি করতে থাকলে আমি বলিঃ শয়তান মরুক! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বলেনঃ তুমি এরূপ বলো না যে, শয়তানের সর্বনাশ হোক! কেননা, তুমি যখন এরূপ বলবে, তখন শয়তান অহংকারে ফুলে ঘরের মত হয় এবং বলেঃ আমি খুবই শক্তিমান। বরং তুমি বলবেঃ বিস্মিল্লাহ্! কেননা যখন তুমি এরূপ বলবে, তখন শয়তান ছোট হয়ে মাছির মত হয়ে যায়। আবু দাঊদ-৪৮৯৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত কুরআনের আমলগুলো আদায় করার মাধ্যমে বদ নজর, জিনঘটিত সমস্যা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আর যারা বদ নজরে আক্রান্ত তাদেরকে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে তা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।