আজকাল এমন ফাতওয়া চলছে যে, কেউ প্রকাশ্যে কুফর করলেও কাফের ভাবা যাবে না এটা নাকি খারেজীর আলামত। অথচ তারাই নিজেদের দল-মতের বিরুদ্ধে গেলেই অন্যদের ইহুদি, খ্রিস্টানদের দালাল ঘোষণা করে।
কারো কুফরকে কুফর বলতে নাকি মুফতি লাগবে!
আহ জাহেলিয়াত! প্রতিটি মুমিন কুফর, শির্ক চিনে বর্জন করবে নাহলে মুমিন হবে কিভাবে? তাহলে কাফের, মুশরিক কে মুমিন বুঝতে পারবে।
জাহেলী যুগে যখন অনেক সাহাবীরা ঈমান আনেনি তখন কুরআনে তাদের কি মুমিনীন বলে সম্বোধন করেছিল নাকি কাফেরুন? যেভাবে চলছে ভবিষ্যতে হয়তো ফাতেয়া দিবে মুশরিকদের মুশরিক বলা যাবে হয়তো তারা কষ্ট পাবে। অথচ রসুল সা দাওয়াহ জীবন দেখুন-
আল্লাহ বলেন-
বলুন, হে কাফেরকুল, আমি এবাদত করি না, তোমরা যার এবাদত কর। এবং তোমরাও এবাদতকারি নও, যার এবাদত আমি করি এবং আমি এবাদতকারি নই, যার এবাদত তোমরা করো। তোমরা এবাদতকারি নও, যার এবাদত আমি করি। তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য। (সুরা কাফেরুন)
আজ বিধর্মীর উৎসবে উৎসাহ দিতে গিয়ে নামধারী মুসলিমরা পথহারা হচ্ছে! আসলে প্রকৃতপক্ষে ঈমানের স্বীকৃতি আমলে। শুধু মুখে বলা আর কর্ম বিপরীত হলে তা গ্রহনযোগ্য নয়।
সুরা আনফালে বর্নিত –
হে নবী, তাদেরকে বলে দাও, যারা তোমার হাতে বন্দী হয়ে আছে যে, আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তরে কোন রকম মঙ্গলচিন্তা রয়েছে বলে জানেন, তবে তোমাদেরকে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী দান করবেন যা তোমাদের কাছ থেকে বিনিময়ে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তোমাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
(আয়াত -৭০)
অধিকাংশ মুফাসসির বলেছেন যে, এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতৃব্য আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। কারণ, তিনিও বদরের যুদ্ধবন্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তার কাছ থেকেও মুক্তিপণ নেয়া হয়েছিল।
এ ব্যাপারে তার বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, মক্কা থেকে তিনি যখন বদর যুদ্ধে যাত্রা করেন, তখন কাফের সৈন্যদের জন্য ব্যয় করার উদ্দেশ্যে বিশ ওকিয়া (স্বর্ণমূদ্রা) সাথে নিয়ে যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু সেগুলো ব্যয় করার পূর্বেই তিনি গ্রেফতার হয়ে যান। যখন মুক্তিপণ দেয়ার সময় আসে, তখন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আমি তো মুসলিম ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনার ইসলাম সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন।
যদি আপনার কথা সত্য হয় তবে আল্লাহ আপনাকে এর প্রতিফল দিবেন। আমরা তো শুধু প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডের (আমল) উপর হুকুম দেব। সুতরাং আপনি আপনার নিজের এবং দুই ভাতিজা আকীল ইবন আবী তালেব ও নওফেল ইবন হারেসের মুক্তিপণও পরিশোধ করবেন। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আবেদন করলেন, আমার এত টাকা কোত্থেকে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কেন, আপনার নিকট কি সে সম্পদগুলো নেই, যা আপনি মক্কা থেকে রওয়ানা হওয়ার সময়ে আপনার স্ত্রী উম্মুল ফযলের নিকট রেখে এসেছেন? আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ আপনি সে কথা কেমন করে জানলেন? আমি যে রাত্রের অন্ধকারে একান্ত গোপনে সেগুলো আমার স্ত্রীর নিকট অর্পণ করেছিলাম এবং এ ব্যাপারে তৃতীয় কোন লোকই অবগত নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে ব্যাপারে আমার রব আমাকে বিস্তারিত অবহিত করেছেন।
তখন আব্বাস বললেন, আমার কাছে যে স্বর্ণ ছিল, সেগুলোকেই আমার মুক্তিপণ হিসেবে গণ্য করা হোক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে সম্পদ আপনি কুফরীর সাহায্যের উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলেন, তা তো মুসলিমদের গনীমতের মালে পরিণত হয়ে গেছে, ফিদইয়া বা মুক্তিপণ হতে হবে সেগুলো বাদে। তারপর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিজের ও দুই ভাতিজার ফিদইয়া দিলেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [সীরাতে ইবন হিশাম; ইবন কাসীর]
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম প্রকাশের পর প্রায়ই বলে থাকতেন, আমি তো সে ওয়াদার বিকাশ-বাস্তবতা স্বচক্ষেই প্রত্যক্ষ করছি। কারণ আমার নিকট থেকে মুক্তিপণ বাবদ বিশ উকিয়া সোনা নেয়া হয়েছিল। অথচ এখন আমার বিশটি গোলাম (ক্রীতদাস) বিভিন্ন স্থানে আমার ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছে এবং তাদের কারো ব্যবসায়ই বিশ হাজার দিরহামের কম নয়। [দেখুন, মুস্তাদরাকে হাকিম: ৩/৩২৪ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩ য় খন্ড -৫২০ পৃ]
আপনারা কি বলতে চান- রসুল সা, সাহাবীরা তাকফীর নীতি বুঝতেন না?
অনুরুপ -উসামা ইবনে যায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহাইনা গোত্রের এক শাখা হুরাকার দিকে পাঠালেন। অতঃপর আমরা সকাল সকাল পানির ঝর্নার নিকট তাদের ওপর আক্রমণ করলাম। (যুদ্ধ চলাকালীন) আমি ও একজন আনসারী তাদের এক ব্যক্তির পিছনে ধাওয়া করলাম।
যখন আমরা তাকে ঘিরে ফেললাম, তখন সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল। আনসারী থেমে গেলেন, কিন্তু আমি তাকে আমার বল্লম দিয়ে গেঁথে দিলাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেললাম। অতঃপর যখন আমরা মদীনা পৌঁছলাম, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌঁছল। তিনি বললেন, ‘‘হে উসামা! তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও কি তুমি তাকে হত্যা করেছ?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে প্রাণ বাঁচানোর জন্য এরূপ করেছে।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরও তুমি তাকে খুন করেছ?’’ তিনি আমার সামনে এ কথা বারবার বলতে থাকলেন।
এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আজকের পূর্বে আমি ইসলাম গ্রহণ না করতাম (অর্থাৎ এখন আমি মুসলিম হতাম)। অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সে কি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তুমি তাকে হত্যা করেছ?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে কেবলমাত্র অস্ত্রের ভয়ে এই (কলেমা) বলেছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি তার অন্তর চিরে দেখেছিলে যে, সে এ (কলেমা) অন্তর থেকে বলেছিল কি না?’’ অতঃপর একথা পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আমি আজ মুসলিম হতাম। (মুসলিম, রিয়াযুস সলেহীন ৩৯৮)
অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে বাহ্যিক আমল দ্বারা বিবেচনা করা হবে- তার অন্তরের ব্যাপারে আল্লাহ বিবেচনা করবেন।
কোন ব্যক্তি যদি কুফর, শিরকে লিপ্ত থাকে তাকে তাই ভাবতে হবে। আবার কোন ব্যক্তি যদি তওবা করে ফিরে আসে যেকোন পরিস্থিতি হোক না কেন বা বাহ্যিকভাবে যে ইসলাম পালন করে যতক্ষণ না তার নেফাক সুস্পষ্ট হয় তাকে মুসিলম ভাবতে হবে। তাই যারা মুসলিম ও ইসলামের বিরুদ্ধে গিয়ে মুশরিক, জালেমের পক্ষ নিয়ে মুসলিমদের উপর জুলুম, নির্যাতন চালায় তারা মুশরিকদের সাহায্যকারী নয় কি!? দ্বীনের দাওয়াত ও শিরক কুফরের বিরোধিতা করায় ইসলামে ফিরে না এসে উল্টো মুসলিমদের উপর জুলুম, নির্যাতন করে সেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গন্য হবে।
আর ইসলামের কোন আমলকে অস্বীকার বা অপছন্দ করলে কাফের হয়ে যায়। যেমন -আমরা জীবনে বহু আমল করি না (সালাত ব্যতীত) কিন্তু এসব আমলকে স্বীকার করি। তার জন্য ওলামারা কাফের ফাতওয়া দেন না। অথচ ইবলিশ এজন্যই কাফের কারন সেই আমল করতে অস্বীকার ও অপছন্দ করে উল্টো যুক্তি দেখিয়েছিল। তারপরও ইবলিশ আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছিল, তবুও তাকে ইসলাম ও মুসলিমেদের শত্রু ভাবা হয়।
কুরআনে বর্নিত –
“সে (ইবলিশ) বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।’ তিনি বললেন, আচ্ছা তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে- নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’ সে বলল, ‘আপনার ইজ্জতের কসম! আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করে ছাড়ব।’ তাদের মধ্য থেকে আপনার একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া।”[ সূরা সা’দ : ৭৯ – ৮৩ ]
তাই শরীয়তের ভুল ব্যাখা ও চমকপদ বক্তব্য দিয়ে যারা মুশিরক ও ইসলামের শত্রুদের পক্ষ নিয়ে মুসলিমদের বিপক্ষে অবস্থান করে তারা মুসলিমদের বন্ধু না বরং কাফেরের সাহায্যকারী।
আল্লাহ শুধু ফেরাউন, নমরুদকে একা ধ্বংস করেননি তার সাহায্যকারী প্রশাসন, সেনাবাহিনীকেও ধ্বংস করেছেন। তওবা না করে ফিরে না আসলে রোজ কেয়ামতের দিন মুমিন ও কাফের, মুনাফেক, ইসলামের শত্রুরা আলাদা হয়ে যাবে! একদল জান্নাতী, অন্যদল জাহান্নামী। বহু আলেম, চেতনাবাদী দেখছি যখন কোন মুশরিক, ইসলামের শত্রুদের উপর আঘাত আসে তারা কুরআনের আয়াতের ভুল ব্যাখা করে অথচ মুমিনের ক্ষেত্রে নিরব কেন!?
বিধর্মীরা তাদের উৎসব পালন করুক- মুমিন এর হতে দূরে থাকা উচিত। কিন্তু আপনাদের সতর্ক করার পর উৎসবে উৎসাহ দিতে গিয়ে ফেতনা ছড়াবেন দোষটা কার!? কেউ কি আপনাদের বাধ্য করেছিল?
আমরা যখন কালেমা পড়ি একমাত্র ইবাদতের যোগ্য আল্লাহকে মানি, অন্য সকল দেব/দেবী, তাগুতকে অস্বীকার করি। একমাত্র দ্বীন হিসেবে ইসলামকে মেনে নিই, অন্য সকল ধর্মকে মিথ্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেই! আর মিথ্যা কি সম্মানের যোগ্য? আমরা সকল অমুসলিমদের দাওয়াহ দিবো ভদ্রতার সহিত- যেন তারা শির্ক, কুফর ছেড়ে ইসলামের ছায়াতলে আসে এবং তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করি যেন জান্নাতে একসাথে থাকতে পারি। যদি না মেনে নেয়- এটা তাদের ইখতিয়ার, ফায়সালা আল্লাহ আখেরাতে করবেন।
আল্লাহ পাক বলেন-
“দ্বীনের মধ্যে কোন জবরদস্তী নেই। নিশ্চয় সঠিক পথ ভুল পথ হতে পৃথক হয়ে গেছে। সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাহলে সে এমন মজবুত হাতল ধরল যা কখনো ভাঙ্গবে না এবং আল্লাহতায়ালা হচ্ছে সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সুরা বাকারাহ- ২৫৬)।
ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমের উপর জুলুম হলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে আর শাস্তির ভয়ে কোন মুসলিম ওদের উপাসনালয়ে যাবে না। কিন্তু মুসলিমদের জন্য নিষেধ তাদের পূজার স্থানে যাওয়া- এতে শির্কের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে বা অপসংস্কৃতির দিকে যেতে পারে। যে রকমটা মুসা (আ:) এর জাতির সময় হয়েছিল।
কুরআনে বর্নিত-
আমি (আল্লাহ) সাগর পার করে দিয়েছি বনি ইসরাইলকে। এরপর তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছাল, যারা স্বহস্ত নির্মিত মূর্তিপূজায় নিয়োজিত ছিল। ইহুদিরা বলতে লাগল- ‘হে মুসা; আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতোই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন।’ মুসা বললেন, ‘তোমরা তো বড়ই মূর্খ। এরা (মূর্তিপূজক) ধ্বংস হবে, এরা যে কাজে নিয়োজিত রয়েছে এবং যা কিছু তারা করেছে তা ভুল! তাহলে কি আল্লাহকে ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোনো উপাস্য অনুসন্ধান করব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে সারা বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।’ (সূরা আরাফ : ১৩৮-১৪০)।
তুর পাহাড়ে ওঠার আগে বনি ইসরাইলের সাথে এক জনপদের দেখা হলো, সেখানে তাদের দেবদেবীর পূজা করতে দেখল, মিসরীয়দের মতো। তাতে তাদের মনেও দেবদেবী পূজার শখ জাগল।
আচ্ছা বনী ইসরায়েল জাতির যারা মূর্তিপূজায় জড়ায় তাদের মুসলিম ধরা হয়েছিল নাকি মুরতা-দ ধরে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল? আর আখেরাতে তাদের অন্তরের (তওবা) অবস্থান অনুযায়ী ফায়সালা হবে যা আল্লাহ জানেন।
(এটা ইসলামী রাষ্ট্রের বিধান! বর্তমানে সবাইকে আমরা তওবা করার আহবান করবো প্রকাশ্যে। পাপ যখন প্রকাশ্যে করে তওবাও প্রকাশ্যেই হতে হবে। নাহলে তাদের ভক্তরা ভবিষ্যতে এটাকে জায়েজ প্রচার করবে!)
বনী ইসরায়েলের মূর্তিপূজাকারীরা কি আল্লাহকে অস্বীকার করেছিল, না আল্লাহকে মেনেই মূর্তি পূজায় জড়িয়েছিল?
আর তাদের ভক্তরা যে বলেন – কাফের, শির্ক সম্বোধন করতে মুফতি লাগবে এটা কুফরী হলেও ওদের মুসলিম ভাবতে হবে। ভাই, কুফরকে ইসলাম ভাবলে আপনারা মুসলিম থাকবেন কি? আর যখন আমাদের কথায় কথায় তাকফীর করেন, খারেজী উপাধি দেন তখন মুফতির প্রয়োজন হয় না? তখন কোন মুফতির কাছ হতে ফাতেয়া নিয়ে বলেন?
আর আপনারা সকল মুফতির ফাতেয়া গ্রহণ করেন? নিজের পছন্দনীয় দল ও আলেমের! রসুল (সা), সাহাবীদের (রা:) থেকে বড় মুফতি কে আছে? তাদের সুন্নাহ ও সীরাত কি নির্দেশনা দেয়নি?
প্রতিটি ব্যক্তি তখন মুসলিম হয় – যখন সে কুফর, শির্ক বুঝে ইসলাম মানে আর কাফের, মুশরিক কারা আমল দেখে বুঝতে পারে! অথচ আপনারা নিজেদের গর্বিত মুসলিম দাবি করেন! আমরা নাহয় নিকৃষ্ট!
আর অনেকে ধর্মীয় উৎসব সংস্কৃতি এক করে ফেলছেন। পূজায় প্রকাশ্যে অশ্লীল গান বাজনা চলে, অনেকে মদ পান করে, অশ্লীলতা চলে। এসব হিন্দি, বাংলা গানের সাথে হিন্দুধর্মের পূজার কোন সম্পর্ক নেই। ওদের জন্য বৈধ কীর্তন, ধর্মগ্রন্থ পাঠ, তারা তা করুক। গীতা, বেদ, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ান, বিষ্ণু পুরানসহ সকল পুরান, মনুসংহিতায় কোথায় এসব নাচ গানের বৈধতা দেওয়া আছে? বরং মনুসংহিতায় অশ্লীলতা নাচ গান নিষেধ করা হয়েছে। সনাতন ধর্ম যদি অনেক পুরাতনই হয় তখন কি তথাকথিত হিন্দীভাষা বা গান ছিলো! আজও গীতা, বেদ, মহাভারত সংস্কৃত হতে বাংলা হচ্ছে।
আপনারা যখন পাহারা দিবেন তখন কি শির্ক, কুফরী গান শোনা ও অশ্লীলতা দেখা হতে বিরত থাকতে পারবেন?
জেনেশুনে কোন দেবদেবীর শির্ক বাক্য, অশ্লীল গান শোনা ও চোখের জেনা কি হালাল হবে?
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-‘গানবাদ্য শ্রবণ করা কবিরা গুনাহ এবং গানের অনুষ্ঠানে বসা ফাসেকি আর এর দ্বারা আনন্দানুভব করা কুফরি।’ (আবু দাউদ : ৬৭৪)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে এমন কিছু লোক হবে যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।’ (বুখারি : ৮৩)।
হজরত নাফে (রা.) বলেন, ‘আমি একদা হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর সঙ্গে পথ চলছিলাম। তখন তিনি বাঁশির শব্দ শুনলে তার আঙুলদ্বয় কর্ণদ্বয়ে স্থাপন করলেন এবং রাস্তা ত্যাগ করে অন্য রাস্তায় অগ্রসর হলেন। কিছু দূরে গিয়ে বলেন হে নাফে! তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম জ্বী না। তখন তিনি আঙুলদ্বয় কান থেকে সরালেন। অতঃপর বলেন, আমি একদা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন বাঁশির শব্দ শুনতে পেয়ে আমি যেমন করলাম তিনিও ঠিক তদ্রুপ করেছিলেন।’ (আবু দাউদ: ৬৭৪)
প্রতিটি অপসংস্কৃতির প্রতিবাদ করা মুমিনের দায়িত্ব – তা ইসলামের নামে/বিয়ের অনুষ্ঠানের অশ্লীল নাচগান বা বাজি ফুটানো হোক না কেন!