পূর্ববর্তী জাতির অনুসরণ (পর্ব-২)

ইয়াকুব (আঃ) এর উপাধি ছিল ইসরায়েল অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা আর তার বংশধরদের বলা হতো বনী ইসরায়েল। কিন্তু তাদের দ্বীন ছিল ইসলাম আর পরিচয় ছিল মুসলিম। এর পরবর্তীতে ইয়াকুব (আঃ) এর এক ছেলে ইয়াহুদের নাম অনুযায়ী নিজেদের পরিচয় দিতে থাকে ইয়াহুদী। আস্তে আস্তে মুসলিম পরিচয় হারিয়ে গেল। বনী ইসরায়েল ও ইহুদিরা বহু দলে বিভক্ত হয় এবং প্রত্যেক দল একমাত্র নিজেদের হক্ব ও নাজাতপ্রাপ্ত ভাবতো।

একই পথে আমরা চলছি- রসুল, নবী ও সাহাবী আমাদের পরিচয় দিয়েছে মুসলিম কিন্তু আমরা বহু তরীকা, আলেমের অনুসরণ করতে গিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের আসল পরিচয় ভুলতে বসেছি। আর বেশিরভাগ দলই একমাত্র নিজেদের নাজাতপ্রাপ্ত ভাবে।

আল্লাহ বলেন –

"ইহুদিরা বলে, “ইহুদি হয়ে যাও, তাহলে সঠিক পথ পেয়ে যাবে৷” খৃস্টানরা বলে, “খৃস্টান হয়ে যাও, তা হলে হিদায়াত লাভ করতে পারবে৷ ওদেরকে বলে দাও, “না, তা নয়; বরং এ সবকিছু ছেড়ে একমাত্র ইবরাহীমের পদ্ধতি অবলম্বন করো৷ আর ইবরাহীম মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।" (সূরা বাকারা: ১৩৫)

ইহুদি, নাসারারা শুধু নিজেদের দলকে সঠিক ভাবতো, তাদের মুসলিম পরিচয় বাদ দিয়ে অন্য পরিচয় দিতো। আজও মুসলিমরা রসুলগন, নবীগন, সাহাবীদের রেখে যাওয়া মুসলিম পরিচয় ভুলে অন্যান্য পরিচয় নিয়ে গর্ব করে এবং নিজের দল, ও দলের আলেমকে কেবল হক্ব মানে। আপনি যতই আমল করেন যদি সম্পূর্ণ ওদের মত বা দলের মত না হয় ওরা আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না।

যেমনটা ইহুদি-নাসরাদের বৈশিষ্ট্য ছিল

"ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই। আমি যাদেরকে গ্রন্থ দান করেছি, তারা তা যথাযথভাবে পাঠ করে। তারাই তৎপ্রতি বিশ্বাস করে। আর যারা তা অবিশ্বাস করে, তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত। হে বনী-ইসরাঈল! আমার অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা আমি তোমাদের দিয়েছি। আমি তোমাদেরকে বিশ্বাবাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।" (সুরা বাকারাহ-১২০-১২২)

বনী ইসরায়েল জাতির শ্রেষ্ঠত্বের কারন ছিল তাদের উপর কিতাব নাযিল হয়েছিল। ইউসুফ (আঃ), দাউদ(আঃ), সোলেমান (আঃ) সহ বিভিন্ন নবী-রসুলগন তাদের কিতাব দ্বারা বিচার ফয়সালা করতেন। কিন্তু যতবারই তারা দ্বীন (কিতাব) হতে দূরে সরে চলে গিয়েছিল ও জেহাদবিমুখ হয়েছিল- আল্লাহ তাদের ফেরাউনসহ বিভিন্ন জালেম শাসকের আযাব দিয়েছিলেন। যখনি কোন নবীর দাওয়াতে আবার দ্বীনে ফিরেছে বিজয়ী হয়েছে।

একই অবস্হা বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিমদের। তারা দ্বীন ও জেহাদ হতে দূরে সরে গেছে তাই অপমান, নির্যাতন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ বলেন,

وَ قَضَیۡنَاۤ اِلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ فِی الۡکِتٰبِ لَتُفۡسِدُنَّ فِی الۡاَرۡضِ مَرَّتَیۡنِ وَ لَتَعۡلُنَّ عُلُوًّا کَبِیۡرًا
আয়াত-৪ অর্থ : আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে।
فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ أُولَاهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ فَجَاسُوا خِلَالَ الدِّيَارِ ۚ وَكَانَ وَعْدًا مَفْعُولًا
আয়াত-৫ অর্থ : অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত সেই প্রথম সময়টি এল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।
ثُمَّ رَدَدْنَا لَكُمُ الْكَرَّةَ عَلَيْهِمْ وَأَمْدَدْنَاكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَجَعَلْنَاكُمْ أَكْثَرَ نَفِيرًا
আয়াত-৬ অর্থ : অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুয়িয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম। (সুরা বনী ইসরায়েল)

আরও বর্নিত আছে –

যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন ওর সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিদেরকে (সৎকর্ম করতে) আদেশ করি, অতঃপর তারা সেথায় অসৎকর্ম করে; ফলে ওর প্রতি দন্ডাজ্ঞা ন্যায়সঙ্গত হয়ে যায় এবং ওটাকে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি। (বনী ইসরায়েল, আয়াত ১৬)

এখানে সেই মূল নীতির কথা তুলে ধরা হয়েছে, যার ভিত্তিতে জাতির বিনাশ সাধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর তা হল এই যে, তাদের সচ্ছল ও ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিরা আল্লাহর আদেশ লংঘন ও নির্দেশাবলী অমান্য করতে আরম্ভ করে এবং এদের দেখাদেখি অন্যরাও তা-ই করতে শুরু করে দেয়, আর এইভাবে এই জাতির মধ্যে আল্লাহর অবাধ্যতা ব্যাপক হয়ে যায়। ফলে তারা শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত বিবেচিত হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আমাদের মধ্যে সৎ লোকগণ থাকা অবস্থায়ও আমরা কি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবো?” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেছিলেন, “হ্যা, যখন খারাপের পরিমান বৃদ্ধি পায়”। [মুসলিমঃ ২৮৮০]।।

যখনি কোন কওম বা জাতির দ্বীনের দাওয়াত চলে অথচ পাপের পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন বুঝতে হবে জাতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *