পীর ও শ্রোতা

পীর ওয়াজ করছিলেন- ভুলের উর্ধ্বে কেউ নেই, সাহাবী, তাবেয়ীদের কিছু ভুল হয়েছিল, অনেক বুজুর্গের সালাতে ভুল হয়েছিল তাই তো সাহু সিজদাহ দিয়েছেন। এরপর দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন মহান ব্যক্তির ভুল ও সংশোধনের ওয়াজ চলল।

—–ওয়াজ শেষে এক শ্রোতার প্রশ্ন- হুযুর আপনার মনে হয় একটু ভুল হয়েছে। পীর রেগে গিয়ে- তুই মূর্খ, তুই মুরতাদ, তুই ইহুদির দালাল, সামান্য স্কুল কলেজে পড়ে আমার ভুল ধরিস।

শ্রোতার জবাব- আপনি কুরআনের সামান্য ছাত্র হয়ে কুরআনের মহান শিক্ষক সাহাবীদের (রা) ভুল ধরার পর মুসলিম থাকলেন আর আমি আপনার ভুল ধরার পর মুরতাদ হয়ে গেলাম।

ঘটনা কাল্পনিক হলেও এরকম ঘটনা প্রায় ঘটে। কোন পীরই সাহাবী, তাবেয়ীদের উর্ধ্বে নয়। সাহাবীদেরও ভুল হতো এবং সংশোধন করে আল্লাহর নিকট আরও প্রিয় হতেন, তা আমরা বিশ্বাস করি কিন্তু পীর বা তার পছন্দীয় শায়েখ, আলেমের ভুল হতে পারে এটা অনেকে মানতে চায় না। কিন্তু আল্লাহ বলেন, “আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা তাদের আলেম আর দরবেশদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে” [সূরা তওবা, ৩১]। আদী ইবন হাতেম (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে এর সুন্দর ব্যাখা পাওয়া যায়। তিনি বলেনঃ আমি গলায় একটি সোনার ক্রুশ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে আদী, তোমার গলা থেকে এ মূর্তিটি সরিয়ে ফেল এবং রসুল (সা) কে সূরা আত-তাওবার এ আয়াতটি তেলাওয়াত করতে শুনলাম- “তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের আলেম ও সংসার-বিরাগী ও দরবেশদের তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে।” আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো তাদের ইবাদত করি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারা তোমাদের জন্য কোন কিছু হালাল করলে তোমরা সেটাকে হালাল মনে কর আর কোন কিছুকে হারাম করলে তোমরা সেটাকে হারাম হিসাবে গ্রহণ কর। [তিরমিযীঃ ৩০৯৫]। অর্থাৎ, আল্লাহ যে জিনিস হারাম ঘোষনা করেছেন অথচ আলেম তা হালাল হিসেবে ফাতোয়া দেয় এবং জেনেশুনে সে কাজকে হালাল মেনে নেয়, তখন আল্লাহর বদলে স্বীয় আলেমকে রব (বিধানদাতা) হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। এভাবে আল্লাহর বদলে আলেম ও দরবেশদের ইবাদত করা হত। আল্লাহ আরো বলেন, “পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। [সূরা তওবা, ৩৪]। এই আয়াতে ঐসব ইয়াহুদী ও নাসারা আলেমদের কথা বলা হয়েছে, যারা তাদের অনুসারীদেরকে কিতাব থেকে দূরে রাখত এবং অর্থ ও সম্পদের বিনিময়ে মনগড়া ফাতোয়া দিত। তদ্রূপ আমাদের সমাজেও হচ্ছে। মানুষ কোরআন ও হাদীস যাচাই না করে পীরদের অন্ধ অনুসরণ করছে এবং তাদের ইসলাম বিরোধী ফাতোয়াগুলোকে মেনে নিচ্ছে। ইয়াহুদী/ নাসারা যেভাবে নিজ থেকেই তাদের পন্ডিতদের অর্থ/ সম্পদ দিত, তদ্রুপ পীরেরাও তাদের মুরিদদের থেকে অগাধ সম্পদ লাভ করে থাকে। এইভাবে তারা ইয়াহূদী পন্ডিতদের ন্যায় উম্মতকে আল্লাহর পথ, কিতাব থেকে দূরে রাখছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *