প্রাথমিক অবস্থায় পাপ প্রতিহত না করা ও পাপকে উৎসবে পরিণত করা

শয়তান ও তার অনুসারীরা (জ্বিন ও মানুষ) সমাজে নতুন পাপ চালু করে কল্যাণের নামে আস্তে আস্তে তা বিনোদন, হাসি, উৎসব হিসেবে পুরো সমাজে সমাদৃত হয়ে যায়। একদল লোক যখন পাপে আসক্ত হয়ে যায় তখন কেউ প্রতিবাদ করলে ওরাই বাধা হয়ে দাড়ায় – বিভিন্ন যুক্তি দেখায় ওরা আমাদের কল্যাণ ও আনন্দ বিনোদন হতে দূরে রাখতে চায়। সব মৌলবাদী আচরন!!

তাই যেকোন পাপই প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিহিত করা উচিত। যেমনঃ

মূর্তি পূজার সূচনা

মানবজাতির আদি পিতা আদম (আঃ) হ’তে দ্বিতীয় পিতা নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়ে কিছু নেককার মানুষ খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নূহ (আঃ)-এর সময়ে তাঁরা মৃত্যুবরণ করলে ইবলীস তাদের ভক্ত-অনুসারীদের প্ররোচনা দিল এই বলে যে, ঐসব নেককার লোকদের বসার স্থানে তোমরা তাদের মূর্তি স্থাপন কর এবং সেগুলিকে তাদের নামে নামকরণ কর।

শয়তান তাদের যুক্তি দিল যে, যদি তোমরা মূর্তিগুলোকে সামনে রেখে ইবাদত কর, তাহ’লে তাদের স্মরণ করে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি তোমাদের অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তখন লোকেরা সেটা মেনে নিল। মানুষ এটাকে যৌক্তিক ও কল্যাণকর মনে করলো।

অতঃপর এই লোকেরা মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরবর্তী বংশধরগণকে শয়তান কুমন্ত্রণা দিল এই বলে যে, তোমাদের বাপ-দাদারা এইসব মূর্তির পূজা করতেন এবং এদের অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন ও তাতে বৃষ্টি হ’ত।

একথা শুনে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সরাসরি মূর্তিপূজা শুরু করে দিল। অতঃপর এভাবেই মূর্তিপূজার সূচনা হয়।

কুরআনে নূহের (আ) সময়কার ৫ জন পূজিত ব্যক্তির নাম এসেছে। যথাক্রমে অদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক্ব ও নাস্র (নূহ ৭১/২৩)। এদের মধ্যে ‘অদ’ ছিলেন পৃথিবীর প্রথম পূজিত ব্যক্তি যার মূর্তি বানানো হয় (ইবনু কাছীর) (বুখারী হা/৪৯২০ ‘তাফসীর’ অধ্যায়; তাফসীর কুরতুবী, বাগাভী, ইবনু কাছীর, শাওকানী প্রভৃতি)।

ঠিক একইভাবে৷ লূত (আঃ) এর কওম সমকামিতায় পুরো সমাজে ভরে যায়। এভাবে শিরকের মত নিকৃষ্ট পাপ সমাজে বিভিন্ন উৎসব ও আনন্দের সাথে পালন হতো। আজও দেখবেন শিরকী দিবসে মেলা, উৎসব, গানবাজনা নামক হারাম চর্চা হয় যা পূর্ববর্তী জাতিরাও করতো। নূহ (আঃ) সহ পরবর্তী যত নবী ও রসুলগণই এসব নিয়মনীতির বিরোধিতা করেছে জাতি বিরোধিতা করতো এমনকি তাদেরকে পাগল, মিথ্যাবাদী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বলে অভিহিত করতো।

আজ দেখুন- মুসলিম সমাজে ১ম নারী শিক্ষার জন্য পর্দাকে বাধা হিসেবে দেখা হতো, সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে প্রতিরোধ করা হয়নি এখন তা নিয়ে অরাজকতা চলছে!!

পর্দার পক্ষে কথা বলাটা যেন উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা।

আরেকটা পরিকল্পনা চলছে- নাটক, চলচ্চিত্রের নামে সর্বত্র অশ্লীল প্রেম চর্চা ও হাসিঠাট্টা, গালি ছড়িয়ে পড়ুক যাতে মুসলিমরা পরবর্তীতে এগুলো নিয়ে বিভিন্ন ফেতনায় লিপ্ত হয়। আর বেশিরভাগ গালিগুলা মিথ্যা বা অপবাদ যা বড় পাপ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।’

সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৮

হাদিসে আছে, ‘মুমিন ব্যক্তি কারো সম্মানে আঘাত করে না। কাউকে অভিশাপ দেয় না। অশ্লীল কাজ করে না। মন্দ কথা বলে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১০৫)

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি [আল্লাহর অবাধ্যাচরণ] এবং তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৫, ৭০৭৬; তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৩)

রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘পরষ্পর গাল-মন্দকারী উভয়ে দুইটি শয়তান। তারা পরষ্পরের নিন্দা করে এবং মিথ্যা কথা বলে।’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস : ১৬৮৩৬)

ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি তোমাকে তোমার সে বিষয় নিয়ে গালি দেয়— যা সে জানে, তখন তুমি সেই ব্যক্তিকে সেই বিষয় ধরে গালি দিয়ো না— যা ওর মধ্যে আছে আর তুমি তা জানো। এতে তোমার পুণ্য লাভ হবে এবং ওর ওপর হবে পাপের বোঝা। (সহিহুল জামে, হাদিস : ৫৯৪)

জাবের বিন সুলাইম হুজাইমি (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘…যদি কোনো ব্যক্তি তোমাকে গালি দেয় এবং যে ত্রুটি তোমার মধ্যে নেই— তা নিয়ে তোমাকে লজ্জা দেয়, তাহলে তুমি তাকে সেই ত্রুটি নিয়ে লজ্জা দিয়ো না, যা ওর মধ্যে আছে। ওকে উপেক্ষা করে চল। ওর পাপ ওর উপর এবং তোমার পুণ্য তোমার জন্য। আর অবশ্যই কাউকে গালি দিয়ো না।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫২১, ত্বায়ালিসি : ১২০৮, সহিহুল জামে, হাদিস : ৯৮)।

কবিরা গুনাহগুলোর একটি হলো নিজের বাবা-মা’কে অভিশাপ করা।’ জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর রাসুল! মানুষ নিজের বাবা-মাকে কীভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, ‘যখন সে অন্যের বাবাকে গালি-গালাজ করে, তখন সে নিজের বাবাকেও গালি-গালাজ করে থাকে। আর সে অন্যের মাকে গালি দেয়, বিনিময়ে সে তার মাকেও গালি দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭৩; তিরমিজি, হাদিস : ১৯০২)

গালির বদলে গালি দেওয়া নিষেধ

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার (কোনো মুসলিম) ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করেছে অথবা কোনো বিষয়ে জুলুম করেছে, সে যেন আজই (দুনিয়াতে) তার কাছে (ক্ষমা চেয়ে) হালাল করে নেয়— ওইদিন আসার আগে, যেদিন দিনার ও দিরহাম কিছুই থাকবে না।

তার যদি কোনো নেক আমল থাকে, তবে তার জুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তা থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার কোনো নেকি না থেকে, তবে তার সঙ্গীর পাপরাশি তার (জালেমের) ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯, ৬৫৩৪; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৯৩৩২)

সুতারং যেকোন ফেতনা ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে পড়ার আগে প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবস্হা নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *