প্রকৃত মুজাদ্দিদের পরিচয়!

মুজাদ্দিদ (উমর ইবনে আবদুল আজিজ)-সুলায়মান ইব্‌ন দাউদ (রহঃ) …. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার জানামতে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ এ উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীতে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি দীনের ’তাজ্‌দীদ’ বা সংস্কার সাধন করবেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)। পুনঃনিরীক্ষণঃ সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), যুদ্ধ বিগ্রহ – অধ্যায়।

মুজাদ্দিদ অর্থ সংস্কারক। যিনি ইসলামের নামে বিভিন্ন ভুল, ভ্রান্তি, অপবাদ, বিদআত, কুফরের সংস্কার করে দ্বীন ইসলামকে রসুলের (সা:) ও খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ অনুযায়ী চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। কিন্তু এই মুজাদ্দিদকে কেন্দ্র করে উম্মত বহুভাগে বিভক্ত।
কারো দৃষ্টিতে একজন মুজাদ্দিদ অন্যদলের নিকট তিনি ফেতনাবাজ।

এমনকি অনেকে তার ভক্ত দ্বারা মুজাদ্দিদ দাবি করে বা ভক্তরা মুজাদ্দিদ বলে প্রচার করে নতুন ফেরকাসহ নতুন ধর্মমত সৃষ্টি করে গেছে। অনেকে শেষে নিজেকে নবী দাবি করেছে। এসবকে কেন্দ্র করে উম্মত মুসলিম পরিচয় ভুলে বহুনামে আজ পরিচয় দিচ্ছে।

গোলাম আহমদ কাদেয়ানীকে মুজাদ্দিদ দাবি করে দুটি দল হয় একদল লাহোরী যারা তাকে শুধু মুজাদ্দিদ মানে আরেকদল তাকে নবী মানে। তথাকথিত ফেতনাবাজ মুজাদ্দিদগণ প্রথমে কিছু চমকপ্রদ কর্ম বা কথা প্রচার করে জনপ্রিয়তা হাসিল করে। কিছু ভক্ত সৃষ্টি হওয়ার পর তারা ফেতনা ছড়াতে শুরু করে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার কুরআন, হাদীসকে ভিন্নরূপে ব্যাখা করে যেরূপ ব্যাখা সাহাবী, তাবেয়ীরা করেননি। বর্তমানেও দেখবেন দাজ্জালকে নিয়ে আধুনিক ব্যাখার নাম দিয়ে সাহাবী, তাবেয়ীদের ব্যাখার বিপরীত বিশ্লেষণ করে অনেকে জনপ্রিয় হচ্ছে। নিশ্চিত এগুলো পরবর্তীতে ফেতনার কারন হবে।

মুজাদ্দিদ মানে এই নয় ইসলামে নতুন কিছু সংযোজন করবেন বরং দ্বীন পূর্নাঙ্গ ও পরিশুদ্ধ। মুজাদ্দিদ দ্বীন রসুল (সা:), খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ মতে চলবে, প্রচার করবে ও সুন্নাহকে পুন:প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে।

মুজাদ্দিদ নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও প্রায় সকল আলেম ঐক্যমত ইসলামের প্রথম মুজাদ্দিদ উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ:) আর শেষ মুজাহিদ্দ হবেন খলিফা মাহাদী (হাফি:)।

আমর ইব্‌ন উছমান (রহঃ) …. জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, এ দীন ততক্ষণ পর্যন্ত কায়েম থাকবে, যতক্ষণ না তোমাদের উপর সর্ব সম্মতিক্রমে নির্বাচিত বার জন খলীফা (নিযুক্ত) হয়।

(রাবী বলেনঃ) এরপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরো কিছু বলতে শুনি, কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করি যে, তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেনঃ এ সমস্ত খলীফা কুরায়শ বংশ থেকে হবে।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ)। পুনঃনিরীক্ষণঃ সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)। ৩১/ মাহদী (আঃ) সম্পর্কে (كتاب المهدى)

উমর ইবনে আবদুল আজিজ রহ : সময় খেলাফায়ে রাশেদীনের পরবর্তীতে সবচেয়ে বেশি শান্তি বজায় থাকে। তখন এতবেশি সমৃদ্ধ লাভ করে যে যাকাত নেওয়ার মত লোক পাওয়া যেত না। উমাইয়াদের বিলাসী বাদশাহীর বদলে তিনি খেলাফায়ে রাশেদীনের মত সাধারণ জীবনযাপন করেন, উমাইয়াদের বিলীসিতা বন্ধ করেন।

কিন্তু যে মহৎ কারনে তাকে মুজাদ্দিদ বলা হয় তাহলো তিনি এসে আলী (রা:) এর উপর গালি, লানত দেওয়া বন্ধ করেন।

বনূ উমাইয়্যাহ খুৎবায় ‘আলী ইবনু আবী তালিবের ওপর লা’নত করে আসছিল, যা ‘উমার ইবনু ‘আব্দিল ‘আযীয এসে বন্ধ করেন এবং সেই স্থানে পড়া শুরু করেনঃ “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ তোমাদের আদেশ দেন ‘আদল (ন্যায়পরায়ণতা) ও ইহসানের (সৎকর্মের) [নাহলঃ ৯০], যা আজও অবধি আমরা খুৎবায় পাঠ করি। [তারিখুল খুলাফা সুয়ুতী “উমার ইবনু আব্দিল ‘আযীয” অধ্যায়]

সহীহ মুসলিমের হাদীসের বর্ণনায়ঃ সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ মারওয়ানের বংশের এক লোক মাদীনার শাসনকর্তা নিয়োগপ্রাপ্ত হলো, সে সাহলকে ডেকে এনে আলী (রাঃ)-কে গালি দিতে বলল। সাহল (রাঃ) অস্বীকৃতি জানালেন। শাসক লোকটি বলল, তুমি যদি গালি নাই দাও তবে অন্তত এটুকু বলো যে, আবূ তুরাবের উপর আল্লাহর লা’নত। সাহল (রাঃ) বললেন, আলী (রাঃ)-এর নিকট কোন নামই এর চেয়ে বেশি পছন্দনীয় ছিল না।

এ নামে ডাকলে তিনি আনন্দিত হতেন। সে লোক বলল, তাহলে আবূ তুরাব নাম হওয়ার কাহিনী বর্ণনা করো। তিনি বললেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমা (রাঃ)-এর গৃহে আসলেন; কিন্তু আলী (রাঃ)-কে গৃহে পেলেন না। ফাতিমা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, তোমার চাচাত ভাই কোথায়? ফাতিমা (রাঃ) বললেন, তাঁর আর আমার মধ্যে একটা কিছু ঘটেছিল যার ফলে তিনি রাগ করে বের হয়ে গেছেন, আর তিনি আমার নিকট ঘুমাননি। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে বললেন, দেখ তো, আলী কোথায়? লোকটি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তিনি মাসজিদে ঘুমিয়ে আছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু *আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট আসলেন। আলী (রাঃ) শুয়েছিলেন। তাঁর এক পাশের চাদর সরে গিয়েছিল, ফালে গায়ে মাটি স্পর্শ করেছিল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটি ঝাড়তে শুরু করলেন এবং বললেন, হে আবূ তুরাব! উঠো, হে আবূ তুরাব! উঠো।

মুসলিম- ৬০১১ ই.ফা,৬০৪৯ ই.সে, আল হাদীস আ্যপ-৬১২৩)

অথচ রসুলুল্লাহ (সা) বলেন – আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সে মহান সত্তার কসম! যিনি বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মু’মিন ব্যক্তিই আমাকে ভালোবাসবে, আর মুনাফিক ব্যক্তি আমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে।’

সহিহ মুসলিম: ই.ফা-১৪৪,ই.সে-১৪৮, আল হাদীস আ্যপ-১৪৩

এছাড়া বহু হাদীস রয়েছে যেখানে আলীকে (রা:) গালি ও লানত দেওয়া হতো। কমেন্টে লিংক দেওয়া হবে।
উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ:) নিজ বংশের বিরুদ্ধে গিয়ে তা বন্ধ করেন এবং তারই পরামর্শক্রমে জালেম হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে বন্ধী করা হয়। তার খেলাফতের ২ বছরের সময় তাকে বিষ পান করিয়ে (উমাইয়া বংশধররা) শহীদ করা হয়।

মুজাদ্দিদ মানে এই নয় তিনি সালাতের নিয়ম, সালাত, দরুদ, বিদআত তৈরি করবেন বরং ইসলাম, রসুলের (সা:) সাহাবীদের নামে যত অপবাদ আছে দূর করবেন। তাই মুজাদ্দিদকে চিনতে হলে – রসুল (সা:) ও সাহাবীদের জীবনী জানতে হবে।

বর্তমানে রসুল (সা:), আয়েশা (রা), সাহাবীদের নামে অপপ্রচার, গালি, লানত দেওয়া হচ্ছে অথচ মুজাদ্দিদের অনুসারী দাবিদাররা অনেকে চুপ বা সামান্য প্রতিবাদ ছাড়া কিছুই করছে না। ইনশাআল্লাহ খলিফা মাহাদী (হাফি:) নেতৃত্বে সকল জুলুম অপবাদ, অপপ্রচার বন্ধ হবে এবং খেলাফায়ে রাশেদীনের মত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

৪২৩৪. উছমান ইব্‌ন আবূ শায়বা (রহঃ) …. আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি আকাশের একটি দিনও অবশিষ্ট থাকে, তবুও মহান আল্লাহ্‌ আমার আহ্‌লে-বায়ত থেকে এমন এক ব্যক্তিকে সৃষ্টি করবেন, যিনি পৃথিবীকে ইনসাফ দ্বারা পূর্ণ করবেন, যেমন তা জুল্‌ম ও অত্যাচারে পরিপূর্ন ছিল।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) বর্ণনাকারীঃ আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) পুনঃনিরীক্ষণঃ সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৩১/ মাহদী (আঃ) সম্পর্কে

https://drive.google.com/file/d/1-3BkaFDflowrRMLZH1uspDSzqHWgMQnC/view

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *