রসুলুল্লাহ’ (সাঃ) বলেছেন- “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ইয়াহূদী ও নাসারাদের কথা বলেছেন? জবাবে তিনি বললেন: তবে আর কার কথা বলছি”?(বুখারী, মুসলিম)।
ইয়াহুদী ও নাসারাদের বৈশিষ্ট্য ছিল সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রন করা ও জেনেশুনে সত্যকে গোপন রাখা। এভাবে মানুষকে সত্য গ্রহন হতে দূরে রাখতো ও ভুলপথে পরিচালিত করত।
আল্লাহ বলেন –
"আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-বুঝে সত্য গোপন করো না" (সুরা বাকারাহ -৪২)
এখানে ইয়াহুদীদের দু’টি অতি বড় অপরাধের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদেরকে তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দান করা হচ্ছে। প্রথম অপরাধ হল, ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে মিশ্রিত করণ; যাতে মানুষের কাছে সত্য ও মিথ্যা পরিষ্কার না হয়। দ্বিতীয় অপরাধ হল, সত্যকে গোপন করা।
অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ)-এর যে নিদর্শন ও গুণাবলী তাওরাতে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা মানুষ থেকে গোপন করা, যাতে কমসে-কম এই নিদর্শনাদির দিক থেকে যেন তাঁর সত্যতা প্রকাশ না হয়ে পড়ে। আর এই উভয় অপরাধ তারা জেনে-শুনেই করত। যার কারণে তারা বড়ই দুর্দশার শিকার হয়েছিল।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর অর্থ, তোমরা আমার রাসূল মুহাম্মাদ এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা সম্পর্কে যে জ্ঞান তোমাদের নিকট আছে তা গোপন করো না। অথচ তার সম্পর্কে তোমরা তোমাদের কাছে যে গ্রন্থ আছে তাতে নিশ্চিতভাবেই অনেক কিছু পাচ্ছ। [আত-তাফসীরুস সহীহ]।
মুজাহিদ বলেন, আহলে কিতাবগণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গোপন করে থাকে। অথচ তারা তার ব্যাপারে তাওরাত ও ইঞ্জীলে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা পেয়ে থাকে। [তাবারী]। এ আয়াত থেকে অনেক আলেমের অভিমত যে, কোন ভয় বা লোভের বশবর্তী হয়ে সত্য গোপন করাও হারাম।
একই বৈশিষ্ট্য বর্তমান অনেক আলেমের মাঝে বিদ্যমান।
তারা সত্যকে গোপন করে আবার সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রণ করে। অনেককে দেখবেন কেয়ামতের আলামত ও মাহাদী (হাফিঃ) নিয়ে অনেক আলোচনা করতে অথচ তাদের ঈমান, আকীদা কুরআন-সুন্নাহর বিপরীত। অথচ মাহাদী (হাফিঃ) কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা শাসন করবেন তখন তারাই তার বিরোধিতা করবে।
যেমনটি তাওরাত ও ইনজিলে রসুল (সাঃ) এর কথা সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও তারা (ইয়াহুদী ও নাসারা) দীর্ঘদিন তাওরাত ও ইনজিলের নামে সত্য ও মিথ্যা মিশ্রণ করেছিল এবং এগুলো সত্য হিসেবে প্রচার করত। ফলে তাদের অনেকে এজন্য সত্য গ্রহন করেনি কারন তা করলেও তাদের দীর্ঘদিনের ভন্ডামি প্রকাশ পেয়ে যাবে।
আরেকটি বৈশিষ্ট্য –
ঐশীগ্রন্থধারীদের এক দল বলে, ‘যারা বিশ্বাস করেছে, তাদের প্রতি (অর্থাৎ, মুসলিমদের প্রতি) যা অবতীর্ণ হয়েছে দিনের প্রথম ভাগে তা বিশ্বাস কর এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর, হয়তো তারা (ইসলাম থেকে) ফিরতে পারে। (সুরা আল ইমরান-৭২)
এখানে ইয়াহুদীদের আরো একটি এমন চক্রান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যে চক্রান্তের মাধ্যমে তারা মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করতে চাইত। তারা আপোসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, সকালে মুসলিম হয়ে আবার সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে।
এ থেকে মুসলিমদের অন্তরেও নিজেদের ইসলামের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যাবে। তারা ভাববে, এরা (ইয়াহুদীরা) ইসলাম গ্রহণ করার পর পুনরায় তাদের দ্বীনে ফিরে গেছে, অতএব হতে পারে ইসলামে বহু এমন দোষ-ত্রুটি আছে, যা তারা (ইয়াহুদীরা) জানতে পেরেছে।
বিশ্বের অনেক দেশে মুসলিম নামধারীর মাঝে এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অনেককে বলতে দেখবেন যে অমুক আলেম বা দলের অনুসারী ছিলাম তাদের উগ্রবাদী মনোভাবের জন্য ত্যাগ করছি – যেন মুসলিমরা মনে করে এই আলেম বা দল হক্বের বিপরীত।
অনেককে দেখবেন জেহাদ, মুজাহিদদের ফজিলত নিয়ে অনেক আলোচনা করে অথচ কিছুদিন পরে দেখা যায় মুজাহিদ ও তাদের আলেম বা দলের বিরোধিতা করে যেন মুসলিমদের অন্তরে সন্দেহ ঢুকে যায়। ওরা যদি প্রকৃত মুজাহিদ হতো এই সকল আলেমরা সবার আগে তাদের সমর্থন করত।
ইয়াহুদী ও নাসারাদের মত অন্ধভক্ত না হয়ে যে কোন ব্যক্তির বক্তব্য কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মেলানো উচিত হয়তো তার অনিচ্ছাকৃত ভুলও হতে পারে।