Halloween শব্দের মানেটা হল ‘Hallowed evening’, ‘Holly evening’ (পবিত্র সন্ধ্যা)। অথচ মুসলিমদের নিকট পবিত্র রজনী হলো লাাইলাতুল কদর। বর্তমান তথাকথিত মুসলিমরা উৎসবের নামে তা পালন করছে।
শয়তান ও তার অনুসারীরা (জ্বিন ও মানুষ) সমাজে নতুন পাপ চালু করে কল্যাণের নামে আস্তে আস্তে তা বিনোদন, হাসি, উৎসব হিসেবে পুরো সমাজে সমাদৃত হয়ে যায়।
একদল লোক যখন পাপে আসক্ত হয়ে যায় তখন কেউ প্রতিবাদ করলে ওরাই বাধা হয়ে দাড়ায় – বিভিন্ন যুক্তি দেখায় ওরা আমাদের কল্যাণ ও আনন্দ বিনোদন হতে দূরে রাখতে চায়।
সব মৌলবাদী আচরন!!
মানবজাতির আদি পিতা আদম (আঃ) হ’তে দ্বিতীয় পিতা নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়ে কিছু নেককার মানুষ খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নূহ (আঃ)-এর সময়ে তাঁরা মৃত্যুবরণ করলে ইবলীস তাদের ভক্ত-অনুসারীদের প্ররোচনা দিল এই বলে যে, ঐসব নেককার লোকদের বসার স্থানে তোমরা তাদের মূর্তি স্থাপন কর এবং সেগুলিকে তাদের নামে নামকরণ কর।
শয়তান তাদের যুক্তি দিল যে, যদি তোমরা মূর্তিগুলোকে সামনে রেখে ইবাদত কর, তাহ’লে তাদের স্মরণ করে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি তোমাদের অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তখন লোকেরা সেটা মেনে নিল। মানুষ এটাকে যৌক্তিক ও কল্যাণকর মনে করলো।
অতঃপর এই লোকেরা মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরবর্তী বংশধরগণকে শয়তান কুমন্ত্রণা দিল এই বলে যে, তোমাদের বাপ-দাদারা এইসব মূর্তির পূজা করতেন এবং এদের অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন ও তাতে বৃষ্টি হ’ত।
একথা শুনে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সরাসরি মূর্তিপূজা শুরু করে দিল। অতঃপর এভাবেই মূর্তিপূজার সূচনা হয়।
কুরআনে নূহের (আ) এর সময়কার ৫ জন পূজিত ব্যক্তির নাম এসেছে। যথাক্রমে অদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক্ব ও নাস্র (নূহ ৭১/২৩)। এদের মধ্যে ‘অদ’ ছিলেন পৃথিবীর প্রথম পূজিত ব্যক্তি যার মূর্তি বানানো হয়। (ইবনু কাছীর) (বুখারী হা/৪৯২০ ‘তাফসীর’ অধ্যায়; তাফসীর কুরতুবী, বাগাভী, ইবনু কাছীর, শাওকানী প্রভৃতি)।
ঠিক একইভাবে লূত (আঃ) এর কওম সমকামিতায় পুরো সমাজে ভরে যায়। এভাবে শিরকের মত নিকৃষ্ট পাপ সমাজে বিভিন্ন উৎসব ও আনন্দের সাথে পালন হতো।
আজও দেখবেন শিরকী দিবসে মেলা, উৎসব, গানবাজনা নামক হারাম চর্চা হয় যা পূর্ববর্তী জাতিরাও করতো। নূহ (আঃ) সহ পরবর্তী যত নবী ও রসুলগণই এসব নিয়মনীতির বিরোধিতা করেছে জাতি বিরোধিতা করতো এমনকি তাদেরকে পাগল, মিথ্যাবাদী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বলে অভিহিত করা হতো। আজ তেমনি হ্যালোইনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে বললে একই কথা শুনতে হবে। প্রায় ২০০০ বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করতো কেল্টিক জাতি। নভেম্বরের প্রথম দিনটি তারা নববর্ষ বা ‘সাহ-উইন’ হিসেবে পালন করতো।
গ্রীষ্মের শেষ ও অন্ধকার বা শীতের শুরু বলে মনে করতো তারা।
অবাক করা বিষয় হলো, কেল্টিক জাতির ধারণা ছিলো অক্টোবরের শেষ দিনের রাত সবচেয়ে খারাপ। যে রাতে সব প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মারা মানুষের ক্ষতি করতে পারে। আর তাই কেল্টিক জাতির সদস্যরা এই রাতে বিভিন্ন ধরনের ভূতের মুখোশ ও কাপড় পরতো।
তারা নির্ঘুম রাত কাটাতে আগুন জ্বালিয়ে মুখোশ পরে বৃত্তাকারে একসঙ্গে ঘুরতেন ও মন্ত্র যপতেন। আর সময়ের পরিক্রমায় কেল্টিক জাতির ‘সাহ-উইন’ উৎসবই বর্তমানে ‘হ্যালোইন’ উৎসব হিসেবে পালিত হচ্ছে। হ্যালোইনের রাত নিয়ে অনেক ধরনের মিথ আছে।
তেমনই এক প্রচলিত মিথ হলো, এই রাতে দেবতা সামান সব মৃত আত্মাদের পৃথিবীতে আহ্বান জানান। উড়ন্ত ঝাড়ুতে করে হ্যালোইন ডাইনি উড়ে বেড়ায় আকাশ জুড়ে। কখনো বা তিনি কড়া নাড়েন বিভিন্ন বাড়ির দরজায়। আস্তে আস্তে এসব নীতি খ্রিস্টান সমাজে প্রবেশ করে প্রথমে তাদের পোপেরা বিরোধীতা করলেও পরবর্তীতে জনপ্রিয় উৎসবে পরিণত হয়।
৩১ অক্টোবর পালিত হয় হ্যালোইন, যে রাতে বিগত সাধুদের আত্মার স্মরণে গির্জায় গির্জায় জ্বালানো হয় মোমবাতি। তার পরদিন পহেলা নভেম্বর পশ্চিমা খ্রিস্টানদের ভোজ (feast) ‘অল হ্যালোজ ডে’ (All Hallows’ Day) বা ‘হ্যালোমাস’ (Hallowmas), যেদিন ইতিহাসের সকল জানা-অজানা সাধুদের স্মরণ করা হয়। আর সবশেষে ২ নভেম্বর ‘অল সোল’জ ডে’ (All Souls’ Day), এ দিন স্মরণ করা হয় পরলোকগত খ্রিস্টানদের আত্মাকে। এ তিন দিন মিলিয়ে পালিত হয় পশ্চিমা খ্রিস্টানদের ‘অলহ্যালোটাইড’,(Allhallowtide) বা শুধু ‘হ্যালোটাইড’ (Hallowtide)।
আজ বহু দেশের মুসলিমরা এই উৎসব পালনের নামে শয়তানের পূজা করে চলছে।