পর্দা স্বাধীনতা নাকি আনুগত্য?

ধরুন আপনি বিশাল কোম্পানির মালিক, জ্ঞানী ও সুষ্ঠ পরিচালক যেখানে হাজারও শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, তথাকথিত মডারেট সবাইকে চাকরি দেওয়া হলো। সবাই দায়িত্ব পালন করবে সে অনুযায়ী মাস শেষে বেতন বা পুরস্কার দেওয়া হবে, কিন্তু কিছু লোক বলল- আমি স্বাধীন আমার ইচ্ছেমত চলবো, ঠিকমত দায়িত্ব পালন করবে না আবার মাস শেষে ভালো বেতন চাইবে!!

একজন বিচক্ষণ মালিক তাদের কর্ম হতে বহিষ্কার করবে নতুবা পুরো কোম্পানিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, হাজার লোক ভুল পথে চলে যাবে। এখন যারা চাকরিচ্যুত হলো – তাদের জন্য কোম্পানির মালিককে দোষারোপ করবেন নাকি অবাধ্য কর্মচারীদের!? চাকরিচ্যুত কর্মচারীগণ যদি অভাব, কষ্টে কাটায় সেই দোষ অবশ্যই তাদের, নিশ্চয়ই কোম্পানির মালিক ন্যায়বিচার করেছেন। আর যারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাদের কর্ম অনুযায়ী বেতন দেন।

এখন আসুন- ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ আর মুসলিম হলো আল্লাহর নিয়মনীতির নিকট আত্মসমর্পণকারী। তার দায়িত্ব হলো আল্লাহর নিয়ম মেনে ইবাদত করা। বিনিময়ে তিনি জান্নাতে অফুরন্ত রিযিক দিবেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’

সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬

আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে। আল্লাহ তাআলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।’

সুরা যারিয়াত: আয়াত ৫৭-৫৮

এখন কেউ যদি আল্লাহর নিয়মনীতি না মেনে বরং বিদ্রোহ করে তা পর্দা হোক বা অন্য কোন বিধান, সে মুসলিম হতে বাদ পড়বে। আর তার এই কর্ম বা আমলের জন্য শাস্তি পেতে হবে সেটা কি স্বাভাবিক নয়!? নাকি সেজন্য ইসলামকে দায়ী করবেন।

কারণ যেমন আল-আলীমু (মহাজ্ঞানী) আর-রাযযাকু (রিযিকদাতা), আল-হাকীমু (মহাবিজ্ঞ), আশ-শাকূরু (কৃতজ্ঞতাপ্রিয়), আল-বাররু (কল্যাণদাতা) আল্লাহর গুণ তেমনি আল-আযীযু (মহাপরাক্রমশালী), আল-জাব্বারু (মহাশক্তিধর), আল-কাহ্‌হারু (শাস্তিদাতা), মালিকুল মুলকি (সার্বভৌমত্বের মালিক), যুলজালালি ওয়াল ইকরাম (গৌরব ও মহত্বের অধিকারী) এগুলোও আল্লাহর গুণের পরিচয়।

মহান আল্লাহ বলেন,

‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।’

সূরা আল আরাফ ০৭: আয়াত নং ১৮০

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

‘আল্লাহ বলে আহ্বান কর কিংবা রাহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই।’

সূরা বনী ইসরাঈল: আয়াত নং ১১০

শয়তান চায় মুসলিম সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক যাতে তাদের ধ্বংস করা যায়।

মহান আল্লাহ বলেন,

‘প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হবে না’

সূরা আন‘আমঃ আয়াত ১৫১

অশ্লীলতার চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে যেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। যা ইসলামে হারাম। এর কাছে যেতেও আল্লাহ নিষেধ করেছেন।

তিনি বলেন,

‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ’

সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত ৩২

আল্লাহ বলেন,

‘যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না’

সুরা নূরঃ আয়াত ১৯

এর বিপরীতে আল্লাহ পর্দা দিয়েছেন নারী ও পুরুষ উভয়েরই। পোষাক পরিধানের উদ্দেশ্য হবে দেহকে ভালভাবে আবৃত করা।

আল্লাহ বলেন,

‘হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের উপর পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি বেশভূষার উপকরণ সমূহ। তবে আল্লাহভীতির পোষাকই সর্বোত্তম’

সূরা আ‘রাফঃ আয়াত ২৬

আল্লাহ বলেন,

‘বিশ্বাসীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌন অঙ্গকে সাবধানে সংযত রাখে; এটিই তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। ওরা যা করে, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত।’

সুরা নূর

যারা আল্লাহর বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে – তারা শয়তানের মত কুফুরি করলো। শয়তান শুধু এজন্য কাফের নয় সে আমল করেনি বরং সে আমল না করার জন্য উল্টো নিজস্ব মতবাদ পেশ করে আপত্তি জানায়।

কুরআনে উল্লেখ রয়েছে,

‘…সে (শয়তান) বলল, আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তুমি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ আর তাকে সৃষ্টি করেছ কাদামাটি থেকে।’

সুরা: আরাফ, আয়াত: ১২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *