আমাদের দেশে বহু চেতনাবাদীরা এই বাক্যটা ব্যবহার করে- পাপীকে নয় পাপকে ঘৃনা করুন। আসুন এই কথাটি কতটা যৌক্তিক না ভাঁওতাবাজি। ইসলামের শিক্ষা হল- কোন ব্যক্তির ভালোবাসা ও ঘৃণার কারন হল একমাত্র দ্বীন। যে দ্বীনকে ভালোবাসে আমরা তাকে ভালোবাসি, আর যারা ইসলামের সাথে শত্রুতা, ঘৃণা প্রদর্শন করে আমরা তাদের ঘৃনা করি তবে আমরা তাদের প্রথম কল্যান বা ইসলামের পথে আহ্বান করি বা দাওয়াত দিই।
পক্ষান্তরে কোন মুসলিম যদি ভুল, ক্রুটি করে আমরা তাকে সংশোধনের আহ্বান করি তার কর্মকে ঘৃনা করলেও, দ্বীন ইসলামের জন্য তাদের ভালোবাসি।
অপরদিকে তথাকথিত মানবতাবাদীরা শেখাচ্ছে – পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা কর। এর মাধ্যমে আসলে পাপের প্রসার ও পাপীদের সম্মানিত করতে চাইছে! ফলে নাস্তিক, মুরতাদরা ইসলাম নিয়ে উপহাস করছে। আর একদল চেতনাবাদীরা তাদের ঘৃণা করতে না বলে বরং প্রশ্রয় দিচ্ছে। তাই দেখবেন অনেক নেতা, বিখ্যাত ব্যক্তি তারকা পাবেন যারা কুফর, শিরক ও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রাখে, এমনকি সন্তান পর্যন্ত হয়। যদিও তারা তওবা করে দ্বীনের পথে ফিরে আসে না- তবুও তাদের সহানুভূতি, জনগনের সহযোগিতা ও জনপ্রিয়তা বিদ্যমান থাকে, সাধারন মানুষ তাদের জীবনযাপনে আর্কষণ সৃষ্টি করে।
অপরদিকে ধর্ষিত নিষ্পাপ বালিকাকে অনেকে সমালোচনা করে, তাদের পরিবার লজ্জায় সমাজে সাধারণ মানুষের মত চলতে পারে না। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
আবার কোন মুসলিম ব্যক্তি দ্বারা কোন ভুল হলে তারা এই ব্যক্তির প্রতি ঘৃনা, শত্রুতা এমনকি তার ভুলের জন্য পুরো মুসলিম সমাজ, ইসলামের নিয়মনীতিকে দায়ী করে শত্রুতা পোষন করে। আসলে যে ঘৃণা আমাদের কুফরের প্রতি থাকা উচিত ছিল- আজ তারা ইসলামের প্রতি সেই ঘৃণা দেখাচ্ছে।
আমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাহ হল, আল্লাহ বলেন-
অবশ্যই তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, “তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তা হতে আমরা সম্পৰ্কমুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শক্ৰতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহতে ঈমান আন। তবে ব্যতিক্রম তাঁর পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তিঃ আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব; আর তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমি কোন অধিকার রাখি না। ইবরাহীম ও তার অনুসারীগণ বলেছিল, হে আমাদের রব! আমরা আপনারই উপর নির্ভর করেছি, আপনারই অভিমুখী হয়েছি।
সুরা মুমতাহিনা
আসুন একটু ব্যাখা করি – কোন ব্যক্তি যদি এই বলে- সে শয়তান, ফেরাউন, নমরুদ, আবু জাহেলদের পাপকে ঘৃণা করেন কিন্তু তাদের ঘৃণা করেন না। তাদের কি ঈমান থাকবে!? অথচ তাদের পাপের কারনে আল্লাহ তাদের ঘৃণা করেন ও জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন!
তাহলে এই মতবাদ আল্লাহ ও তার দ্বীনের বিপরীত নয় কি?
আবার আসুন!! পশ্চিমা চেতনাবাদীদের যদি বলেন- আমরা হিটলার, মুসোলেনির পাপকে ঘৃণা করি, কিন্তু তাদের ঘৃণা করি না। তাহলে তারা নিশ্চিত আমাদের নাৎসি, ফ্যাসিবাদীসহ বহু উপাধি দিবে। অন্যভাবে যদি কেউ বলে পাকিস্তানি জালেমরা যারা নিরীহ নারী ধর্ষন, শিশুদের উপর অত্যাচার করেছে, তাদের পাপকে ঘৃণা করেন কিন্তু তাদের ঘৃণা করেন না। তাহলে ওরা দেশদ্রোহী, রাজাকার, মৌলবাদী, স্বাধীনতার শত্রু, পাকিস্তানের দালাল সহ কত উপাধি দিবে। এমনকি হামলা, মামলা হবে, বাচতে হলে দেশ ছাড়তে হবে।
আচ্ছা নিজের বিবেক দিয়ে ভাবুন- যে কোন আদর্শ সন্তান তাদের মায়ের ধর্ষনকারীকে ঘৃণা করাটা স্বাভাবিক নয় কি?
অথচ মুমিনের কাছে সবচেয়ে দামী হল আল্লাহ ও তার মনোনীত দ্বীন। তাহলে যারা দ্বীন ইসলামের উপহাস করে, আমাদের মা আয়েশার (রা:) উপর অপবাদ দেয় তাদের ঘৃণা করা উগ্রবাদ নাকি সুস্থ বিবেকের পরিচয়?